কলকাতার কাছেই
কোভিডের আগে পরে দুবার গেঁয়োখালি গিয়েছি। আমার খুব প্রিয় জায়গা। অবশ্য ভালো তখনই লাগে যখন সঙ্গীসাথী মনোমত হয়। আজ ফেসবুক ভাসিয়ে তুললো আমার সেই প্রথমবার গেঁয়োখালি ঘোরার কথা। পড়ে মন্দ লাগলো না। তাই দিলাম আর একবার পোস্ট করে।
গেঁয়োখালির কড়চা
অশোক রায়
সামতাবেড়ের শরৎবাবুর গ্রামের মুগ্ধতা কাটতে না কাটতেই ননীর ডাক এল গেঁয়োখালি যাবার৷ এর আগে শরৎবাবুর রুপনারায়নের কোলে তার গ্রাম আর রুপনারায়নের রুপে আমি মজে গেছি৷ ওই যে কে যেন লিখে গেছেন না, রবিবাবু নিশ্চয়, " রুপনারানের কুলে জেগে উঠিলাম, জানিলাম এ জগৎ সত্য নয়"! আমারও ওইরকমই একটা উপলব্ধি হল। আগে গ্রাম সম্মন্ধে আমার নাক সিঁটকানো একটা ব্যাপার স্যাপার ছিল। সেটা একদম কেটে গেছে। তাই গেঁয়োখালি যতই গেঁয়ো হোক না কেন। আমার কোন আপত্তি নেই তার সঙ্গ করতে। তাই রাজী হতে সময় নষ্ট করিনি মোটেই। এ গ্রাম আবার যেখানে সেখানে নয় গঙ্গা, রুপনারায়ন আর সমুদ্রের ত্রিবেণী সঙ্গমে। তাছাড়া গেঁয়োখালি নিয়েই আমার একটা মনখারাপ ছিলই। আপনার সবাই জানেন, একটা বাচ্চা ডলফিন তার সঙ্গ ছেড়ে এসে পরেছিল গেঁয়োখালি নদীতে। বাঁচান যায়নি। কি করেই বা বাঁচে সমুদ্র থেকে এসে এই ছোট নদীতে?
যা হোক, শেষমেশ উঠেই পড়লাম হলদিয়া লোকালে। লোকাল শুনে ভুরু কোঁচকাবেন না। এ লোকাল কিন্তু পক্ষীরাজকেও হার মানায়। কিছুটা দৌড়ে আর উড়ে পৌঁছে দিল সতীশ সামন্ত হল্টে। এই হল গেঁয়োখালির স্টেশন। এখান থেকে টুকটুক। আমরা ৬ জন। ও হো সবার সাথে আপনাদের পরিচয় করানো হয় নি। আমাকে তো চেনেনই। একজন আম আদমি। আজকাল আম আদমি কথাটা বেশ খায় পাবলিকে। আম আদমি কিন্তু বেশ শক্তি ধরে। তাই আমাকেও হেলাফেলা করবেন না। আর আমাদের দল মানে "ননীগোপালের দল" যার আমরা লাইফ মেম্বার তার সেনাপতি"ননী"। আছে তরুণ যেমন লম্বা তেমনি চওড়া আর যাত্রাদলের রাবণের মত পিলে চমকানো গলার আওয়াজ আর এক এক চুমুকে সুরা কি সমুদ্র শুষে নেবার অসীম ক্ষমতা। আছে সুব্রত। ভারী হিউমারিস্ট ছেলে, আর বড়ো শিব, চন্দ্রনাথ। চন্দ্রনাথ এর পরিচয় এখন উহ্যই থাক। এক লাইনে শেষ হবার নয়, ওর পরিচয় দেব যথাসময়ে, যথাস্থানে। গৌতম কে সবাই তো আপনারা চেনেনই। আমরা সঙ্গী ছিলাম টাইগার্স নেস্টের চুড়োয় ওঠার সময়। ভারী ভালোমানুষ। বারবার আমায় তার রাঁচীর বাড়ীতে যেতে বলেন। এবার যেতেই হবে। পাগলা গারদ বলে এতদিন এড়িয়ে গিয়েছি। এবার যাবোই যাব।
সবার পরিচয় তো পেলেন, এবার সামনে এগোই। টুকটুকে করে টুকটুক করে পৌঁছে গেলাম হলদিয়া পোর্ট অথোরিটির গেষ্ট হাউসে। দারুণ ঘর, দারুন লোকেশন আর দারুণ দারুন ব্যাবস্থা। এত সব দারুণ যখন, দারু কি অনুপস্থিত থাকতে পারে। ননীর এ সব ব্যাপারে ভারী উঁচু নজর। একদম ব্লু ক্যাটাগরির ব্যবস্থা। সঙ্গে মাছ, সোহাগি আঁচে ভাজা, ওপরে সোনালি আর ভেতরে নরম অনাস্বাদিত স্বাদ। এই পর্ব চলল যেমন চলে। এসব বলে বোঝানো যাবে না। যে জন জানহ
করহ সন্ধান। দুপুরেও হল জম্পেশ খাওয়া দাওয়া। তারপর সেলিমের টুকটুকে লঞ্চ ঘাট আর লঞ্চে চেপে গাদিয়াড়া। গাদিয়ারা লোকে কেন যে যায়? হতাশ হতে হল এর ছিরি দেখে।
ফিরে এসে আবার আড্ডা আবার মৌতাত। বেশ জমজমাট আড্ডা চলল রাত পর্যন্ত। রাতে দেশী মুরগীর পাতলা ঝোল। আর কি চায় জীবনে? এইরকম গড়িয়ে গড়িয়ে রসেবশে কেটে যাক জীবন। চাই নে মা আমি রাজা হতে।
এর পর? এর পর শিব্রামের সেই বিখ্যাত উক্তির মত " ঘুম, ঘুম থেকে উঠে বিশ্রাম আর রাবড়ি। " আমাদেরও চায়ের পর রাবড়ি(?) দিয়ে শুরু। বাইরে এলে আমরা ঠিক সকাল সন্ধ্যে মানি না। চলে মানে চলতেই থাকে রসে আর বশেও। বাড়াবাড়ি একদম নয়। পরের দিন অনেক কিছু দেখলাম টুক টুক করে। সুন্দর সবুজ গ্রাম। গ্রাম আর সেই গ্রাম নেই চকচকে রাস্তা। মানুষজন, ঘরবাড়ি সবই বেশ চকচকে৷ গ্রামের মানুষেরা বেশ ভালই আছেন, সচ্ছল, সচ্ছন্দ। বেশ ভাল লাগল দেখে। চার্চ, রামকৃষ্ণ মিশন, মন্দির, মসজিদ সব বেশ আছে পাশাপাশি। ফেরার পথে মহিষাদল। মহিষাদল রাজবাড়ী তো সবাই দেখেছেন। কিন্তু খেয়েছেন কি "সুরভী " তে? খাবেন একবার। আমি একটু খাওয়ার গপ্প করতে ভালবাসি। কি খেলাম শুনুন। ভাত তো বটেই সঙ্গে করলা ভাজা, মুগের ডাল,আলুভাজা, বেগুনের ঝাল(অনবদ্য), পাঁচমিশেলি সব্জী, পুকুরের চিংড়ি অনবদ্য স্বাদ, নরম আর মাথাভর্তি ঘিলু, চাটনি, পাঁপড় আর মিষ্টি মিষ্টি দই। ভাল না? যা হোক সব ভালোরই শেষ থাকে। যা যা বলা হল না দেখে নেবেন ছবিতে। ফেরা সেই পক্ষীরাজেই। দু'ঘন্টায় হাওড়া। শেষ হয়েও হবেনাকো শেষ। সামনের শুক্কুরবার আবার শুরু। এবার লম্বা ট্যুর। বিরাট দল। দল সেই একই। আমাদের আস্থা "ননীগোপালের দলেই"!





















No comments:
Post a Comment