হটাৎ শান্তিনিকেতন যেতে হয়েছিল। হটাৎই। কারন বলা নেই, কওয়া নেই। কুন্তলা ধরে বসল, শান্তিনিকেতন যেতে হবে। এবং কালকেই। কারণ? কারণ, কলাভবনের শতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে, কলাভবন নন্দনে বিনোদবিহারী মুখার্জীর ছবির প্রদর্শনী চলছে এবং তা প্রায় শেষের মুখে।
কুন্তলা আমার বিয়ে করা বৌ, তাই অনেকদিন একসাথে আছি। হটাৎ করে না বলতে পারি নে। যদিও আমি শিল্পী, শিল্পরসিক বা শিল্পবোদ্ধা কোনটাই নই। ছিলামও না কোনদিন। হবার ইচ্ছেও নেই। তবুও যেতে হবেই। কারন কুন্তলার ওসবে ভারী সখ। ওর রুটি রোজগারও ওই শিল্প বেচেই। কথাটা খারাপ শোনাচ্ছে না? শিল্প কি বেচার জিনিষ। মহৎ অর্থে হয়ত নয়। তবে আজকাল সারা সংসার জুড়েই তো শুধুই বেচাকানা। শিল্পীরা দোকানদার হলেই বা ক্ষতি কি? তবে মহৎ শিল্পী বা কালোত্তীর্ণ অনেকেই তো আছেন, যাদের ছবি হয়ত তাদের জীবদ্দশায় তত বিকোয়নি কিন্তু আজ লক্ষ লক্ষ ডলার তার দাম। আমার গগ্যার কথায় মনে আসে। কি অসাধারণ প্রতিভা। কিন্তু চরম পাগলামি আর ততোধিক দারিদ্র। সমাজ সংসার ছেড়ে, নিরাপদ জীবন ফেলে, তাহিতি কন্যাদের মধ্যে জীবন যাপন। ছবি আঁকা আর তাহিতি কন্যাদের সঙ্গে 'Sex under the mango grove' Oh,what a life.
.ছবি বুঝি চাই না বুঝি। এইরকম একটা জীবনের সাধ আমারো ছিল। এখন বুঝি তা আর সম্ভব নয়। অগত্যা শান্তিনিকেতনই সই। পল গঁগ্যা কে নিয়ে সম্ভব হলে কুরোসাওয়ার একটা ছবি আছে, পারলে দেখবেন। ছবিটার নাম 'Dream'. অনেকগুলো সর্ট ফিল্মের কম্পোজিশন। খুব ভাল লাগবে। আমার একজন প্রিয় সাহিত্যিক সসমারসেট মম। মমও গঁগ্যার আকর্ষন কাটাতে পারেননি। ওকে নিয়ে আস্ত একটা উপন্যাসই লিখে ফেলেছেন। বলুন তো কোনটা? ' The moon and the sixpense'. এর নায়ক চার্লস স্টিকল্যান্ড, শেয়ার মার্কেটের দালাল। গঁগ্যার আদলে গড়া। হঠাৎই তার মনে হল, I am destined to be an artist. আর তিনি সব ছেড়েছুড়ে চললেন তাহিতি দ্বীপে। এইরকম ইচ্ছে আমার অনেকবারই হয়েছে। অবশ্য শিল্পী হতে নয়। ধরূণ ভুপর্যটক হতে। কিন্তু 'Escape velocity' জোগাড় করতে পারিনি। বাঙ্গালির ছাতির জোর বড়ই কম। এই ভুপর্যটক হবার লোভ আমার রাশিয়ান গল্প/উপন্যাস পড়ে। বেলেকিনের একটা গল্প ছিল এক ভবঘুরে ছেলের এক অজানা শহরের মেয়ের প্রেমে পরার। সে প্রেম অবশ্য পরিণতি পায়নি। সেই থেকে আমার মনের মধ্যে দানা বেঁধে আছে একটুকরো লোভ, এক মেমসাহেবকে বিয়ে। সে তো আর এই জন্মে হল না মশাই। এখন এই দিশি কালো মেমসাহেবকে নিয়ে রওনা দিই বিনোদ বিহারীর সন্ধানে।
এবার আসল কথায় ফিরি। শান্তিনিকেতন তো পৌছে গেলাম। আর শান্তিনিকেতন আরামে ঘুরতে হলে টোটোর কোন বিকল্প নেই। পৌছে গেলাম নন্দন, কলাভবনে। বিনোদবিহারীকে অল্পবিস্তর আপনারা সবাই তো জানেন। কলাভবনের শিক্ষক ছিলেন কিছুকাল। রামকিংকর, মানিদা, মুজতুবা আলি এরা সব একবাগানের ফুল ছিলেন। আপনারা যতটুকু জানেন এদের সমন্ধে, আমি তার থেকে বেশী কিছুই জানিনা। বিনোদবিহারী সম্মন্ধে আমি প্রথম জানতে পারি, সত্যজিৎ রায়ের একটি ডকুমেন্টারি থেকে, 'The inner eye'. সে বোধহয় আশির দশকের প্রথম দিকে। ওনার দৃষ্টি খুব ক্ষীণ ছিল। পরে তো অন্ধই হয়ে যান। তা সত্বেও অদ্ভুত সব ছবি একে গেছেন।
সেইসব ছবির ছবি তোলা বারণ। তাও আমি লুকিয়ে চুরিয়ে স্রেফ আপনাদের জন্যই কিছু ছবি তুলে এনেছি । এই নন্দনে কলাভবনের পঞ্চকন্যার এক প্রদর্শনী চলছিল। তারও কিছু ছবি দিলাম। এইসব ছবি যদি আপনাদের ভাল লাগে, তবেই আমার এই চুরি করা সার্থক। আমার এই মহাপাপের ভাগীদার হবেন তো? না আমাকে আবার বাল্মীকির মতই ডিচ করবেন?














No comments:
Post a Comment