টুকরো টুকরো ছবি
আজকাল অনেক ছবিই ভেসে ওঠে মনের মধ্যে। অবাক লাগে, সে কবেকার কথা। তবু এত স্পষ্ট এত জীবন্ত। মনে হয় দূরের না খুব কাছের যেন কালকের কথা।
প্রথম ছবি
আমার তখন ছ বছর বয়েস। আমার ভাইয়ের সবে জন্ম হয়েছে। আমার দীর্ঘদেহী বাবা আমাকে কোলে নিয়ে আমাদের জিয়াগঞ্জের বাড়ীর বারান্দার পায়চারি করছে। এত স্পষ্ট এত জীবন্ত মনে হয় যেন বাবার স্নেহের পরশ আজও পাচ্ছি সারা দেহে মনে।
দ্বিতীয় ছবি
তখন আমার বয়স হয় ৯ বা ১০! বাবার সাথে গিয়েছি আমাদের ঢুলিপাহাড়ীর কাছারি বাড়ীতে। ঢুলিপাহাড়ী সাঁওতাল পরগণায় আমাদের পৈতৃক ভদ্রাসন কাঞ্চনতলা থেকে ২০/২৫ মাইল দুরে। বিশাল এলাকা জুড়ে আমাদের জমিদারি এস্টেট ছিল্। ঢুলিপাহাড়ী খুব সুন্দর ৷ চারিদিকে পাহাড়, তার মাঝে বিস্তৃর্ন চাষ জমি। পাহাড়,ঝরণা৷ সেই ঝরনায় ছোট ছোট মাছও ধরেছিলাম,বেশ মনে পড়ে। বিকেলে এলেন এক সাঁওতাল সর্দার। শালপ্রাংশু দেহ যাকে বলে, সেরকমই। অনেককে সঙ্গে নিয়ে, সবাই সাঁওতাল। এসেছে তাদের রাঙ্গাবাবুকে দন্ডবত করতে। সেই সাঁওতাল সর্দারের চেহারা আজও স্পষ্ট মনে পড়ে। মনে পড়ে তাদের সাষ্টাঙ্গ প্রণাম তাদের রাঙাবাবু,আমার বাবাকে।।
তৃতীয় ছবি
আমার দিদি অলকা। মাত্র ১৬ বছরে চলে গেছে। আমি তখন মাত্র ১২! ও যেদিন চলে গেল, সেদিনের কথাও খুব মনে পড়ে। আমাদের পাড়ার ডাক্তার বাবু কালুকাকার চিকিৎসায় ছিল
।টাইফয়েড৷ রিলাপ্স করল। চারদিনের মাথায়। ও বুঝতে পেরেছিল, আগের দিনই। মা আমি আর বাঁচব না বলে ওর আর্ত চীৎকার আজও আমার চোখ ঝাপসা করে দেয়। শেষ সময়ে এলেন রেণুকাকা। কবিরাজি করতেন। অলকার আর নাড়ী পাওয়া যাচ্ছে না। তার সেই উচ্চ গলার নিদান আজও আমাকে কাঁপিয়ে দেয়। আমার দীর্ঘদেহী কঠোর কঠিন পিতাকে প্রথম দেখলাম কাঁদতে। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারি নি। হাঁটতে শুরু করলাম সকাল সন্ধ্যে রাত্রি কেটে গেল। পেরিয়ে এলেম অনেক অনেক পথ৷ অলকার সাথে আর দেখা হয় নি।


No comments:
Post a Comment