আজ সেই অর্থে, সকাল থেকে আমার করার কিছুই ছিলনা। রোজকার আসন, প্রাণায়াম আর ধ্যানে কেটে যায় ঘন্টা দুয়েক। তারপর, আছে তো কিছু নিশ্চয়। না হলে বিরস দিন বিরল কাজ কি করে কাটবে। ছোট্ট একটা কাজ থাকে, সেটাতেও মন সংযোগ আর মাথা খাটানোর বেশ একটা ব্যাপার থাকে। সেটাতে আপাতত বিরতি চলছে। অবশ্য অল্প কয়েকদিনের জন্যেই।সেটা এসে গেলে আর বোর হবার মতো কোন ব্যাপার থাকবে না। নাতি পুতিরা স্কুলে। ওদের এখন ইউনিট টেস্ট চলছে, তাই নিয়ে ওরাও মহাব্যস্ত। কুন্তলাও গেছে মেদিনিপুরে। উত্যক্ত করার কেউ নেই। যারা একটু ভক্ত টাইপের বা ভয় পান, ভগবান, ভূতে বা বউয়ে, তারা অবশ্যই ওফেন্স নিতে পারেন, আমার উত্যক্ত কথার প্রয়োগে। আচ্ছা বলুন তো, জীবনের এই এতটা পথ হেঁটে এসে বউকে যদি উৎপাত না ভাবি, তাহলে কি ভাবব? আমার পাড়ার এক বন্ধু, নামটা বলেই ফেলি গৌতম,বউয়ের ভয়ে জ্বর বাঁধিয়ে বসল। গৌতমকে তিন মাসের রিলিফ দিয়ে, দিল্লিতে কাটিয়ে এলেন তিনি, তিন তিনটি মাস। এখন তিনি এসে গেছেন। আর গৌতমের এখন ইরেগুলার হার্টবিট আর হাই ফিভার চলছে। আমি অবশ্য সে গোত্রের নয়। জানেন তো আমি মূর্শিদাবাদী, নবাবের দেশের লোক। ' শির নেহারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির'। যাকগে ওসব কথা, তার থেকে বরং গল্প করি বা কিছু ইন্টেলেকচুয়াল আলোচনাই চলুক না।
আমরা তখন লালবাগে। ক্লাস নাইন? মনে একটা প্রেম প্রেম ভাব জাগছে।যাকে দেখি তারই প্রেমে পড়ি। এরকম একটা টালমাটাল চলছে। সে সময়ই ক্যাচ কট কট। প্রেম নয়। বিপ্লব। পড়লাম তুষারের খপ্পরে। নাম লেখালাম ছাত্র ফেডারেশনে সেই স্কুল বেলাতেই। তুষারের বাড়ীতেই শনিবার মিটিং হতো। জনগান্ত্রিক বিপ্লব, পেটী বুর্জোয়া, দ্বন্ধমূলক বস্তুবাদ ইত্যাদি। এছাড়াও আমাদের একটা জমজমাট আড্ডা বসতো, হাজারদুয়ারীর মাঠে। সেটা অবশ্যই বেশ কসমোপলিটান আসর। তাতে যেমন থাকতো, জামা নবাব, পাপ্পু নবাব, অপু, পন্ডিত, মীজানুর, রবি, সোনা, নিশিথ এরা। সেসব আলোচনা মূলতো সাহিত্যকেন্দ্রিক। আমাদের সাহিত্যমুখী করে তোলার পেছনে লালবাগের 'বান্ধব সমিতি'র প্রচুর অবদান ছিলো। অফুরন্ত বইয়ের জোগান দিয়ে গেছে এই লাইব্রেরি। সে সময়ের হট ক্রেজ ছিলেন, সৈয়দ মুজতবা আলি।আমাদের বিকেলের আসরে সে সব ঘুরে ঘুরেই আসতো।
এসব তো সব আগের জন্মের কথা।খুব প্রিয়, খুব কাছের, কিন্তু তাদের আজ না যায় ধরা না যায় ছোঁয়া। সব স্মৃতির জগতেই থেকে গেছে, ধরা ছোঁওয়ার বাইরে। আর জানেনই তো আমি একটু স্মৃতিকাতর মানুষ। পুরনো দিন আমাকে হন্ট করে খুব। পুরনো দিন অনেকটাই পরাবাস্তবের মতোই। ম্যাজিক রিয়েলিজম যারে কয় পরিষ্কার ভাষায়।
আজকেই সেই ম্যাজিক রিয়েলিজমের গপ্প বসানোর তাল খুঁজছিলাম এতক্ষণ। বাজে কথায়, ফেসবুকের বেশ কয়েকটা পাতা নিশ্চয় নষ্ট করে ফেলেছি। এখন আর কি? শর্টকার্টে সারি বরং। আমার সংগ্রহে প্রচুর বই আছে। বইকেনা আমার একটা বদভ্যাসও বলতে পারেন।তবে সব বইও যে পড়ে ফেলেছি, এমন দাবী করব না মোটেই। তবে বেশকিছুই পড়েছি।
আমার যা মানসিক গঠন, তাতে ওই ম্যাজিক রিয়েলিজম ব্যাপারটা বেশ যায় বাস্তবের জমির উপর দাঁড়িয়ে কল্পজগত তৈরী করা। ব্যাপারটা এককথায় এমনই। আর সেটাই আমার প্যাসটাইম। এবার বলুন তো, ম্যাজিক রিয়েলিজমের সেরা লেখক কে, অবশ্যই গাব্রিয়েল গ্রাসিয়া মার্কুয়েজ। যার ডাক নাম ছিল গাব্বো।কলম্বিয়ান লেখক, সাংবাদিক, রাজনীতিক আরো কতো কি। জীবনের বেশীরভাগটাই কাটিয়েছেন মেক্সিকো আর ইউরোপের নানা দেশে। নোবেল পুরস্কারও পেয়েছেন। তার অসামান্য সাহিত্যকীর্তির জন্যে। তার লেখা কতগুলো বউ, ' হান্ড্রেড ইয়ারস অফ সলিটিউড', 'লাভ এট দি টাইম অফ কলেরা', ল্যবিরিন্থ, নো ওয়ান রাইটস টু কলোনেল' 'স্ক্যান্ডাল অফ দি সেঞ্চুরী' ইত্যাদি ইত্যাদি। ওনার বহু বইই আমার সংগ্রহে আছে। আজ কোন কাজ নেই, তাই ডিম্ভাত ( মুরগীর নয় হাঁসের) খেয়ে বসে পড়েছি, কলোনেল কে নিয়ে।
ছোট্ট বই। চরিত্রও কয়েকজন। কলোনেল, তার অসুস্থা স্ত্রী, মৃত পুত্র, শহরের এক খ্যাতনামা গায়কের ফিউনেরাল, একটা লড়াইয়ের মোরগ,এক দয়ালু ডাক্তার যিনি কলোনেল আর তার স্ত্রীকে বিনে পয়সায় চিকিৎসা করেন। একটা ষ্টীমার আর পোস্টম্যান। প্রতি শুক্রবার জাহাজ আসে আর জাহাজে আসে ডাক।কলোনেল' জাহাজঘাটায় দাঁড়িয়ে থাকেন মেলের প্রতীক্ষায়, যে ডাকে তার প্রতিশ্রুত পেনশনের চেক আসবে।দীর্ঘ ১৫ বছর প্রতীক্ষার পরেও কলোনেলের সে চিঠি আসে না। পোস্টম্যান ঘোষণা করেন No one writes to Colonel.
সংক্ষেপে এটাই সারাংশ। এক অসামান্য না ছোটগল্প না উপন্যাস। সুযোগ পেলে বইটা পড়ে নেবেন একবার।No

No comments:
Post a Comment