Wednesday, 31 July 2024

দিল্লি দূর নেহি

 এবার দিল্লি এসে অব্দি বেশ টোটো করে ঘোরা হচ্ছে। দিল্লি বিরাট শহর।  তার এস্পার ওস্পার করে যাচ্ছি এবেলা ওবেলা, যদি ভেবে থাকেন টোটো করে, তাহলে আপনার বোঝার গোঁড়াতেই গলদ। টোটোর সাধ্য নেইকো এতো লম্বা দৌড় দেওয়ার। অটোও এতটা পারবে না। সে আপনি যদি ওলা/উবের নেন, তাহলে অন্য কথা। কিন্তু মধ্যবিত্তের পকেটের এতো ক্ষ্যামতা নেই, যে দুবেলা ওলা/উবেরের খরচ সামাল দিতে পারবে। তাও আমি ঘুরছি, ঘুরেই চলেছি। ক্যামনে কও দেখি? আছে আছে সে উপায়ও আছে। এবার দিল্লিতে এসে উঠেছি করোলবাগে।  ওই যে দিদির কত রকমের পকল্প আছে না, দুয়ারে সরকার, দুয়ারে হ্যান, দুয়ারে ত্যান। তেমনটি ঠিক নয়। এটা দুয়ার ছাড়ার প্রকল্প। করোলবাগ মেট্রো এবার আমার দিল্লির আস্তানার ঠিক দোর গোড়ায়। তাই অটো, টোটো, উবের সবের সবাইকেই দিয়েছি তালাক। পুরো মেট্রোর পিঠে চেপে এপার ওপার দিল্লি হিল্লি কিছুই বাদ দিই নিকো। আর দিল্লি রাজধানী বলে কথা তার মেট্রোও রাজকীয়।  যেমন বিস্তিত এর নেটওয়ার্ক।  তেমনি ঘড়ি ধরে মেট্রো আসছেই মিনিটে মিনিটে। তাই নো তাড়াহুড়ো।  ট্রেন যদি মিসও করেন, জানবেন তার পরের মিনিটেই ট্রেন এসে যাবে। ৩৯৩ কিলোমিটারের নেটওয়ার্ক, ১২ টা লাইন আর ২৮৮ টা মেট্রো স্টেশন।  ভাবা যায়? আরো বেড়েই চলেছে। দিল্লির মেট্রোর এপটাও অসাধারণ।  শুধু কোথা থেকে কোথায় যাবেন, লিখে দিন।  নিমেষে আপনাকে রুট প্লান দিয়ে দেবে। যা দেখে আমার মতো আহাম্মকও পৌঁছে যাবে তার গন্তব্যে। সে যা হোক অনেক গুণকীর্তন তো হলো। এবার অন্য প্রসঙ্গেই আসি।


যাতায়াত যত ডানা মেলেই করি। খাওয়া দাওয়া নিয়ে বেশ কষ্ট। একে তো পাঞ্জাবী ডেন। তার খাওয়া দাওয়াও তেমনই বল্লে বল্লে টাইপ। ইতনা ঘিউ, ইতনা মালাই ওয়ালা খানা যে আমার মতো পেটরোগা বাঙালীর কাছে সক্রেটিসের হেমলক পানের তুল্য। এক আধবেলার বেশী সহ্য করা মুস্কিল। আর আছে সাউথ ইন্ডিয়ান খাবার।  ওদের সবেতেই ইমলি গোলা।  হায়দ্রাবাদে একবার বিরিয়ানি খেয়েছিলাম। তাতেও দেখি ছোট একটা বাটি ভর্তি তেঁতুল গোলা জল দিয়েছে। কি নিদারুণ পরিহাস। 


সে যাই হোক দিনে পাঞ্জাবি আর রাতে দক্ষিণীই চলছে। রাতে দক্ষিণী খাবার একটা এডভান্টেজ অবশ্য পাচ্ছি। সকালে উঠে পুরো ক্লেদমুক্ত শরীর। পুরো ফুরফুরে মন আর হাল্কাফুল্কা শরীর আর মন নিয়ে হিল্লি দিল্লি যেখানে ইচ্ছে উড়ে বেড়ান।


আর বিকেলে সামোসা আর জিলিপি আমার অলটাইম ফেভারিট তো আছেই। আমার ডায়েটিশিয়ান আমাকে পাঁচ পাতার ডুস এন্ড ডোন্টস দিয়েছে। তাতে সিঙ্গারা আর জিলিপি নৈব নৈব চ।  ডায়েটিশিয়ানকে মারো গোলী। পৃথিবীতে কে বা কবে অমর হতে পেরেছে? আর যারা জিলিপির স্বাদ নিতে অপারগ। তারা যে জীবন্মৃত।  তাদের কথা ভেবে আমার বড্ড মায়া হয়।

Thursday, 11 July 2024

ইলিশ ও সুন্দরী

 



ইলিশ ও সুন্দরী

তখন ১৯৭৯-৮০।  লেকটাউনে থাকতাম,  আমার অফিস তখন আমহার্স্ট স্ট্রীটে। স্কুটার চালিয়ে  ব্যাংকে আসতাম, গায়ে লাল সার্ট, চোখে সানগ্লাস  মানিকতলা হয়ে আমহার্স্ট স্ট্রীটে ধরে সিটি কলেজ পেরিয়ে রোজ ছিল আমার আসা যাওয়া।  ফেরার পথে মানিকতলা বাজার পরত। মানিকতলা বাজারের মাছ মানে কলকাতার সেরা মাছ। চওড়া চওড়া ইলিশ  কিনে নিয়ে যেতাম প্রায়ই। তখন ইলিশের এত আকাল ছিল না। বর্ষাকালে খিচুড়ি আর ইলিশ মাছ ভাজা তখন ঘন ঘন রাতের মেনুতে থাকত। তো আরও অনেক কিছুর মতই সে সব দিনও আজ শুধুই অতীত, বিষন্ন অতীত।

তবে এত ভুমিকা নেহাৎ ইলিশের জন্য নয়। সে ছিল একজন। আজ হঠাৎই মনের পর্দায় ভেসে উঠল তারই জলছবি, মনের কোন গভীর গহন কোণে সে এতদিন অশোকবনে সীতার মতই বন্দী হয়ে ছিল।  সেইসময়,আমার চেহারার জৌলুশও ছিল খুব৷ মধুমেহ আসতে তখন অনেক বাকী।  সিটি কলেজের অনেক মেয়েই তখন দাঁড়িয়ে থাকত যেন আমারই প্রতীক্ষায়। এক সুন্দরীর সাথে নিত্য হত চোখাচোখি। স্কুটারের গতি হয়তো কমে আসত কিন্তু থামতে পারিনি কোনদিনও। আজ ৪০ বছর বাদে সেইরকমই এই মেয়ের সাথে দেখা। তাই তার কথা আজ চকিতে মনে পরল। এই মেয়ে, হয়তবা সেই মেয়েরই মেয়ে,যে মেয়ে এতদিন লুকিয়ে ছিল আমারই মনের গভীরে। আজ যেন সে মুক্তি পেল তার বন্দীদশা থেকে। আর আমাকেও মুক্ত করে দিয়ে গেল।