Saturday, 17 August 2024

কদম কদম বাড়ায়ে যা

 


কদম কদম বাড়ায়ে যা

খুসী কে গীত গায়ে যা


আজ রোববার, ইংরেজি ১৮ই আগষ্ট, বাংলা ১লা ভাদ্র, ১৪২৬ দিবা ৬ ঘটিকা মাহেন্দ্রযোগ। এতসব সত্যিই কি লেখার দরকার? আমি শ্রীমও নই আর কোন কথামৃতও লিখতে বসিনি। নেহাৎই আমার প্রলাপ বচন। ইচ্ছে হলে শুনতেও পারেন না হলে কানে গুজুন তুলো।

আসলে এখন আমার রোজই রোববার। একই তিথি, একই নক্ষত্র আর যোগ রোজই মাহেন্দ্রযোগ। আসলে প্রতিদিনই যে ২৪ ঘন্টায় হয় সে হিসেব আগে করিনি। তখন মনে হত আরও কয়েকঘন্টা দিনের হিসেবে জুড়লে বেশ হত। একটু ফেলে ছড়িয়ে চলতে পারতুম। কিন্তু এখন ২৪ ঘন্টা মিনিট গুনে সেকেন্ড গুনে কাটাতে হয়। মোটামুটি দিনের বেশীর ভাগটাই ভরপুর টইটম্বুর করে রাখি। কিন্তু রোববারের এই দুপুরটায়  মন বড় উচাটন হয়৷ আজও তেমনই এক রোববার।  চার দেয়ালের এই বাঁধন থেকে মুক্তি চায় মন। ওই যে রবিবাবুর গানে আছে না, ' এই আকাশে মুক্তি আমার...' পাখা থাকলে উড়েও যেতাম। একবার সত্যি সত্যিই উড়েই গিয়েছিলাম।  সে অনেক অনেক দূরে। তখন আমি নিমতিতায় থাকি। বরদাচরণ মজুমদার, নাম শুনেছেন নিশ্চয়। বিরাট যোগী,সাধক। আমাদের দেশ, কাঞ্চনতলায় বাড়ী।  তার প্রত্যক্ষ শিষ্য ছিলেন নিমতিতা স্কুলের হেডমাস্টার মশায় অনিল সান্যাল্। তার কাছে আমার যোগ ধ্যানের প্রথম পাঠ। তো ধ্যানেই একদিন জাস্ট উড়ে গেলাম। সে এক বিরাট অনুভূতি।  পৃথিবী,চন্দ্র, গ্রহ, নক্ষত্র ছাড়িয়ে কোথায় যে যাচ্ছিলুম কি জানি। ভয় পেয়ে পিছিয়ে এলুম। তারপরে অনেক চেষ্টাই করিছি, কিন্তু আর ইঞ্চি ছয়েকের বেশী উঠতে পারিনি। এটুকু শুনেই আপনার হয়ত ভাবতেই পারেন এ বেটা ঠিক টেনীদার গলি ঘুরে এসেছে আর টেনীদা ভর করেছে এই বেআক্কেলের মাথায়। 


সত্যি সত্যিই আজ মাহেন্দ্রযোগ ধরেই বেড়িয়েছি৷ বাসে ট্রামে নয় একেবারে পদব্রেজে। হাটতে আমার ভারী ভাল লাগে। আর আমার হাটার প্রিয় জায়গাও এই উত্তরে। ইচ্ছে ছিল দর্জীপাড়ার নতুনদার সাথে আড্ডা মেরে সন্ধ্যেটা কাটাব। কিন্তু হাজার ডাকাডাকিতেও তার সাড়া পেলুম না। হয়ত ভাগলপুরেই ভাগলবা হয়েছে শ্রীকান্তের খোঁজে। উত্তরের অলিগলি ঘুরতে ঘুরতে এগিয়ে চললুম। উত্তরের গলিতে গলিতে দেবদেবীর অবস্থান। এখানে সন্ধ্যে হলেই কাঁসরঘন্টার ভারী মিষ্টি আওয়াজ। মানুষের এখনও অচলা বিশ্বাস তাদের ঠাকুর দেবতায়। এই বিশ্বাসের আড়ম্বরহীন আয়োজনে আমারও নীরব সমর্থন।  ধর্ম থাকুক সে একক বা সমবেত বিশ্বাসে। কিন্তু দাঁতমুখ খিচিয়ে যেন তেড়ে না আসে। এইখানেই আবার রামকৃষ্ণ।  যত মত তত পথ। থাকুক না সব বিশ্বাস পাশাপাশি হাতে হাত রেখে তা হলে কি ভালই না হয়। আমারও খুব পছন্দের এই প্লুরালিস্টিক সমাজ। অনেক ধর্ম, অনেক ভাষা অনেক সংস্কৃতি সংসার সমাজ আলো করে এই প্রকৃতির মত তার নানা রঙ,রুপ, গন্ধ নিয়ে থাক। যাক সে সব ভাবের কথা। আমি নিতান্তই অ-ভাবী মানুষ। এসব নিয়ে বেশী কথা বলা আমায় মানায়ও না।

যাক নতুনদাকে ধরতে না পেরে এগিয়ে চললুম, শোভাবাজার রাজবাড়ীর পানে। ইচ্ছে আজকের সন্ধ্যেটা রাজামশায় স্বপন দেব মহাশয়ের সাথেই পানালাপেই কাটিয়ে দেব। কিন্তু মাহেন্দ্রক্ষণে বেরোলেও রাজামশাইকে ফোনে পেলুম না। রাজবাড়ীর ফটক ঠেলে ঢুকে পড়তেই পারতুম। কিন্তু আমিও তো নবাব বাদশার দেশেরই লোক। এরকম বেয়াদব আচরণ কি আমার শোভা পায়? তাই চরৈবতিই। শেষে নেতাজির দোরগোড়ায় এসে থামতেই হল। পাঁচমাথার মোড়ে কালীমার দর্শন সেরে নুচি সন্দেশ খেয়ে আবার সেই সংসার বিদেশে বিদেশীর বেশে পুর্নমুষিক ভব।