ইলিশ ও সুন্দরী
তখন ১৯৭৯-৮০। লেকটাউনে থাকতাম, আমার অফিস তখন আমহার্স্ট স্ট্রীটে। স্কুটার চালিয়ে ব্যাংকে আসতাম, গায়ে লাল সার্ট, চোখে সানগ্লাস মানিকতলা হয়ে আমহার্স্ট স্ট্রীটে ধরে সিটি কলেজ পেরিয়ে রোজ ছিল আমার আসা যাওয়া। ফেরার পথে মানিকতলা বাজার পরত। মানিকতলা বাজারের মাছ মানে কলকাতার সেরা মাছ। চওড়া চওড়া ইলিশ কিনে নিয়ে যেতাম প্রায়ই। তখন ইলিশের এত আকাল ছিল না। বর্ষাকালে খিচুড়ি আর ইলিশ মাছ ভাজা তখন ঘন ঘন রাতের মেনুতে থাকত। তো আরও অনেক কিছুর মতই সে সব দিনও আজ শুধুই অতীত, বিষন্ন অতীত।
তবে এত ভুমিকা নেহাৎ ইলিশের জন্য নয়। সে ছিল একজন। আজ হঠাৎই মনের পর্দায় ভেসে উঠল তারই জলছবি, মনের কোন গভীর গহন কোণে সে এতদিন অশোকবনে সীতার মতই বন্দী হয়ে ছিল। সেইসময়,আমার চেহারার জৌলুশও ছিল খুব৷ মধুমেহ আসতে তখন অনেক বাকী। সিটি কলেজের অনেক মেয়েই তখন দাঁড়িয়ে থাকত যেন আমারই প্রতীক্ষায়। এক সুন্দরীর সাথে নিত্য হত চোখাচোখি। স্কুটারের গতি হয়তো কমে আসত কিন্তু থামতে পারিনি কোনদিনও। আজ ৪০ বছর বাদে সেইরকমই এই মেয়ের সাথে দেখা। তাই তার কথা আজ চকিতে মনে পরল। এই মেয়ে, হয়তবা সেই মেয়েরই মেয়ে,যে মেয়ে এতদিন লুকিয়ে ছিল আমারই মনের গভীরে। আজ যেন সে মুক্তি পেল তার বন্দীদশা থেকে। আর আমাকেও মুক্ত করে দিয়ে গেল।


No comments:
Post a Comment