Tuesday, 29 April 2025

 তিনকুল গিয়ে এককুল আছে কতটা তাও জানিনা। কিন্তু আমার আজও ধম্মে একটু মতিগতি হলো না। জীবনে  একটা ফুল বেলপাতাও চড়ালাম না ৩৩ কোটি ( প্রকার) দেবদেবীর উদ্যেশে। আমার ইহলোক তো গেছেই, পরলোকও ঝড়ঝড়ে?  আদৌও সেরকম কিছু আছে কি? কি আর করা যাবে। পরলোকেও যদি জ্ঞানের নাড়ি টনটনে থাকে, তাহলেও তেনাদের থোরায় পরোয়া করব! কভি নেহি।  আমি আমিই। একমেবা দ্বিতীয়ম। কারুর খবরদারি মানা আমার কুষ্ঠিতে নেই। আমিই আমার গুরু, আমিই আমার ঈশ্বর।

আমার বন্ধুরাও অনেকেই এই পথের পথিক। তারা পরকাল নিয়ে মোটেই ভাবিত নয়। ইহকাল নিয়েই তাদের যত নাড়াচাড়া। তবে ভক্তি বা আসক্তির কথাই যদি আসে, তারা লগভগ সবাই রসের পথিক। তাদের যত আনন্দ বা উল্লাস সেই বোতলবন্দী দৈত্যতেই। এর মানে আপনার যা ইচ্ছে বলুন তাতে We just care a fig. অনেককেই দেখি গুরু ধরেন বৈতরণী পার করে কোন স্বর্গলোকে যাওয়ার আশায়। আমি অন্তত সেই গোত্রের নয়। আমার কাছে এই পৃথিবীই হামিনস্ত। যাকগে এসব আজেবাজে কথা। 

ব্যক্তিজীবনে আমি সবিশেষ ডিসিপ্লিন্ড।  পূজো আচ্চা করিনা হয়ত। কারণ করে কোন লাভ নেই, বেকার সময়ের জলাঞ্জলি। কিন্তু একটা বিষয়ে আমি স্থির। সেটা যোগ। সকাল বেলায় দেড়ঘন্টা আমি যোগী। আমার এই যোগচর্চা আজকের নয়। সেই স্কুলজীবন থেকেই এর শুরু। তারপর তো বিষ্টু ঘোষের আখড়ার দাস দার ( প্র‍য়াত প্রেম সুন্দর দাস) কাছে নাড়া বাধা বাঁধা। সেই চর্চা সমানে চলছে ঘড়ির অবিরত টিকটিকের মতো। আরো একটা জিনিষে আমার উৎসাহ সেটা ধ্যান বা মেডিটেশন। আসলে নিজেকে খোঁজা কিছু নির্দিষ্ট সময় ধরে। এই যে আমি এখানে এলাম, এসেছি তো কোথাও থেকে! সে কোথায়?  সেই খোঁজ চলে নিত্যদিন।  এই খোঁজা চলছেই। আর এই খোঁজার চক্করে একদিন তো হারিয়ে গিয়েছিলাম প্রায়। ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া সাঁ সাঁ করে কোথায় যে যাচ্ছিলাম? আজ বলতে বাঁধা নেই, বড্ড ভয় পেয়েছিলাম সেদিন।  ধড়মড় করে উঠে পড়েছিলাম । 


আমি ফেসবুকে মাঝেমধ্যে দুচার কথা লিখে ফেলি। কেউ পড়েন আমার এই এই সব বাতুলতা। অনেকেই স্ক্রল ডাউন করে যান। আমার এইসব ট্যাঁরাবেকা কথা তাদের পছন্দ হয় না মোটেই। কুন্তলাকে তো চেনেন? আমার অগ্নিসাক্ষী নারায়ন শিলা সাক্ষী ইস্ত্রি। আমাকে দুরমুশ করার কাজে সদাই ব্যস্ত। তবে কেয়ার করে অনেক। এই যে এখন আমি সবসেরে নিত্যকর্মে বসে গেছি  কিছু রোজগারের আশায়। তার কিন্তু ভূল হয়নি আমার পছন্দসই ব্রেকফাস্টের পরিবেশনে। সাজিয়ে দিয়ে গেছে আমার টেবলে। অতএব, কুন্তলার কিছু ধন্যবাদ প্রাপ্য। আর সে ব্যাপারে আমি অকৃপণ। 

Sunday, 27 April 2025

 গরম যে কি নিদারুণ,  তা আজ হাড়ে হাড়ে মালুম হল। আমাদের ছোট্ট গ্রুপের বন্ধুদের আমনে সামনে হয় নি বহুদিন। আজ মুলতঃ সুজিতের অনুপ্রেরণা আর উদ্যোগে একটা আসর বসেছিল অরুণের বাড়ীতে,  নাকতলায়। মেট্রো চালু হওয়ায় আজ বহু দুরই কাছের হয়েছে। যে নাকতলা আমাদের নাগালের বাইরে ছিল তা আজ ঢিলছোড়া দুরত্বে। তবে মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত যেতেই ঘেমে নেয়ে দস্তুর। যদিও আমি কাব্যরসিক নয় তবু সব চোখা চোখা কবিতা অনর্গল মনে এল বাল্মিকীর কায়দায়। দারুণ অগ্নিবাণে রে,  পঞ্চশরে বিদ্ধ করেছ একি মোরে সন্যাসী,  এসো হে বৈশাখ এস এস ইত্যাদি ইত্যাদি। আরও সব রৌদ্রদগ্ধ কবিতা। সবই আমাদের সুরের গুরু কবিগুরুর।  যতই কষ্ট হোক, তিনি যে আমাদের তৃষ্ণার জল। আর তার শুরুও যে এই বৈশাখে৷ আর আমিও তো এসে পরেছি, এই বৈশাখেই। Accidental Prime minister  এর মত আমিও একজন by default কবি। আজ্ঞে, ভুলে যাবেন না, আমারও জন্ম বলুন,চাই আবির্ভাব, তাও এই ২৫ শে বৈশাখেই। তাই বৈশাখের এই পঞ্চ কেন শত সহস্র শর নিয়ে আমার অভিযোগ বা অনুযোগের কোন কারণই থাকতে পারে না, থাকা উচিতও নয়। 


যাক, শেষমেশ এসে তো পরলাম মাষ্টারদায়। মানে অরুণের এলাকায়। কিন্তু ওর বাড়ী যেতেও এক বিপত্তি।  হাটা লাগালাম উল্টো পথে। নাকতলার বদলে কানতলার দিকে। আমি লোকটাই এই রকম, সবসময় উল্টো পথেই হেটে চলেছি সেটা যখন বুঝলাম তখন বেশ অনেকটাই পথ পেরিয়ে এসেছি।  


অরুণের বাড়ীতে এসে অর্ভ্যথনা জানাল এলিসিয়াই। এলেসিয়া কে? কি করেই বা বলি? ওর আসল পরিচয় জানাতে, অরুণের ভারী আপত্তি। তা ছাড়া অরুণের বউ এখন দেশের বাইরে। আমেরিকায় মেয়ের বাড়ীতে।  ও বাড়ীতে একা। তাও বেশীক্ষণ দ্বন্ধ রাখা উচিৎ নয়, ভীষণই অনুচিৎ। যাচ্ছেতাই ভাবছেন নিশ্চয়ই।  তবে অরুণ ভারী ভাল ছেলে। আমি চোখ বুজে ওর ক্যারেকটার সার্টিফিকেট দিতেই পারি। এলেসিয়া আসলে একটা মেয়ে। দেশী নয়, এংলোও হতে পারে।  তবে কে ও? অরুণ আবার কুকুর বলাটা একদম পছন্দ করে না। নিরাশ হলেন? একটা রগরগে কেচ্ছার আশা করেছিলেন? এই বয়সে ওসব চিন্তা বাদ দিন। আমি অবশ্য কুকুর না বলে, সারমেয়ই বলি। এর মানে নিশ্চয়ই জানেন। না জানলে, অভিধানের পাতা উল্টোন।


এবার কেমন কাটল সারা দুপুরটা?  বিন্দাস বিন্দাস। বন্ধুসঙ্গে নরকবাসও, স্বর্গাদপী গরীয়সী।  আমরা স্বর্গ আর নরকের মধ্যে শাটল চালালাম যথারীতি।  সঙ্গে অবশ্যই ছিল চিল্ড চিল্ড বিয়ার আর অরুণের অসামান্য কালিনারি এক্সপার্টিসের অভিজ্ঞান মুর্গীর পাতলা ঝোল, রাইস আর আমের টক। দারুণ জমজমাট একটা দুপুর কাটল আজ। ১৪ বোতল বিয়ার কোথা দিয়ে যে উড়ে গেল তা কেই বা জানে। আজ বলরাম ছিল at his best. সারাক্ষণ স্ট্রেইট ব্যাটে খেলে গেল। আর যা সব জোকস বলে, তা ভেবেও কান লাল হয়ে যাবে। 


আমার কুম্ভমেলায় বিছরে যাওয়া ভাই জানে জিগর রাভিন্দার এলো দেরিতে, কিন্তু পলকেই আমাদের ওভারটেক করে গেল বিয়ারের হিসাবে। সব কথা বলা যাবে না। বলরাম লজ্জা পাবে আর ফেবুও হয়ত দেবে আমায় ব্লক করে। জানার ইচ্ছে যদি হয় তবে আমাদের ডাকুন,  অনুপান অবশ্যই  chilled Beer. আর কোন শর্ত নেই।





Monday, 14 April 2025

চড়ক

  ঘুরে এলাম চড়কের মেলা। মেলা বসে সারা বীডন স্ট্রীট  ধরে,ছাতুবাবু লাটুবাবুর বাড়ী আর বাজারের সামনে থেকে হেঁদোর মুখ অব্দি। সারা বিডন স্ট্রিট জুড়েই মেলার বিকিকিনি।  মেলা কিন্তু এই একদিনই।  তবে চলবে সারারাত। দারুণ কালারফুল, রাস্টিক আর ভাইব্রেটিং। আর হবে নাই বা কেন।  বেঙ্গল রেঁনেসা'র গর্ভগৃহ তো এইসব অঞ্চলই। ভীষণ একটা ওল্ড ওয়ার্ল্ড চার্ম জুড়ে থাকে এই সব কিছু ঘিরে৷ আর যা কিছু পুরনো তাই যে ভীষণ মনকাড়া।  তাই তো বারবার ফিরে ফিরে আসি এই সব জায়গায়। পুরনো কলকাতা তার যূগপুরুষরা৷ রামমোহন, ঈশ্বরচন্দ্র, রবি ঠাকুর, বিবেকানন্দ, বঙ্কিমচন্দ্র আরও অসংখ্য গুণীজন যেন চলতে থাকে আমার সাথে। আমার তো ভীষণ ফ্যাসসিনেটিং লাগে।

এই চড়কের মেলা ২০০ বছর পেরিয়ে গেছে। ভাবা যায়? ওয়াজেদ আলি থাকলে হয়ত আর একবার বলতেন 'সেই ট্রাডিশন সমানে চলছে'। হ্যাঁ, কিছু কিছু জিনিস তো একইরকমভাবে চলছে।  আর চলবেও। এগুলো শ্বাশত।  আর শিব যে শ্বাশত সুন্দর। তার কোন পরিবর্তন নেই। 


এ উৎসব শিবের। আর হিন্দু সমাজে শিবের এক বিশেষ স্থান। শিবের পরিচয় দেবাদিদেব মহাদেব  নামে। নেশা ভাং করেন আর এখানে ওখানে পরে থাকেন। তাও মেয়েমহলে শিবের খুব উচ্চাসন। সব মেয়েরাই শিবের মত বর চান। কিন্তু দেখুন আদপে তা কিন্তু নয়। আমরা বন্ধুরা যদি নমাসে ছমাসে একটু শিবকে অনুসরণ করে নেশাভাং করি তা নিয়েই দক্ষযজ্ঞ হয়ে যায়। বুঝুন শিবভক্তির হাল। শিবের পৌরাণিক কাহিনি অল্প-বিস্তর সবার জানা। তবে আপনারা কেউ কি আমিশ ত্রিপাঠীর 'Immortals of Meluha' পড়েছেন? তাতে শিব কিন্তু এক উপজাতীয় বীর। তিব্বতের ওপাড় থেকে হিমালয় পেরিয়ে কাশ্মীরের ওপর দিয়ে এসেছেন সিন্ধু উপত্যকার এক রাজার আমন্ত্রণে তার রাজত্ব রক্ষার্থে।  সেই রাজাই দক্ষ আর রাজকন্যে পার্বতী। মাঝে বিস্তর ঘটনার ঘনঘটা।  তাতে শিবের বীরত্ব,মহত্ত্বই প্রতিষ্ঠিত।  পড়তে বেশ লাগে। হাতে পেলে পড়ে নেবেন বইটা। 


যাহোক, চড়কের মেলা কিন্তু একই চেহারায়৷ সেই গ্রাম্য আদলের মেলা আর চড়কের বাই বাই ঘোরা৷ এর মধ্যে একজায়গায় খুব ভীড় দেখে দাঁড়িয়ে গেলাম। ভীড় ঠেলে দেখি আমার ভীষণ প্রিয়, প্রিয়দর্শিনীরা সব আমার অপেক্ষায়ই যেন রসের সাগরে ভাসছেন ।  কি করলাম? কিছুই করতে পারলাম না। শুধু ছবি তুলে ফিরে এলাম। তারা কারা, শুনবেন?  জিলাপি, পান্তুয়া, ক্ষীরের চপ, বালুসাই ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে তাদের ছবি  তুলে এনেছি আপনাদেরই জন্য। ছবি দেখেই বুঝবেন কি মোহময়ী তাদের আবেদন,সঙ্গে সঙ্গে আমার সংযম কেও সাবাসী দিতে ভুলবেন না।







Monday, 7 April 2025

 কলকাতার কাছেই


কোভিডের আগে পরে দুবার গেঁয়োখালি গিয়েছি।  আমার খুব প্রিয় জায়গা। অবশ্য ভালো তখনই লাগে যখন সঙ্গীসাথী মনোমত হয়। আজ ফেসবুক ভাসিয়ে তুললো আমার সেই প্রথমবার গেঁয়োখালি ঘোরার কথা। পড়ে মন্দ লাগলো না। তাই দিলাম আর একবার পোস্ট করে।


গেঁয়োখালির কড়চা


অশোক রায় 


সামতাবেড়ের শরৎবাবুর গ্রামের মুগ্ধতা কাটতে না কাটতেই ননীর ডাক এল গেঁয়োখালি যাবার৷ এর আগে শরৎবাবুর রুপনারায়নের কোলে তার গ্রাম আর রুপনারায়নের রুপে আমি মজে গেছি৷ ওই যে কে যেন লিখে গেছেন না, রবিবাবু নিশ্চয়, " রুপনারানের কুলে জেগে উঠিলাম, জানিলাম এ জগৎ সত্য নয়"! আমারও ওইরকমই একটা উপলব্ধি হল। আগে গ্রাম সম্মন্ধে আমার নাক সিঁটকানো একটা  ব্যাপার স্যাপার ছিল। সেটা একদম কেটে গেছে। তাই গেঁয়োখালি যতই গেঁয়ো হোক না কেন। আমার কোন আপত্তি নেই তার সঙ্গ করতে। তাই রাজী হতে সময় নষ্ট করিনি মোটেই।  এ গ্রাম আবার যেখানে সেখানে নয় গঙ্গা, রুপনারায়ন আর সমুদ্রের ত্রিবেণী সঙ্গমে। তাছাড়া গেঁয়োখালি নিয়েই আমার একটা মনখারাপ ছিলই। আপনার সবাই জানেন, একটা বাচ্চা ডলফিন তার সঙ্গ ছেড়ে এসে পরেছিল গেঁয়োখালি নদীতে। বাঁচান যায়নি। কি করেই বা বাঁচে সমুদ্র থেকে এসে এই ছোট নদীতে?


যা হোক, শেষমেশ উঠেই পড়লাম হলদিয়া লোকালে। লোকাল শুনে ভুরু কোঁচকাবেন না। এ লোকাল কিন্তু পক্ষীরাজকেও হার মানায়। কিছুটা দৌড়ে আর  উড়ে পৌঁছে দিল সতীশ সামন্ত হল্টে। এই হল গেঁয়োখালির স্টেশন। এখান থেকে টুকটুক। আমরা ৬ জন। ও হো সবার সাথে আপনাদের পরিচয় করানো হয় নি। আমাকে তো চেনেনই।  একজন আম আদমি।  আজকাল আম আদমি কথাটা বেশ খায় পাবলিকে। আম আদমি কিন্তু বেশ শক্তি ধরে। তাই আমাকেও হেলাফেলা করবেন না। আর আমাদের দল মানে "ননীগোপালের দল" যার আমরা লাইফ মেম্বার তার সেনাপতি"ননী"। আছে তরুণ যেমন লম্বা তেমনি চওড়া আর যাত্রাদলের রাবণের মত পিলে চমকানো গলার আওয়াজ আর এক এক চুমুকে সুরা কি সমুদ্র শুষে নেবার অসীম ক্ষমতা। আছে সুব্রত। ভারী হিউমারিস্ট ছেলে, আর বড়ো শিব, চন্দ্রনাথ।  চন্দ্রনাথ এর পরিচয় এখন উহ্যই থাক। এক লাইনে শেষ হবার নয়, ওর পরিচয় দেব যথাসময়ে, যথাস্থানে।  গৌতম কে সবাই তো আপনারা চেনেনই। আমরা সঙ্গী ছিলাম টাইগার্স নেস্টের চুড়োয় ওঠার সময়। ভারী ভালোমানুষ।  বারবার আমায় তার রাঁচীর বাড়ীতে যেতে বলেন। এবার যেতেই হবে। পাগলা গারদ বলে এতদিন এড়িয়ে গিয়েছি। এবার যাবোই যাব।


সবার পরিচয় তো পেলেন, এবার সামনে এগোই।  টুকটুকে করে টুকটুক করে পৌঁছে গেলাম হলদিয়া পোর্ট অথোরিটির গেষ্ট হাউসে। দারুণ ঘর, দারুন লোকেশন আর দারুণ দারুন ব্যাবস্থা।  এত সব দারুণ যখন, দারু কি অনুপস্থিত থাকতে পারে। ননীর এ সব ব্যাপারে ভারী উঁচু নজর। একদম ব্লু ক্যাটাগরির ব্যবস্থা। সঙ্গে মাছ, সোহাগি আঁচে ভাজা, ওপরে সোনালি আর ভেতরে নরম অনাস্বাদিত স্বাদ। এই পর্ব চলল যেমন চলে। এসব বলে বোঝানো যাবে না। যে জন জানহ 

 করহ সন্ধান। দুপুরেও হল জম্পেশ খাওয়া দাওয়া। তারপর সেলিমের টুকটুকে লঞ্চ ঘাট আর লঞ্চে চেপে গাদিয়াড়া। গাদিয়ারা লোকে কেন যে যায়? হতাশ হতে হল এর ছিরি দেখে। 

ফিরে এসে আবার আড্ডা আবার মৌতাত। বেশ জমজমাট আড্ডা চলল রাত পর্যন্ত।  রাতে দেশী মুরগীর পাতলা ঝোল।  আর কি চায় জীবনে?  এইরকম গড়িয়ে গড়িয়ে রসেবশে কেটে যাক জীবন। চাই নে মা আমি রাজা হতে।


এর পর?  এর পর শিব্রামের সেই বিখ্যাত উক্তির মত " ঘুম,  ঘুম থেকে উঠে বিশ্রাম আর রাবড়ি। " আমাদেরও চায়ের পর রাবড়ি(?) দিয়ে শুরু। বাইরে এলে আমরা ঠিক সকাল সন্ধ্যে মানি না। চলে মানে চলতেই থাকে রসে আর বশেও। বাড়াবাড়ি একদম নয়। পরের দিন অনেক কিছু দেখলাম টুক টুক করে। সুন্দর সবুজ গ্রাম।  গ্রাম আর সেই গ্রাম নেই চকচকে রাস্তা। মানুষজন, ঘরবাড়ি সবই বেশ চকচকে৷ গ্রামের মানুষেরা বেশ ভালই আছেন, সচ্ছল, সচ্ছন্দ। বেশ ভাল লাগল দেখে। চার্চ, রামকৃষ্ণ মিশন, মন্দির, মসজিদ সব বেশ আছে পাশাপাশি।  ফেরার পথে মহিষাদল।  মহিষাদল রাজবাড়ী তো সবাই দেখেছেন। কিন্তু খেয়েছেন কি "সুরভী " তে? খাবেন একবার। আমি একটু খাওয়ার গপ্প করতে ভালবাসি। কি খেলাম শুনুন। ভাত তো বটেই সঙ্গে করলা ভাজা, মুগের ডাল,আলুভাজা, বেগুনের ঝাল(অনবদ্য), পাঁচমিশেলি সব্জী, পুকুরের চিংড়ি অনবদ্য স্বাদ, নরম আর মাথাভর্তি ঘিলু, চাটনি, পাঁপড় আর মিষ্টি মিষ্টি দই। ভাল না? যা হোক সব ভালোরই শেষ থাকে। যা যা বলা হল না দেখে নেবেন ছবিতে।  ফেরা সেই পক্ষীরাজেই। দু'ঘন্টায় হাওড়া। শেষ হয়েও হবেনাকো শেষ। সামনের শুক্কুরবার আবার শুরু। এবার লম্বা ট্যুর। বিরাট দল। দল সেই একই। আমাদের আস্থা "ননীগোপালের দলেই"!






















Thursday, 3 April 2025

বারো ঘর এক উঠোন

 বারো ঘর এক উঠোন


সত্যি কথা বলতে কি এখন পর্যন্ত এই লক ডাউনের কোনো বুরা আসার পড়ে নি আমাদের উপর। সময় কেটে যাচ্ছে বেশ নতুন ন



তুন পথে/তরিকায়। ফুলবাগানের এই বাড়ীতে আমাদের তিন ঘরের বাস। সবাই সম্পর্কিত।  বেশ মেলামেশা আছে নিজেদের মধ্যে। কাজ নেই তো কি হয়েছে? অকাজ বা যে কাজের হদিস আগে পাওয়া যায় নি, তাই হচ্ছে ঝমঝমিয়ে।  চায়ে পে চর্চা, গানের আসর এ তো নিত্যিদিন হচ্ছে দুবেলায়। গান সে যে যাই গাক, গাইছে কিন্তু গলা ছেড়ে। সে ভালবাসায় না ভয়ে ঠিক বলতে পারিনে। এই উপলক্ষে নতুন নতুন প্রতিভাও সামনে আসছে।

রিম্পা আমার ছেলের বউ ভাল নাচতে পারে তাই জানতাম এতদিন।  আজ দেখলাম সে ভালো হাজামও। আজ দুই মেসোর মাথা মুড়িয়ে মানে চুল কেটে ভাল রোজগার করেছে৷ একদম নভিসের কাজ নয়। পাক্কা ওস্তাদি কাজ৷ সেলেব্রিটি  নাপিত হাবিব না হলেও ইরফানকে টেক্কা দেবে। আজ ওর ভাল রোজগার হয়েছে। মেসোরা খুশী হয়ে ভালই দস্তুরখান করেছে৷ আমি তো বলব আশরফীই পেয়েছে। আজ সেই দস্তুরী দিয়ে বসবে ফুচকার আসর। সে আসরে নেমন্তন্ন আপনাদের সবার৷ আসতে তো পারবেন না। ফেসবুকে সে ছবি পোস্টিয়ে দেব। খেয়ে বলবেন কিন্ত, কেমন হয়েছে। ইনসাফি ঔর হাজামত কি ফল মিঠাহি হোতা হায়।😁

অলকাদিদি

 টুকরো টুকরো ছবি


আজকাল অনেক ছবিই ভেসে ওঠে মনের মধ্যে। অবাক লাগে, সে কবেকার কথা। তবু এত স্পষ্ট এত জীবন্ত। মনে হয় দূরের না খুব কাছের যেন কালকের কথা।


প্রথম ছবি


আমার তখন ছ বছর বয়েস। আমার ভাইয়ের সবে জন্ম হয়েছে। আমার দীর্ঘদেহী বাবা আমাকে কোলে নিয়ে আমাদের জিয়াগঞ্জের বাড়ীর বারান্দার পায়চারি করছে। এত স্পষ্ট এত জীবন্ত মনে হয় যেন বাবার স্নেহের পরশ আজও পাচ্ছি সারা দেহে মনে।


দ্বিতীয় ছবি


তখন আমার বয়স হয় ৯ বা ১০! বাবার সাথে গিয়েছি আমাদের ঢুলিপাহাড়ীর কাছারি বাড়ীতে। ঢুলিপাহাড়ী সাঁওতাল পরগণায় আমাদের পৈতৃক ভদ্রাসন কাঞ্চনতলা থেকে ২০/২৫ মাইল দুরে। বিশাল এলাকা জুড়ে আমাদের জমিদারি এস্টেট ছিল্। ঢুলিপাহাড়ী খুব সুন্দর ৷ চারিদিকে পাহাড়, তার মাঝে বিস্তৃর্ন চাষ জমি। পাহাড়,ঝরণা৷ সেই ঝরনায় ছোট ছোট মাছও ধরেছিলাম,বেশ মনে পড়ে। বিকেলে এলেন এক সাঁওতাল সর্দার। শালপ্রাংশু দেহ যাকে বলে, সেরকমই। অনেককে সঙ্গে নিয়ে, সবাই সাঁওতাল।  এসেছে তাদের রাঙ্গাবাবুকে দন্ডবত করতে। সেই সাঁওতাল সর্দারের চেহারা আজও স্পষ্ট মনে পড়ে। মনে পড়ে তাদের সাষ্টাঙ্গ প্রণাম তাদের রাঙাবাবু,আমার বাবাকে।।


তৃতীয় ছবি


আমার দিদি অলকা। মাত্র ১৬ বছরে চলে গেছে। আমি তখন মাত্র ১২! ও যেদিন চলে গেল, সেদিনের কথাও খুব মনে পড়ে। আমাদের পাড়ার ডাক্তার বাবু কালুকাকার চিকিৎসায় ছিল



।টাইফয়েড৷ রিলাপ্স করল। চারদিনের মাথায়। ও বুঝতে পেরেছিল, আগের দিনই।  মা আমি আর বাঁচব না বলে ওর আর্ত চীৎকার আজও  আমার চোখ ঝাপসা করে দেয়। শেষ সময়ে এলেন রেণুকাকা। কবিরাজি করতেন।  অলকার আর নাড়ী পাওয়া যাচ্ছে না। তার সেই উচ্চ গলার নিদান আজও আমাকে কাঁপিয়ে দেয়।  আমার দীর্ঘদেহী কঠোর কঠিন  পিতাকে প্রথম দেখলাম কাঁদতে। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারি নি। হাঁটতে শুরু করলাম সকাল সন্ধ্যে রাত্রি কেটে গেল। পেরিয়ে এলেম অনেক অনেক পথ৷ অলকার সাথে আর দেখা হয় নি।