Sunday, 15 September 2019

থোড় ছেঁচকি

ইদানিং কেউ কি খেয়েছেন? থোড় ছেঁচকি? অনেক আগে খেয়েছিলাম , মায়ের হাতের রান্না। কলাবতীর অন্তরের শাঁস, ভালবাসার ইষৎ উত্তাপে, কালো জিরে আর কাঁচা লঙ্কার মৃদুগন্ধ জড়ানো থোঁড় ছেঁচকি আজ খেলাম অনেক বছর পরে। আজ সারাদিনই ছিলাম নিতাইয়ের কাঁকুলিয়ার বাড়ীতে। উপলক্ষ্য একটা ছিলই। নিতাই যাচ্ছে ওর মেয়ের বাড়ী, জার্মানিতে। তাই দীর্ঘ প্রবাসের আগে বন্ধুদের সাথে একটু উষ্ণ, মদিরাময় সঙ্গ করার জন্যেই ওর আজকের এই আয়োজন। অবশ্য, ছেঁচকিতেই শেষ নয়, এর পরেই ছিল শুক্তো। কেন যে একে সুখ-তো বলে না, এটা ভেবেই আমার অবাক লাগে। শুক্তোর প্রতি গ্রাসেই অনন্ত সুখ যদি বলি, খুব কি অন্যায় হবে? আমার খুব পছন্দের পদ এটি। শুক্তোই সই। আর কিছু না পেলেও সয়ে যাবে। এতেই অবশ্য শেষ নয়। তবে চিকেন নৈব নৈব চ। চিকেনের বাড়াবাড়িতে সবার প্রাণ ওষ্ঠাগত।  তাই নিতাইকে বলেছিলাম, মাছের ব্যবস্থা করতে। তাই শেষে মাছই এল। পাকা রুইয়ের রসময় পরিবেশনা। কোহিনূর বাসমতীর উড়তি হুয়া জওয়ানগির সঙ্গে রুইয়ের রসালাপ ভারী জমেছিল। শেষে একটু মিষ্টি মিষ্টি চাটনি হলে জমে উঠত ভারী। কিন্তু সেটি ছিল না, তার বদলে ছিল নকুড়ের জলভরা তালশাঁস। তার স্বাদ যদি আপনার অজানা তবে আপনার জন্যে রইল শুধুই দীর্ঘ শ্বাসই। এবার যদি হেঁদোর মোড়ে কখনও আসেন, অবশ্যই একবার নকুড়ের দোকান ঘুরে যাবেন। এ অবশ্য সবই শেষের কথা। এর মাঝে আগে কিছুতো আছেই।

আমাদের কথার মাঝেই নিতাইয়ের মেয়ের ফোন এল জার্মানি থেকে। বোঝা গেল ভারী বাপসোহাগী মেয়ে। খুব ভাল লাগল বাবা মেয়ের কথোপকথন । আমার অবশ্য দুটোই ছেলে। ছেলেরা একটু কাঠখোট্টাই হয়। মেয়েদের মত নয়। অবশ্য ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়। তবে মেয়ে নিয়ে আমার মধ্যে ভারী এক অভাববোধ  আছে। কবে সেই না আসার মেয়ের নাম ভেবে রেখেছিলাম হৈমন্তী।  সেও এলো না, আর আমার দুঃখেরও  হলো না শেষ। সে সব যাই হোক, আজকের কথাতেই আসি। না হওয়া কথা ভেবেই  বা কি লাভ?

এত সব কথার আগে যে গৌরচন্দ্রিকা কিছু আছেই সে তো আপনাদের জানাই আছে। নতুন কিছু নয়। ওই যে যাকে বলে Neighbour's envy, blender's pride. তাতেই বেশীটা সময় চলে গেল। ছিল আমাদের steady man  শেখর। বেশ কাটল সারাটা দিন,  রশেবশে, আমোদে আহ্লাদে।  রশে বশে থাকতে তো  ঠাকুরেই বলে গেছেন। আমি আর নতুন করে কি বলব? বাকীটা বোঝার দায় আপনাদেরই।




Tuesday, 3 September 2019

অথ বলরাম কথা

সুজিত পকেটে আগেই দুটো টিকিট গুজে দিয়েছিল। নাটকের টিকিট।  নোটো গ্রুপের৷ আমাদের বলরাম তার এক অনুনাটিকার নায়কের বেশে। যেতেই হবে৷ সপ্তাহের প্রথম দিন মানে আখড়ায় যাওয়া মিস, মনটা খচখচ করেছিল। তাই, সকালেই যোগের পাঠ শেষ করে দিলুম। আজ বড়ভাইয়ের নাটক মিস নয় কোন ভাবেই।

আমাদের বড়ভাইকে এতদিনে নিশ্চিত সবাই চিনে গেছেন। আদ্যন্ত জাহাজী। বড় বড় জাহাজ চালিয়ে সাত সমুদ্র তেরনদী চক্কর দিয়ে বেড়ান তার বা হাতের খেল। এই সেদিনও সারা পৃথিবী চক্কর কেটে এল। স্পিরিট একঘর, এ আপনাকে মানতেই হবে। এই সত্তরে কত বাহাত্তুরে বিছানায় পাশ ফিরতে পারেনা , সেখানে সাতসমুদ্দওর চক্কর কেটে বেড়ানো, একি চাড্ডিখানি কথা। এ আপনাকে মানতেই হবে।
ইদানীং উনি আবার আঁকাজোকা, লেখালেখিতে ঢুকে পরেছেন। তার মানে  যারা ওর পরিচিত বৃত্তের,যারা দুচার লাইন লিখে আর একে, লাইক আর কমেন্ট গুনে গুনে রাখছিলুম তাদের বেলাশেষ। বড়ভাই ঢুকে পরেছে আঁকা আর লেখার জগতে। আমাদের এখন ভলিনটারী রিটায়ামেন্ট নিয়ে সস্মমানে কেটে পরাই শ্রেয়। বলরামের আঁকা দেখেছেন। তিন স্ট্রোকে মাউইন্টেন বিউটিতে পৌঁছে গেল।  হায় এইরকম তিন স্ট্রোকে যদি আমার প্রিয় মোহনবাগান গোল করতে পারত। তা সে যাক মাঠের কথা ময়দানেই থাকুক।সে আঁকা দেখেছেন? আমি তো দেখে থ। এ যে ইউরোপিয়ান মাষ্টারদের পরীক্ষায় ফেলে দেবে। আমার তো মনে হয় মাঝ সমুদ্রে নেমে পড়ে, অসীম শক্তি আর তারুণ্য নিয়ে ফিরে এসেছে সেই গোলিয়াথের মত। ভেঙে চুরে কিছু একটা করে বসবেই। তাতে আমার মত মিনমিনে কিছু বুড়োকে লেজ গুটিয়ে দূরে বসে ম্যাও ম্যাও করা ছাড়া আর কোন গতান্তর থাকবে না।
সে সব যাইহোক,  গেলুম বলরাম কে দেখতে নবকলেবরে। বলরামের নতুন নাটক। শ্রুতি নয় পাকাপাকি স্টেজ পারফরম্যান্স। বনফুলের, 'কবিতা বিভ্রাট'  আহা কি দেখিলাম জন্মে জন্মান্তরে ভুলিবনা। অসাধারণ স্টেজ পারফরম্যান্স। কি শরীরী ভাষা আর কি ডায়ালোগ থ্রো৷ ইরশাদ ঈরশাদ। মান গ্যায়ে ওস্তাদ।  তুসি গ্রেট হো। তোফা কবুল কর। আমাদের ম্যাগ প্লাসের তরফ থেকে। আজ তো চলেই যাচ্ছ দীর্ঘ প্রবাসে৷ একটা ছোট্ট রিকোয়েস্ট৷ এবার হাইড পার্কে  দাঁড়িয়ে তোমার বক্তিমে শুনতে চাই। এ তুমি ঠিক পারবে। দিন ঠিক করে আমাদের একটু খপর পৌঁছে দিও শুধু, আমারা পঞ্চপান্ডব ঠিক পৌঁছে যাব৷ হাততালির ঝড় তুলে দেব সারা হাইড পার্ক জুড়ে, এ আমাদের ওয়াদা আমাদের বড়ভাইয়ের কাছে।

All the best, Rekha & Balaram.  ছুটি কাটিয়ে যথাসময়ে ফিরে এস। ঠিক শীত পড়ার আগে। তুমি না এলে আমরা শীতের ওম পাব কোথায়?  Au revoir.

Monday, 2 September 2019

পঞ্চপাণ্ডব ও বন্দী শাজাহান

পঞ্চপাণ্ডবের সঙ্গে কি বন্দী শাজাহানকে মেলান যায়? সবাই নিশ্চয় সবেগে ঘাড় নাড়বেন,  কভি নেহি, কভি নেহি। কিন্তু আমাদের  ভাই বিরাদরীর এই ছোট্ট গ্রুপে সেটাই যে ঘটেছে। আমাদের প্রানভোমরা গুরুসম শেখর, যার দর্শন আর প্রদর্শিত পথেই আমাদের যাত্রা শুরু, সেই শেখরই আজ বন্দী দিল্লির কারাগারে। তৃষ্ণায় কাতর, কিন্তু আমরা অসহায়।  কিছুই করতে পারিনা ওর জন্যে। ভারী কড়া পাহারায় আছে সম্রাট । তবু্ও আমরা ভুলতে পারি কই। তাই সব যজ্ঞের আগেই সেই শিক্ষাগুরু শেখরকে ভিডিও কলে আহবান করেই ধুমধাম করে আমাদের যজ্ঞের শুরু হয়।

আজকের আসর ছিল বলরামের দীর্ঘ প্রবাসযাত্রার প্রাক্কালে এক ভারী ইমোশনাল সন্ধ্যা। পাক্কা তিনঘন্টার ফুল্টুস মস্তী। রোয়িং ক্লাবের আশকারায় যতরকম ফিচলেমির নির্লজ্জ আসর। আজ যে আমরা সবাই নিজের মনের কপাট খুলে বসেছিলুম শুধু তাই নয়। প্রকৃতিদেবীও তার দুয়ার খুলে অঝোর ধারায় ঝরে আমাদের আসরকে প্রলম্বিত করতে সাহায়্য করেছেন।কি খেলাম, কি খেলাম না উহ্য রাখলেও কারও অজানা নয়। আসল কথা আমরা বন্ধুত্বের জারক রসে সবাই ছিলাম আজ সংপৃক্ত । তাই স্কচ এল না টাকিলা তাতে খুব একটা হেরফের হয় নি। কি বললাম, কি বললাম না সেটা না শোনায় ভাল। ভারী নির্লজ্জ সব ব্যাপার,  নেহাৎই ইন বিটুইন ব্যাপার স্যাপার। আপনারা নাই শুনলেন।  তবে জাসট জমে গেল তিন ঘন্টার আসর। এর মাঝে ছিল প্রখ্যাত লেখক রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক আড্ডা। তার লেখা নিয়ে। এর মধ্যেই পল্টাও ঢুকে পড়ল বেশ। যে নাকি বাঙালী মেয়ের সাথে প্রেম করে বিয়ে করেও এক লাইন বাংলা বোঝে না৷ সেই দেখি রঞ্জনবাবুকে বগলদাবা করে নিল। একেই বলেই পাঞ্জাবীয়ত। সাহিত্যে যখন হয় না তখন রাস্তা মেলে দারুদর্শনেই। রঞ্জন বাবুও তখন সাহিত্য ছেড়ে দারুতেই স্থির হন।
আজকের ছবিগুলোই বলবে কিরকম হল  আজকের আড্ডা। এককথায় লা জবাব। অনেকদিন এইরকম প্রানখোলা আড্ডা হয়নি।  আমি সবসময়ই বলি সব সম্পর্কের উপরেই বন্ধুত্ব।। তার উপরে আর কিছু কি আছে? ঈশ্বর?  থাকলেও তার সাথে আমাদের আলাপ পরিচয় হয়নি মোটেই। হলে তাকেও আমাদের গ্রুপের মেম্বার ঠিক করে নেব।