Monday, 28 July 2025

আনন্দময়ী মা

 আসা যাওয়ার পথে রোজ দেখি আনন্দময়ী মার বাড়ী।  রোজ ফুল দিয়ে সাজানো। বিকেল বেলায় বেশ কিছু ভদ্র  মার্জিত সুবেশ মহিলা, পুরুষ এর সামনে বসে প্রার্থনা করেন । আমি কোনদিন দাঁড়ায় নি। আজ দাঁড়িয়ে কটা ছবি তুললুম আপনাদের জন্যই। ফেসবুকে অনেক কৌতূহলী মানুষজন জানতে চাইবেন, কোথায়, কোথায়?  এটা সুকিয়া স্ট্রিট আর রামমোহন রায় রোডের মোড়ে, ঠিক ক্যাপিটাল নার্সিং হোমের কয়েকটা বাড়ী পরেই। আনন্দময়ী মা সম্মন্ধে আমি কিছুই জানি না। শুনেছি অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্না ছিলেন।  তবে অলৌকিক আবার কিছু হয় নাকি? আমার মোটেই বিশ্বাস নেই। তবে ইন্দিরা গান্ধী তাকে খুব মানতেন এটা জানি। আনন্দময়ী মাকে আমি একেবারে কাছ থেকে দেখেছি। ১৯৭৫ বোধহয়।  আমি আর কুন্তলা পথিক স্পেশালের কনডাক্টেড ট্যুরে উত্তর ভারত গিয়েছিলুম।  হিল্লি দিল্লি, আগ্রা মথুরা,বৃন্দাবন এইসব জায়গা আর কি। তখন কিন্তু ট্রাভেল কোম্পানিগুলো সব এক একটা কামরা বুক করে যেত।  ৫০/৬০ জন লোক এক কামরায় ১৪/১৫ দিন ভারী জমজমাট ব্যাপার ছিল। সেই ট্রেনের কামরা বিভিন্ন এক্সপ্রেসের সাথে জুড়ে চলত এখানে সেখানে। আর যেখানে যাওয়ার ছিল, সেখানে সেই কামরা রেলের সাইডিংএ  রাখা থাকত, খাওয়া দাওয়া প্ল্যাটফর্মে পাত পেড়ে, আমার তো ভারী মনপসন্দ ছিল। বেনারসে একদিন এঁচোড়ের ডালনা খেয়েছিলুম মনে আছে। বিরাট বড় মাংসের টুকরোর মত এক পিসই এঁচোড়, সে স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়।  সেইরকমটি আর কোনদিনই খায়নি। কমদিন তো নয় প্রায় ৪৪ বছর আগে আর খেয়েছিলুম পনীর পকোরা ধনেপাতার চাটনি দিয়ে। সারনাথে এক তপ্ত, রৌদ্রদগ্ধ দুপুরে।  সে স্বাদও আজো ভুলিনি। এইরকম হয় না, টুকরো টুকরো কথা মনে থেকে যায় দীর্ঘ দিন ধরে। বৃন্দাবনে সেই ট্যুরেই গিয়েছিলুম দোলের সময়। পথিক স্পেশাল সেখানে আমাদের রেখেছিল এক দারুণ ধর্মশালায়, দোলের দিন সেখানেই দেখলুম কৃষ্ণলীলা।  সে যে কি সুন্দর কৃষ্ণ আর রাধা আর সুন্দর তাদের ফুলের পাপড়ি উড়িয়ে দোল খেলা, আমি মুগ্ধ হয়ে দেখেছিলুম আর সেই রাধা আজও আমার মন আলো করেই রয়ে গেছে বেশ পাকাপাকি ভাবে। আমি যতই ধম্ম ব্যাপারে ভুরু কুচকায় না কেন, এইসব উৎসব আমার বেশ লাগে। ধম্মের সব সৌন্দর্যই তার উৎসবে যা সবার মন ছুঁয়ে যায়। 

তা হলে আনন্দময়ী মা থেকে শুরু করে  এখন পর্যন্ত হল এঁচোড়ের ডালনা আর পনীর পকোড়া নয় পকৌড়া। আরও অনেক কিছুই আছে নবাবী লখনৌর ভুলভুলাইয়া,ইমামবাড়া, কাবাব, করোলবাগের মাছ ভাজা অনেক কিছুই। তবে এতসবে যাব না, শেষ করি আনন্দময়ী মা দিয়েই। আনন্দময়ী মার সাথে দেখা এই বৃন্দাবনেই। এক বিকেলে গিয়েছিলুম তার বৃন্দাবনের আস্রমে। পুরোন দিনের বাড়ী ওই যেমন সব বাড়ী দেখা যায় পুরনো বাংলা সিনেমায়। গেট পেরিয়ে, সামনে একটা ছোট্ট বাগান, লাল সিঁড়ি দিয়ে উঠে একটা বড় চাতাল, তার উপরে একটা চৌকি, সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা। সামনে শতরঞ্জিতে আমরা বোধহয় জনা বিশেক লোক বসে রইলাম তার অপেক্ষায়। একটু পরেই এলেন এক ক্ষীনতনু পাতলা গড়নের মহিলা। এসে ধম্মকম্ম নিয়ে অল্প কিছু বললেন আর বললেন ব্রম্মের কথা। তাকে যে পাত্রেই রাখ তিনি সেইরূপই নেবেন ইত্যাদি ইত্যাদি।  সব দেখে শুনে কি আর বলব? I was not at all impressed. ওর থেকে ভাল হত যদি তখন বৃন্দাবনী সারং এর থেকেও সুমধুর, স্বাদিষ্ঠ  বেনারসী রাবড়ি আর জিলাইবি তে মনোনিবেশ করতুম। রেগে গেলেন তো? কি করব?  আমার সবই যে এই ইহকালই, পরকাল নিয়ে ভয় নেই, ভাবনাও নেই।