Thursday, 2 October 2025

সক্রেটিস ও ক্রিটো

 ইচ্ছে ভ্রমণ


রবি ঠাকুর কবেই লিখে গেছেন:



আমি যদি জন্ম নিতেম কালিদাসের কালে,

দৈবে হতেম দশম রত্ন, নবরত্নের কালে,

একটি শ্লোকে স্তুতি গেয়ে, রাজার কাছে নিতেম চেয়ে,

উজ্জয়িনীর বিজন প্রান্তে কানন ঘেরা বাড়ী,

রেবার তটে চাঁপার তলে, সভা বসত সন্ধ্যা হলে,

খেলার ছলে আপন মনে, দিতাম কন্ঠ ছাড়ি।

জীবনতরী বয়ে যেত, মন্দাক্রান্তা তালে, 

আমি যদি জন্ম নিতেম কালিদাসের কালে।


উজ্জয়িনী আমারও খুব প্রিয় জায়গা। শিপ্রা নদীতীরে বসে,  শকুন্তলা না হোক, লিখতে তো পারতাম,

' যাও পাখী বলো তারে, সে যেন ডাকে না মোরে।'


তবে আজকে আমার পছন্দের তালিকায় উজ্জয়িনী নয়,  প্রাচীন গ্রীস। সময়ের দুরত্বে, পথের দুরত্বে সে যে উজ্জয়িনীর থেকেও যোজন যোজন দূর।


আজকে আমার গন্তব্য প্রাচীন গ্রীসের পাহাড় ঘেরা শহর এথেন্স। রোমান সভ্যতায় এথেন্স আর স্পার্টার গুরুত্ব অপরিসীম।  কিন্তু আজ আমি বেছে নেব এথেন্সকেই। কারণ এখানেই আমার শিক্ষক, সে সময়ের শ্রেষ্ট শিক্ষক, সক্রেটিসের বাস। আমি তারই শিষ্য। কে আমি? আমি ক্রিটো।  সক্রেটিসের ঘনিষ্ঠ বন্ধুই বলতে পার। আর সেই সময়কাল কিন্তু আজ নয়, খ্রীষ্টপূর্ব পুর্ব প্রায় পাঁচশ বছর আগে। ধরাই যায় প্রায় তিনহাজার বছর আগে। সেদিনের সেই ক্রিটো, এই আজকের আমি।  কত তফাৎ না?  সেদিনের সেই ক্রিটো, সক্রেটিসের ছায়াসঙ্গী, এই আজকের আমি। যার একমাত্র কাজ, ফেসবুকে শুধু চুটকী লেখা। কি অধ:পতন। 

কিন্তু ক্রিটো কে ছিলেন?  সেইযুগে ক্রিটো ছিলেন, সক্রেটিসের এক ধনী বন্ধু যিনি তাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করতেন। সক্রেটিসের শিষ্য মহাজ্ঞানী প্লেটো একটা বই লিখেছিলেন আমারই নামে, সে বইয়ের নাম 'ক্রিটো'।  তাতে সক্রেটিসের সাথে ক্রিটোর সংলাপের বিবরণী আছে। ক্রিটো সক্রেটিসের জেলখানা থেকে মুক্তির ব্যবস্থা সক্রেটিসের জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত করে গেছেন, প্রহরীদের উৎকোচ দিয়ে তিনি, সক্রেটিসের মুক্তির ব্যবস্থা পাকা করে ফেলেছিলেন। কিন্তু সক্রেটিস সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন, তার কাছে শ্রেয় মনে হয়, হেমলক পান করা।

এবার বরং শোনা যাক খুবই সংক্ষেপে সেই মহান শিক্ষকের একদিনের জীবন কাহিনী। 


তাহলে শুনুন একদিনের কথা।  মানে আমি ক্রিটো,  দাঁড়িয়ে আছি, সক্রেটিসের বাড়ীর সামনে। তখনও ভোর হয়নি।আধো অন্ধকারে তখনও এথেন্স ঢাকা। সক্রেটিস বেড়িয়ে এলেন বাড়ী থেকে, খালি গায়ে, গায়ে শুধু একটা মোটা চাদর। আমায় দেখে হেসে বললেন, ক্রিটো তুমি এত ভোরে এসে গেছ? তোমার কি ভয় হয়, আমি পালিয়ে যাব? "

আমি হেসে বললাম ' না গুরুদেব, আমি এসেছি শুধু প্রাত:ভ্রমণের জন্যে" 

আস্তে আস্তে সুর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ল। আমরা এগিয়ে চললাম, আগোরার দিকে। আগোরা কি জানেন তো? আজকের যাকে আমরা বলি মার্কেট প্লেস, তাই সেকালের আগোরা। সেখানে যে শুধু বেচাকেনা হতো তাই নয় কিন্তু ব্যায়ামাগারও ছিল। গ্রীক ভাস্কর্যে ম্যাসকুলাইন বডি শুধু স্মরণ করুন। তাহলেই বুঝতে পারবেন, সে যুগে আজকের জিমন্যাসিয়ামের কতটা কদর ছিল।

আগোরায় বহু লোকের সমাবেশ হতো। সারা এথেন্সের লোক জড়ো হতো সেখানে। এথেন্সের কেন্দ্রস্থলে ছিলো সেই আগোরা। দার্শনিক, ফলবিক্রেতা, সৈনিক থেকে বিভিন্ন পেশার লোক জড়ো হতো সেখানে। সক্রটিসকে ঘিরে ভিড় জমে উঠতো। বিশেষ করে তরুণরা তাকে বেশ পছন্দ করতো। সক্রেটিস শুধু প্রশ্ন করে যেতেন, উত্তর দিতেন না। বলতেন নিজে প্রশ্ন করো, নিজেই এর উত্তর খুঁজে পাবে।

তিনি এক তরুণকে প্রশ্ন করলেন, "বলো তো ন্যায় কি?" তরুণ উত্তর দিলেন, 'আইন মেনে চলাই ন্যায়।'

সক্রেটিসের পালটা প্রশ্ন, " যদি আইন অন্যায় হয়,যদি আইন কেবল সুবিধা দেয় ক্ষমতাবানদের? ' 

সক্রেটিসকে ঘিরে ভিড় জমে যায়, কিন্তু তিনি কারও সাথে ঝগড়া করেন না। কিন্তু তার প্রশ্নগুলো দাবানালের মতো ছড়িয়ে যায়।

একদিন আমরা গেলাম প্লেটোর বাড়ী, তার প্রিয় শিষ্য। প্লেটো তরুণ,  দীপ্তমান চেহারা। প্লেটো ধনাড্য ঘরের ছেলে। তার বাড়ীতেই আমাদের আজকের আহার। সক্রেটিস তাকে জিজ্ঞেস করলেন, জ্ঞান কি? প্লেটোর উত্তর। যা গুরু শেখান। সক্রেটিস মাথা নাড়লেন। না, গুরু উত্তর দেন না, প্রশ্ন করেন। জ্ঞান তোমার ভেতরেই আছে।

সেদিন আমি দেখলাম প্লেটোর চোখে আগুন জ্বলে উঠেছে। সেদিন আমার মনে হয়েছিল, এই তরুণই একদিন সক্রেটিসের উত্তরাধিকারী হবে।

প্লেটোর  বাড়ীতে সেদিনের আহারে ছিল,  রুটি, জলপাই,  ছাগলের দুধের পনীর আর সুরা। সক্রেটিস সামান্যই খেতেন। আহারের ফাঁকে আলোচনা উঠল। সুখ কি? কেউ বলল ধন, কেউ খ্যাতি। সক্রেটিস বললেন, সুখ হলো আত্মাকে চেনা, অজ্ঞতাকে চেনতে শেখা।

এক বিকেলে আলবিডাসিয়াসিও সঙ্গে এলো। তরুণ, ভীষণ সুদর্শন আর আত্মগর্বী।সক্রেটিস তাকে প্রশ্ন করলেন, ' নেতৃত্ব কি? সে বলল, মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা।সক্রেটিস বললেন, "তুমি যা বললে  তা ভূল। নেতৃত্ব হলো মানুষকে সত্য দেখানো। তুমি কি তা পারো?"

সক্রেটিসের বিচার

খ্রীষ্টপূর্ব ৩৯৯:

পেলোপনশীয় যুদ্ধে এথেন্স পরাজিত। এথেন্স সন্দেহ আর ক্ষোভে জর্জরিত। সক্রেটিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলো, তিনি দেবতাদের অস্বীকার করেন। যুবকদের বিভ্রান্ত করেন। সক্রেটিস জবাবে বললেন,আমি কিছুই জানিনা। শুধু জানি আমি অজ্ঞ। এ জ্ঞানের জন্যে যদি আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তবে এথেন্স আমাকে নয়, নিজেকেই হত্যা করবে।

বিচারের রায় হলো, তাকে হেমলক পান করে মৃত্যুবরণ করতে হবে। আর একটা বিকল্প প্রস্তাবও ছিল। তাকে এথেন্স থেকে নির্বাসিত করে দ্বীপান্তরে পাঠান হবে। কিন্তু তিনি তার প্রিয় এথেন্স ছেড়ে যেতে চাননি।

আমি ক্লিটো, প্রতিদিন জেলখানায় যেতাম। এক রাতে তাকে বললাম। " গুরুদেব, পাহারাদারকে উৎকোচ দিয়ে, আপনার পালিয়ে যাবার ব্যবস্থা হয়েছে। আপনি বেড়িয়ে আসুন। থিসোলিতে আপনার নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে।"

তিনি হাসলেন, বললেন, " ক্রিটো আমি যদি পালাই, তবে আমি আইন ভাঙব,অন্যায় সহ্য করা শ্রেয়, অন্যায় করা নয়।" আমার দুচোখ জলে ভরে গেল।

শেষের কদিন, আমরা তার শিষ্যরা, তাকে ঘিরে থাকতাম। প্লেটো, ফায়েডো, আপেলোদোরাস সবাই অশ্রুপূর্ণ চোখে তাকে ঘিরে থাকত।তিনি ধীরে বললেন, " যেমন সংগীত বীণা ভাঙলেও টিকে থাকে। আত্মাও দেহের বাইরে জাগ্রত থাকে। মৃত্যু ভয়ের কিছু নয়।"

শেষসকাল

সকালে প্রহরী হেমলকের পাত্র এনে দিল। ঘর নিস্তব্দ। আমরা সবাই কাঁদছিলাম। সক্রেটিস পাত্র হাতে নিয়ে বললেন। " মৃত্যু নিয়তি, ভয় করো না। অসততা ভয়ঙ্কর,  মৃত্যু  নয়'।

তিনি ধীরে ধীরে হেমলক পান করলেন। তারপর,কিছুক্ষণ পায়চারী করে শুয়ে পড়লেন। 

শেষ মূহুর্তে আমাকে বললেন, "ক্রিটো,  আক্রলেপিয়াসকে একটা মোরগ দিয়ে দিও। মৃত্যু হলো একটা আরোগ্য। " 

তারপরেই তার দেহ, নিস্তব্দ হলো।

আমি বহুক্ষণ তার মরদেহের পাশে বসে রইলাম। মনে হলো, আমার গুরু মারা যাননি। প্রশ্ন হয়েই বেঁচে রইলেন। তিনি আমাদের কোন উত্তর দেননি। তিনি আমাদের কেবল দিয়ে গেলেন জ্বলন্ত প্রশ্ন। 

আজ আমি ক্রিটো, সেই প্রশ্ন নিয়েই বেঁচে আছি।

সত্য কোথায়? ন্যায় কি? আত্মা কি অমর?

Monday, 28 July 2025

আনন্দময়ী মা

 আসা যাওয়ার পথে রোজ দেখি আনন্দময়ী মার বাড়ী।  রোজ ফুল দিয়ে সাজানো। বিকেল বেলায় বেশ কিছু ভদ্র  মার্জিত সুবেশ মহিলা, পুরুষ এর সামনে বসে প্রার্থনা করেন । আমি কোনদিন দাঁড়ায় নি। আজ দাঁড়িয়ে কটা ছবি তুললুম আপনাদের জন্যই। ফেসবুকে অনেক কৌতূহলী মানুষজন জানতে চাইবেন, কোথায়, কোথায়?  এটা সুকিয়া স্ট্রিট আর রামমোহন রায় রোডের মোড়ে, ঠিক ক্যাপিটাল নার্সিং হোমের কয়েকটা বাড়ী পরেই। আনন্দময়ী মা সম্মন্ধে আমি কিছুই জানি না। শুনেছি অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্না ছিলেন।  তবে অলৌকিক আবার কিছু হয় নাকি? আমার মোটেই বিশ্বাস নেই। তবে ইন্দিরা গান্ধী তাকে খুব মানতেন এটা জানি। আনন্দময়ী মাকে আমি একেবারে কাছ থেকে দেখেছি। ১৯৭৫ বোধহয়।  আমি আর কুন্তলা পথিক স্পেশালের কনডাক্টেড ট্যুরে উত্তর ভারত গিয়েছিলুম।  হিল্লি দিল্লি, আগ্রা মথুরা,বৃন্দাবন এইসব জায়গা আর কি। তখন কিন্তু ট্রাভেল কোম্পানিগুলো সব এক একটা কামরা বুক করে যেত।  ৫০/৬০ জন লোক এক কামরায় ১৪/১৫ দিন ভারী জমজমাট ব্যাপার ছিল। সেই ট্রেনের কামরা বিভিন্ন এক্সপ্রেসের সাথে জুড়ে চলত এখানে সেখানে। আর যেখানে যাওয়ার ছিল, সেখানে সেই কামরা রেলের সাইডিংএ  রাখা থাকত, খাওয়া দাওয়া প্ল্যাটফর্মে পাত পেড়ে, আমার তো ভারী মনপসন্দ ছিল। বেনারসে একদিন এঁচোড়ের ডালনা খেয়েছিলুম মনে আছে। বিরাট বড় মাংসের টুকরোর মত এক পিসই এঁচোড়, সে স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়।  সেইরকমটি আর কোনদিনই খায়নি। কমদিন তো নয় প্রায় ৪৪ বছর আগে আর খেয়েছিলুম পনীর পকোরা ধনেপাতার চাটনি দিয়ে। সারনাথে এক তপ্ত, রৌদ্রদগ্ধ দুপুরে।  সে স্বাদও আজো ভুলিনি। এইরকম হয় না, টুকরো টুকরো কথা মনে থেকে যায় দীর্ঘ দিন ধরে। বৃন্দাবনে সেই ট্যুরেই গিয়েছিলুম দোলের সময়। পথিক স্পেশাল সেখানে আমাদের রেখেছিল এক দারুণ ধর্মশালায়, দোলের দিন সেখানেই দেখলুম কৃষ্ণলীলা।  সে যে কি সুন্দর কৃষ্ণ আর রাধা আর সুন্দর তাদের ফুলের পাপড়ি উড়িয়ে দোল খেলা, আমি মুগ্ধ হয়ে দেখেছিলুম আর সেই রাধা আজও আমার মন আলো করেই রয়ে গেছে বেশ পাকাপাকি ভাবে। আমি যতই ধম্ম ব্যাপারে ভুরু কুচকায় না কেন, এইসব উৎসব আমার বেশ লাগে। ধম্মের সব সৌন্দর্যই তার উৎসবে যা সবার মন ছুঁয়ে যায়। 

তা হলে আনন্দময়ী মা থেকে শুরু করে  এখন পর্যন্ত হল এঁচোড়ের ডালনা আর পনীর পকোড়া নয় পকৌড়া। আরও অনেক কিছুই আছে নবাবী লখনৌর ভুলভুলাইয়া,ইমামবাড়া, কাবাব, করোলবাগের মাছ ভাজা অনেক কিছুই। তবে এতসবে যাব না, শেষ করি আনন্দময়ী মা দিয়েই। আনন্দময়ী মার সাথে দেখা এই বৃন্দাবনেই। এক বিকেলে গিয়েছিলুম তার বৃন্দাবনের আস্রমে। পুরোন দিনের বাড়ী ওই যেমন সব বাড়ী দেখা যায় পুরনো বাংলা সিনেমায়। গেট পেরিয়ে, সামনে একটা ছোট্ট বাগান, লাল সিঁড়ি দিয়ে উঠে একটা বড় চাতাল, তার উপরে একটা চৌকি, সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা। সামনে শতরঞ্জিতে আমরা বোধহয় জনা বিশেক লোক বসে রইলাম তার অপেক্ষায়। একটু পরেই এলেন এক ক্ষীনতনু পাতলা গড়নের মহিলা। এসে ধম্মকম্ম নিয়ে অল্প কিছু বললেন আর বললেন ব্রম্মের কথা। তাকে যে পাত্রেই রাখ তিনি সেইরূপই নেবেন ইত্যাদি ইত্যাদি।  সব দেখে শুনে কি আর বলব? I was not at all impressed. ওর থেকে ভাল হত যদি তখন বৃন্দাবনী সারং এর থেকেও সুমধুর, স্বাদিষ্ঠ  বেনারসী রাবড়ি আর জিলাইবি তে মনোনিবেশ করতুম। রেগে গেলেন তো? কি করব?  আমার সবই যে এই ইহকালই, পরকাল নিয়ে ভয় নেই, ভাবনাও নেই।




Thursday, 12 June 2025

No one writes to colonel


 


আজ সেই অর্থে, সকাল থেকে আমার করার কিছুই ছিলনা। রোজকার আসন, প্রাণায়াম আর ধ্যানে কেটে যায় ঘন্টা দুয়েক। তারপর,  আছে তো কিছু নিশ্চয়। না হলে বিরস দিন বিরল কাজ কি করে কাটবে। ছোট্ট একটা কাজ থাকে, সেটাতেও মন সংযোগ আর মাথা খাটানোর বেশ একটা ব্যাপার থাকে। সেটাতে আপাতত বিরতি চলছে। অবশ্য অল্প কয়েকদিনের জন্যেই।সেটা এসে গেলে আর বোর হবার মতো কোন ব্যাপার থাকবে না। নাতি পুতিরা স্কুলে। ওদের এখন ইউনিট টেস্ট চলছে, তাই নিয়ে ওরাও মহাব্যস্ত। কুন্তলাও গেছে মেদিনিপুরে। উত্যক্ত করার কেউ নেই। যারা একটু ভক্ত টাইপের বা ভয় পান, ভগবান, ভূতে বা বউয়ে, তারা অবশ্যই ওফেন্স নিতে পারেন, আমার উত্যক্ত কথার প্রয়োগে। আচ্ছা বলুন তো, জীবনের এই এতটা পথ হেঁটে এসে বউকে যদি উৎপাত না ভাবি, তাহলে কি ভাবব? আমার পাড়ার এক বন্ধু, নামটা বলেই ফেলি গৌতম,বউয়ের ভয়ে জ্বর বাঁধিয়ে বসল। গৌতমকে তিন মাসের রিলিফ দিয়ে, দিল্লিতে কাটিয়ে এলেন তিনি, তিন তিনটি মাস। এখন তিনি এসে গেছেন। আর গৌতমের এখন ইরেগুলার হার্টবিট আর হাই ফিভার চলছে। আমি অবশ্য সে গোত্রের নয়। জানেন তো আমি মূর্শিদাবাদী, নবাবের দেশের লোক। ' শির নেহারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির'। যাকগে ওসব কথা, তার থেকে বরং গল্প করি বা কিছু ইন্টেলেকচুয়াল আলোচনাই চলুক না।


আমরা তখন লালবাগে। ক্লাস নাইন? মনে একটা প্রেম প্রেম ভাব জাগছে।যাকে দেখি তারই প্রেমে পড়ি। এরকম একটা টালমাটাল চলছে। সে সময়ই ক্যাচ কট কট। প্রেম নয়। বিপ্লব। পড়লাম তুষারের খপ্পরে। নাম লেখালাম ছাত্র ফেডারেশনে সেই স্কুল বেলাতেই। তুষারের বাড়ীতেই শনিবার মিটিং হতো। জনগান্ত্রিক বিপ্লব, পেটী বুর্জোয়া,  দ্বন্ধমূলক বস্তুবাদ ইত্যাদি।  এছাড়াও আমাদের একটা জমজমাট আড্ডা বসতো, হাজারদুয়ারীর মাঠে। সেটা অবশ্যই বেশ কসমোপলিটান আসর। তাতে যেমন থাকতো, জামা নবাব, পাপ্পু নবাব, অপু, পন্ডিত, মীজানুর, রবি, সোনা, নিশিথ এরা। সেসব আলোচনা মূলতো সাহিত্যকেন্দ্রিক। আমাদের সাহিত্যমুখী করে তোলার পেছনে লালবাগের 'বান্ধব সমিতি'র প্রচুর অবদান ছিলো। অফুরন্ত বইয়ের জোগান দিয়ে গেছে এই লাইব্রেরি।  সে সময়ের হট ক্রেজ ছিলেন, সৈয়দ মুজতবা আলি।আমাদের বিকেলের আসরে সে সব ঘুরে ঘুরেই আসতো।


এসব তো সব আগের জন্মের কথা।খুব প্রিয়, খুব কাছের, কিন্তু তাদের আজ না যায় ধরা না যায় ছোঁয়া। সব স্মৃতির জগতেই থেকে গেছে, ধরা ছোঁওয়ার বাইরে। আর জানেনই তো আমি একটু স্মৃতিকাতর মানুষ।  পুরনো দিন আমাকে হন্ট করে খুব। পুরনো দিন অনেকটাই পরাবাস্তবের মতোই। ম্যাজিক রিয়েলিজম যারে কয় পরিষ্কার ভাষায়।


আজকেই সেই ম্যাজিক রিয়েলিজমের গপ্প বসানোর তাল খুঁজছিলাম এতক্ষণ।  বাজে কথায়, ফেসবুকের বেশ কয়েকটা পাতা নিশ্চয় নষ্ট করে ফেলেছি। এখন আর কি? শর্টকার্টে সারি বরং। আমার সংগ্রহে প্রচুর বই আছে।  বইকেনা আমার একটা বদভ্যাসও বলতে পারেন।তবে সব বইও যে পড়ে ফেলেছি, এমন দাবী করব না মোটেই। তবে বেশকিছুই পড়েছি।


আমার যা মানসিক গঠন, তাতে ওই ম্যাজিক রিয়েলিজম ব্যাপারটা বেশ যায় বাস্তবের জমির উপর দাঁড়িয়ে কল্পজগত তৈরী করা। ব্যাপারটা এককথায় এমনই। আর সেটাই আমার প্যাসটাইম। এবার বলুন তো, ম্যাজিক রিয়েলিজমের সেরা লেখক কে, অবশ্যই গাব্রিয়েল গ্রাসিয়া মার্কুয়েজ। যার ডাক নাম ছিল গাব্বো।কলম্বিয়ান লেখক, সাংবাদিক, রাজনীতিক আরো কতো কি। জীবনের বেশীরভাগটাই কাটিয়েছেন মেক্সিকো আর ইউরোপের নানা দেশে। নোবেল পুরস্কারও পেয়েছেন। তার অসামান্য সাহিত্যকীর্তির জন্যে। তার লেখা কতগুলো বউ, ' হান্ড্রেড ইয়ারস অফ সলিটিউড', 'লাভ এট দি টাইম অফ কলেরা', ল্যবিরিন্থ, নো ওয়ান রাইটস টু কলোনেল' 'স্ক্যান্ডাল অফ দি সেঞ্চুরী' ইত্যাদি ইত্যাদি।  ওনার বহু বইই আমার সংগ্রহে আছে। আজ কোন কাজ নেই, তাই ডিম্ভাত ( মুরগীর নয় হাঁসের) খেয়ে বসে পড়েছি, কলোনেল কে নিয়ে।


ছোট্ট বই। চরিত্রও কয়েকজন। কলোনেল, তার অসুস্থা স্ত্রী, মৃত পুত্র, শহরের এক খ্যাতনামা গায়কের ফিউনেরাল, একটা লড়াইয়ের মোরগ,এক দয়ালু ডাক্তার যিনি কলোনেল আর তার স্ত্রীকে বিনে পয়সায় চিকিৎসা করেন। একটা ষ্টীমার আর পোস্টম্যান।  প্রতি শুক্রবার জাহাজ আসে আর জাহাজে আসে ডাক।কলোনেল' জাহাজঘাটায় দাঁড়িয়ে থাকেন মেলের প্রতীক্ষায়,  যে ডাকে তার প্রতিশ্রুত পেনশনের চেক আসবে।দীর্ঘ ১৫ বছর প্রতীক্ষার পরেও কলোনেলের সে চিঠি আসে না। পোস্টম্যান ঘোষণা করেন No one writes to Colonel.

সংক্ষেপে এটাই সারাংশ।  এক অসামান্য  না ছোটগল্প না উপন্যাস। সুযোগ পেলে বইটা পড়ে নেবেন একবার।No 

Saturday, 10 May 2025

Join de vivre


 Joie de vivre

বেঁচে থাকার আনন্দ


I can make no claim to have known how matters stood or what happened during my birth. But I knew it was hard days of summer. The sun was scorching all over and my mother was unwell. Despite all the calamities both in the outer world and in my resting place, at mother’s womb, I finally managed to see the light of this world. 


I was told that I was born on a Sunday in summer. As per Bengali Calendar, It was the 25th day of Baisakh in the sub-divisional town, Raghunathganj in Jangipur sub-division. It is a famous day so far Bengal and Bengali people are concerned. It’s a very eventful day. The Schools and Colleges, clubs, offices are all out with this annual ritual to prove their cultural background or heritage. Given the political scenario of Bengal today and the continuous backwardness of this state, it would be hard to make one believe that Bengali People are cultured with the intellectual bend of mind, so on and so forth. And for this reason, we have to take the refuge of a poet who was born 157 years ago and was in fact, the Indian Renaissance man and was prolific in his creation. Did he succeed in educating Bengali people? The answer is certainly a big No. Barring a few, the average Bengali people are dwarf in all respects. There is nothing to be proud of except the past. So, Bengali is a community who live in past and never ventured to come out in the outer world.


Sometimes, I pity myself that although I may share the birthday of Tagore, the cult figure and so did hundreds and thousands of people. I do not think any of them has become famous for being born on 25th Baisakh. Actually, I knoweth, not a single person except me and Rabindranath who was born on that day. However, I do not find any advantage in taking birth on such a famous day. Neither I can write nor can I sing, the genius of Tagore was never bestowed on me to its furthest fraction.


I was destined to enter into service life at a very early age of 20 only, though I was not mentally prepared for that. I remember the day very fondly when I first entered the premises of State Bank of India not as a customer but as an employee. It was long ago. But the day is very clear in my vision. I was nervous and hesitant to enter into the Chamber of the Branch Manager to whom I had to report with my appointment letter. At that time, State Bank of India was very glamorous and people envy those who worked in that institution.


My first day in the Bank went peacefully. My initial nervousness did gradually meltdown. My first branch was a small one, there was not much work and at that time Bank was not required to do varieties of work. It was simple deposits accounts and a little bit of advance and general banking. So life was not that hard like today’s’ banker.  But entering into the service life so early made me rebellious within a few weeks. I started missing my friends who were used to gossip on the stairs of Hazarduary discussing various topics every evening. At that time we were very much inclined to Che Guevara, Communism, Syed Muztuba Ali and ‘Charulata”, all were the core issues of our discussions and of course, the beautiful girls of Lalbagh too who had no parallel at least in beauty and fairness all over the world. I was terribly upset with my new confinement at a terrible place. It was Nimitita. I can now reclaim that place as a lovely place with the Padma in front, lots of Hilsa and the fresh fishes from the river were sheer delights to relish. The famous Zaminder Chowdhury of Nimitita Rajbari was a personal friend of my father and was very affectionate to me. You might remember Ray’s ‘Jalshaghar’. It was shot in their palace though it is now totally dilapidated. The BSF personnel and its Commander were very friendly with us and whenever they came to Bank, they came with various gifts specially with a bottle of Rum for us. And it was a must to join them in their Barakhana every month. Here, in Nimtita, I met my first Yoga guru, Late Anil Sanyal, the Head Master of Nimtita High School and he was a direct disciple of famous Yogi Baradacharan Lahiri. On the later part, I did enjoy a lot of that place, Nimtita. It was delightful really.


 But at the early stage, it was altogether boring for me to spend 24 hours a day there. I had plenty of time. I used to wake up early in the morning. I rose before the sun could rise. And my mind started working instantly on what next, what next? I got out of my home. There was hardly any person on the streets and I did start my walk rather a long march. I walked from one street to another. I walked in different directions. But there was hardly any destination for me, nowhere to reach.


Now, I understand how painful, it is for a man who has started his journey long ago, could not find any destination throughout his life. Do we really have any destination? Or am I not inclined to reach to any particular station? Possibly, the second one is right. I never intended and still intend to reach anywhere where I can end my journey and possibly rest in peace. But rest in peace is for the dead men when they will have no need to walk further and to be very honest, nobody wants to rest in peace as also me. 

So, চরৈবতি, চরৈবতি।If you have not the physical ability to walk, do walk in fantasy. It is a fantasy world you can cope it with fantasy even from your bed. This is my small realisation.


Did I envy those people who appear to be fully composed with their day to day mundane activities and not complaining about anything? They possibly are resting in peace. Did they really exist? I doubt after seeing all those people who are well placed and doing all the worldly activities with the doors and windows of their minds totally shut down. But I cannot blame them. They are organized in that way. And perhaps this is the way; most of us usually are accustomed to surviving.

Tuesday, 29 April 2025

 তিনকুল গিয়ে এককুল আছে কতটা তাও জানিনা। কিন্তু আমার আজও ধম্মে একটু মতিগতি হলো না। জীবনে  একটা ফুল বেলপাতাও চড়ালাম না ৩৩ কোটি ( প্রকার) দেবদেবীর উদ্যেশে। আমার ইহলোক তো গেছেই, পরলোকও ঝড়ঝড়ে?  আদৌও সেরকম কিছু আছে কি? কি আর করা যাবে। পরলোকেও যদি জ্ঞানের নাড়ি টনটনে থাকে, তাহলেও তেনাদের থোরায় পরোয়া করব! কভি নেহি।  আমি আমিই। একমেবা দ্বিতীয়ম। কারুর খবরদারি মানা আমার কুষ্ঠিতে নেই। আমিই আমার গুরু, আমিই আমার ঈশ্বর।

আমার বন্ধুরাও অনেকেই এই পথের পথিক। তারা পরকাল নিয়ে মোটেই ভাবিত নয়। ইহকাল নিয়েই তাদের যত নাড়াচাড়া। তবে ভক্তি বা আসক্তির কথাই যদি আসে, তারা লগভগ সবাই রসের পথিক। তাদের যত আনন্দ বা উল্লাস সেই বোতলবন্দী দৈত্যতেই। এর মানে আপনার যা ইচ্ছে বলুন তাতে We just care a fig. অনেককেই দেখি গুরু ধরেন বৈতরণী পার করে কোন স্বর্গলোকে যাওয়ার আশায়। আমি অন্তত সেই গোত্রের নয়। আমার কাছে এই পৃথিবীই হামিনস্ত। যাকগে এসব আজেবাজে কথা। 

ব্যক্তিজীবনে আমি সবিশেষ ডিসিপ্লিন্ড।  পূজো আচ্চা করিনা হয়ত। কারণ করে কোন লাভ নেই, বেকার সময়ের জলাঞ্জলি। কিন্তু একটা বিষয়ে আমি স্থির। সেটা যোগ। সকাল বেলায় দেড়ঘন্টা আমি যোগী। আমার এই যোগচর্চা আজকের নয়। সেই স্কুলজীবন থেকেই এর শুরু। তারপর তো বিষ্টু ঘোষের আখড়ার দাস দার ( প্র‍য়াত প্রেম সুন্দর দাস) কাছে নাড়া বাধা বাঁধা। সেই চর্চা সমানে চলছে ঘড়ির অবিরত টিকটিকের মতো। আরো একটা জিনিষে আমার উৎসাহ সেটা ধ্যান বা মেডিটেশন। আসলে নিজেকে খোঁজা কিছু নির্দিষ্ট সময় ধরে। এই যে আমি এখানে এলাম, এসেছি তো কোথাও থেকে! সে কোথায়?  সেই খোঁজ চলে নিত্যদিন।  এই খোঁজা চলছেই। আর এই খোঁজার চক্করে একদিন তো হারিয়ে গিয়েছিলাম প্রায়। ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া সাঁ সাঁ করে কোথায় যে যাচ্ছিলাম? আজ বলতে বাঁধা নেই, বড্ড ভয় পেয়েছিলাম সেদিন।  ধড়মড় করে উঠে পড়েছিলাম । 


আমি ফেসবুকে মাঝেমধ্যে দুচার কথা লিখে ফেলি। কেউ পড়েন আমার এই এই সব বাতুলতা। অনেকেই স্ক্রল ডাউন করে যান। আমার এইসব ট্যাঁরাবেকা কথা তাদের পছন্দ হয় না মোটেই। কুন্তলাকে তো চেনেন? আমার অগ্নিসাক্ষী নারায়ন শিলা সাক্ষী ইস্ত্রি। আমাকে দুরমুশ করার কাজে সদাই ব্যস্ত। তবে কেয়ার করে অনেক। এই যে এখন আমি সবসেরে নিত্যকর্মে বসে গেছি  কিছু রোজগারের আশায়। তার কিন্তু ভূল হয়নি আমার পছন্দসই ব্রেকফাস্টের পরিবেশনে। সাজিয়ে দিয়ে গেছে আমার টেবলে। অতএব, কুন্তলার কিছু ধন্যবাদ প্রাপ্য। আর সে ব্যাপারে আমি অকৃপণ। 

Sunday, 27 April 2025

 গরম যে কি নিদারুণ,  তা আজ হাড়ে হাড়ে মালুম হল। আমাদের ছোট্ট গ্রুপের বন্ধুদের আমনে সামনে হয় নি বহুদিন। আজ মুলতঃ সুজিতের অনুপ্রেরণা আর উদ্যোগে একটা আসর বসেছিল অরুণের বাড়ীতে,  নাকতলায়। মেট্রো চালু হওয়ায় আজ বহু দুরই কাছের হয়েছে। যে নাকতলা আমাদের নাগালের বাইরে ছিল তা আজ ঢিলছোড়া দুরত্বে। তবে মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত যেতেই ঘেমে নেয়ে দস্তুর। যদিও আমি কাব্যরসিক নয় তবু সব চোখা চোখা কবিতা অনর্গল মনে এল বাল্মিকীর কায়দায়। দারুণ অগ্নিবাণে রে,  পঞ্চশরে বিদ্ধ করেছ একি মোরে সন্যাসী,  এসো হে বৈশাখ এস এস ইত্যাদি ইত্যাদি। আরও সব রৌদ্রদগ্ধ কবিতা। সবই আমাদের সুরের গুরু কবিগুরুর।  যতই কষ্ট হোক, তিনি যে আমাদের তৃষ্ণার জল। আর তার শুরুও যে এই বৈশাখে৷ আর আমিও তো এসে পরেছি, এই বৈশাখেই। Accidental Prime minister  এর মত আমিও একজন by default কবি। আজ্ঞে, ভুলে যাবেন না, আমারও জন্ম বলুন,চাই আবির্ভাব, তাও এই ২৫ শে বৈশাখেই। তাই বৈশাখের এই পঞ্চ কেন শত সহস্র শর নিয়ে আমার অভিযোগ বা অনুযোগের কোন কারণই থাকতে পারে না, থাকা উচিতও নয়। 


যাক, শেষমেশ এসে তো পরলাম মাষ্টারদায়। মানে অরুণের এলাকায়। কিন্তু ওর বাড়ী যেতেও এক বিপত্তি।  হাটা লাগালাম উল্টো পথে। নাকতলার বদলে কানতলার দিকে। আমি লোকটাই এই রকম, সবসময় উল্টো পথেই হেটে চলেছি সেটা যখন বুঝলাম তখন বেশ অনেকটাই পথ পেরিয়ে এসেছি।  


অরুণের বাড়ীতে এসে অর্ভ্যথনা জানাল এলিসিয়াই। এলেসিয়া কে? কি করেই বা বলি? ওর আসল পরিচয় জানাতে, অরুণের ভারী আপত্তি। তা ছাড়া অরুণের বউ এখন দেশের বাইরে। আমেরিকায় মেয়ের বাড়ীতে।  ও বাড়ীতে একা। তাও বেশীক্ষণ দ্বন্ধ রাখা উচিৎ নয়, ভীষণই অনুচিৎ। যাচ্ছেতাই ভাবছেন নিশ্চয়ই।  তবে অরুণ ভারী ভাল ছেলে। আমি চোখ বুজে ওর ক্যারেকটার সার্টিফিকেট দিতেই পারি। এলেসিয়া আসলে একটা মেয়ে। দেশী নয়, এংলোও হতে পারে।  তবে কে ও? অরুণ আবার কুকুর বলাটা একদম পছন্দ করে না। নিরাশ হলেন? একটা রগরগে কেচ্ছার আশা করেছিলেন? এই বয়সে ওসব চিন্তা বাদ দিন। আমি অবশ্য কুকুর না বলে, সারমেয়ই বলি। এর মানে নিশ্চয়ই জানেন। না জানলে, অভিধানের পাতা উল্টোন।


এবার কেমন কাটল সারা দুপুরটা?  বিন্দাস বিন্দাস। বন্ধুসঙ্গে নরকবাসও, স্বর্গাদপী গরীয়সী।  আমরা স্বর্গ আর নরকের মধ্যে শাটল চালালাম যথারীতি।  সঙ্গে অবশ্যই ছিল চিল্ড চিল্ড বিয়ার আর অরুণের অসামান্য কালিনারি এক্সপার্টিসের অভিজ্ঞান মুর্গীর পাতলা ঝোল, রাইস আর আমের টক। দারুণ জমজমাট একটা দুপুর কাটল আজ। ১৪ বোতল বিয়ার কোথা দিয়ে যে উড়ে গেল তা কেই বা জানে। আজ বলরাম ছিল at his best. সারাক্ষণ স্ট্রেইট ব্যাটে খেলে গেল। আর যা সব জোকস বলে, তা ভেবেও কান লাল হয়ে যাবে। 


আমার কুম্ভমেলায় বিছরে যাওয়া ভাই জানে জিগর রাভিন্দার এলো দেরিতে, কিন্তু পলকেই আমাদের ওভারটেক করে গেল বিয়ারের হিসাবে। সব কথা বলা যাবে না। বলরাম লজ্জা পাবে আর ফেবুও হয়ত দেবে আমায় ব্লক করে। জানার ইচ্ছে যদি হয় তবে আমাদের ডাকুন,  অনুপান অবশ্যই  chilled Beer. আর কোন শর্ত নেই।





Monday, 14 April 2025

চড়ক

  ঘুরে এলাম চড়কের মেলা। মেলা বসে সারা বীডন স্ট্রীট  ধরে,ছাতুবাবু লাটুবাবুর বাড়ী আর বাজারের সামনে থেকে হেঁদোর মুখ অব্দি। সারা বিডন স্ট্রিট জুড়েই মেলার বিকিকিনি।  মেলা কিন্তু এই একদিনই।  তবে চলবে সারারাত। দারুণ কালারফুল, রাস্টিক আর ভাইব্রেটিং। আর হবে নাই বা কেন।  বেঙ্গল রেঁনেসা'র গর্ভগৃহ তো এইসব অঞ্চলই। ভীষণ একটা ওল্ড ওয়ার্ল্ড চার্ম জুড়ে থাকে এই সব কিছু ঘিরে৷ আর যা কিছু পুরনো তাই যে ভীষণ মনকাড়া।  তাই তো বারবার ফিরে ফিরে আসি এই সব জায়গায়। পুরনো কলকাতা তার যূগপুরুষরা৷ রামমোহন, ঈশ্বরচন্দ্র, রবি ঠাকুর, বিবেকানন্দ, বঙ্কিমচন্দ্র আরও অসংখ্য গুণীজন যেন চলতে থাকে আমার সাথে। আমার তো ভীষণ ফ্যাসসিনেটিং লাগে।

এই চড়কের মেলা ২০০ বছর পেরিয়ে গেছে। ভাবা যায়? ওয়াজেদ আলি থাকলে হয়ত আর একবার বলতেন 'সেই ট্রাডিশন সমানে চলছে'। হ্যাঁ, কিছু কিছু জিনিস তো একইরকমভাবে চলছে।  আর চলবেও। এগুলো শ্বাশত।  আর শিব যে শ্বাশত সুন্দর। তার কোন পরিবর্তন নেই। 


এ উৎসব শিবের। আর হিন্দু সমাজে শিবের এক বিশেষ স্থান। শিবের পরিচয় দেবাদিদেব মহাদেব  নামে। নেশা ভাং করেন আর এখানে ওখানে পরে থাকেন। তাও মেয়েমহলে শিবের খুব উচ্চাসন। সব মেয়েরাই শিবের মত বর চান। কিন্তু দেখুন আদপে তা কিন্তু নয়। আমরা বন্ধুরা যদি নমাসে ছমাসে একটু শিবকে অনুসরণ করে নেশাভাং করি তা নিয়েই দক্ষযজ্ঞ হয়ে যায়। বুঝুন শিবভক্তির হাল। শিবের পৌরাণিক কাহিনি অল্প-বিস্তর সবার জানা। তবে আপনারা কেউ কি আমিশ ত্রিপাঠীর 'Immortals of Meluha' পড়েছেন? তাতে শিব কিন্তু এক উপজাতীয় বীর। তিব্বতের ওপাড় থেকে হিমালয় পেরিয়ে কাশ্মীরের ওপর দিয়ে এসেছেন সিন্ধু উপত্যকার এক রাজার আমন্ত্রণে তার রাজত্ব রক্ষার্থে।  সেই রাজাই দক্ষ আর রাজকন্যে পার্বতী। মাঝে বিস্তর ঘটনার ঘনঘটা।  তাতে শিবের বীরত্ব,মহত্ত্বই প্রতিষ্ঠিত।  পড়তে বেশ লাগে। হাতে পেলে পড়ে নেবেন বইটা। 


যাহোক, চড়কের মেলা কিন্তু একই চেহারায়৷ সেই গ্রাম্য আদলের মেলা আর চড়কের বাই বাই ঘোরা৷ এর মধ্যে একজায়গায় খুব ভীড় দেখে দাঁড়িয়ে গেলাম। ভীড় ঠেলে দেখি আমার ভীষণ প্রিয়, প্রিয়দর্শিনীরা সব আমার অপেক্ষায়ই যেন রসের সাগরে ভাসছেন ।  কি করলাম? কিছুই করতে পারলাম না। শুধু ছবি তুলে ফিরে এলাম। তারা কারা, শুনবেন?  জিলাপি, পান্তুয়া, ক্ষীরের চপ, বালুসাই ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে তাদের ছবি  তুলে এনেছি আপনাদেরই জন্য। ছবি দেখেই বুঝবেন কি মোহময়ী তাদের আবেদন,সঙ্গে সঙ্গে আমার সংযম কেও সাবাসী দিতে ভুলবেন না।