Saturday, 14 December 2019

এবারে সিটিং- সিটঙে

আজ আমরা,  আমি, সুজিত আর আমাদের সবার দাদা সুব্রতদা চলেছি সিটং এর পথে। আমাদের লীডার ননী  দলবল সমেত গত কালই রওনা দিয়েছে দার্জিলিং মেলে। ট্রেনে আমাদের জায়গা মেলেনি, তাই এই বায়ুমার্গে সফর। আমার আবার ট্রেনই পছন্দ বেশী। জানলার ধারে বসে ভোরের কুয়াশা মাখা সবুজে সবুজ এই বাংলার ভারী মোহময়ী রুপ। মনে হয় নেমেই পড়ি কোন এক অজানা স্টেশনে, আর জীবনের বাকী দিনগুলো কেটে যাক এই মায়াবী লোকেই কোন এক রসকলি বোষ্টুমীর সাথে অচেনা একতারার সুরে। 😁

তবে ট্রেন নয় চলেছি এয়ার এশিয়ায় । এখানে সেই অবসর নেই। তবে কল্পনার ফানুস কি এখানেও ওড়ানো যায় না? বেশ যায়। চলুন তবে যাই এন্ড্রোমিডা নীহারিকা। সেখানে কোন রাজকুমারী হয়ত যুগ যুগান্ত ধরে অপেক্ষায় আছে আমারই জন্যে। অনেকদিন আগে এক সাইন্স ফিকশন পড়েছিলুম, আমার ছোটবেলায়।  তাতে এইরকমই এক ঘটনা ছিল। পৃথিবীর এক কোনে, কোন এক বেচারি এইরকম প্রেমে পড়েছিল  এক রাজকন্যের যে কিনা থাকে কয়েক কোটি আলোকবর্ষ দুরে।আমারও সেইরকম বদভ্যাস । এইরকম স্বপ্নে স্বপ্নে ঘোরা। কোনটা সত্যি,কোনটা স্বপ্ন সে হিসেব কি রাখা যায়? কেমন সব মিলেমিশে যায়। স্বপ্নও যে বড্ড বেশি সত্যি আমার জীবনে। এইজন্যেই হয়ত আমি এখনো বড়ই হইনি। সবাইকেই যে বড় হতেই হবে এমন দিব্যি কে কবে দিয়েছে? আমি না হয় বালক হয়েই রইলাম। আমাদের গুরু রবিশঙ্করও তাই বলেছেন, বালক বন যাও। বেকসুর খালাস। কেউ আটকাবে না, জীবন চলবে তরতর করে।।  এতে কিন্তু ভারী মজা। কোন কিছুই আটকাতে পারবে না। চাপমুক্ত জীবন বস। কোপারনিকাসের একটা কবিতা আজো মনে পড়ে "আকাশ মাপি আমি, ছায়ার পথে পথে, মন চলে যায় আকাশ পথে, আমি পৃথিবীতে। "
এবার কিন্তু আকাশ থেকে নেমে পড়ার সময় হয়েছে। নীচে আমাদের দলবল দাঁড়িয়ে আছে। এবার চলব দলবেঁধে সিটং এর দিকে। সীটং এ বেজায় শীত। -৭ ডিগ্রি।  তাই অনিচ্ছা স্বত্বেও অনেক ধরাচুড়া গায়ে চাপিয়েছি। তবে মনে হয়না সেরকম কোন অসুবিধে হবে। এর আগেও কল্পায় গিয়েছি -৫ ডিগ্রিতে। বুঝিনি কিছু।

সিটং কিন্তু ভারী সুন্দর। 
 কমলালেবুর বাগান, কাঞ্চনজঙ্ঘা,দিগন্তে জোড়া বিশাল উপত্যকা,শীতল বায়ু আর মুক্তপ্রাণ আমরা। সুর আর সুরায় সে লোকও যে দুরের নীহারিকার থেকে কম মনোহারি হবে না সে  আশ্বাস আপনাদের এখনই দিতে পারি। সঙ্গীরা তাড়া দিচ্ছে।আজ  থাক এই পর্যন্তই। পরে ফিরব আবার সব খবর,বেখবর  আর এই কদিনের সব বজ্জাতির আদ্যোপান্ত নিয়ে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন সবাই। আর ঠান্ডা থেকে বাঁচতে বেশী বেশী করে কমলালেবু খান।

Saturday, 23 November 2019











মন চলে নিজ নিকেতনে,
এই সংসার বিদেশে, বিদেশীর বেশে
ভ্রম কেন অকারণে ..

শুনেছি রামকৃষ্ণ দেবের প্রিয় গানের মধ্যে এটি একটি। তা বলে আমাকে তার ভক্তদের মধ্যে ফেলবেন না। উনি ছিলেন ঈশ্বর নামে কোন এক অজানা অস্তিত্বের জন্য পাগল। আমিও প্রায় পাগল তবে সেয়ানা। ঈশ্বরের কোন অস্তিত্ব আমার অভিধানে নেই। আমাদের মাতালও বলতে পারেন। মন মাতাল। কোন এক কস্তুরীর তীব্র সুবাস তাড়িয়ে  নিয়ে চলে। আমাদের মন ইতি উতি ভ্রমে কারণে অকারণে। সংসার নামক যন্ত্রণা সয়না দীর্ঘদিন। তখনই বেড়িয়ে পরি কোন এক দিকশুন্যপু্রের সন্ধানে। রামকৃষ্ণদেবের একটা কথা আমার ভারী প্রিয় সংসারে থাকবে পাকাল মাছের মত। আমরাও সব পাকাল মাছেরই জ্ঞাতিগুষ্টী। মাঝে মধ্যেই পিছলে বেরিয়ে পরি।

আজকেও সেই রকমই এক দিন। আমরা চারমূর্তি আবার পথে। আমাদের নেতৃত্বে আজ প্রফেসর শঙ্কু, চেনেন না? আরে ও আমাদের সুজিত আমাদের ভারী ইয়ারি দোস্ত। সঙ্গে ফেলুদাও যাচ্ছেন। তবে এ ফেলুদা কিন্তু পঞ্জাব তনয় রাভিন্দার পল্টা। এক্কেবারে পঞ্চনদীর তীরে বেণী পাকাইয়া শিরে। ও অবশ্য বেণীটা রাখেনি। এর কাছেই আমি দীক্ষিত।  প্রায় বাঙ্গালী তবে হোবেটাকে এখনও হবে বলতে পারেনি। অব্যর্থ নিশানাবাজ। তবে ইদানিং এক চকিতাহরিণীর বাংলা কবিতার গুতোয় উনি নিজেই ধরাশায়ী। ও রাস্তা মাড়াচ্ছেন না মোটেই।  এবার আর লালমোহনবাবু আসতে পারেননি। শুনেছি উনি ভুটানে ওনার নতুন উপন্যাসের প্লটের সন্ধানে। আমিও ওনার ওখানে যাচ্ছি আর দিন পাঁচেকের মধ্যেই৷ আর এসেছেন প্রফেসর শঙ্কুর বড়দা। ভারী মানী আর দামী লোক। আর আমি নীলু আসল নয় নীললোহিতের ক্লোন। আমার ভারী সাধ ছিল নীলুর মত হবার। তাই আজ সবাই মিলে দিকশুন্যপুরের খোঁজে। আমাদের মধ্যে ভারী মিলমিশ।  আমরা সবাই সুরালোকের বাসিন্দা। সবাই সুরালাপী আর কি। আজ সনঝবেলা আমাদের সুরালাপ যে সুরধ্বনির সৃষ্টি করবে তা নিশ্চিত।  তবে চলুন বেরিয়ে পরি কোন একদিকে। এ কদিন আমার কাজ হবে মহাভারতের সঞ্জয়ের মত। আপনাদের মত সংসারে অন্ধ আঁতুড়জনের জন্য নিয়ে আসব মুক্ত হাওয়া আর মুক্তির আশ্বাস। সঙ্গে থাকুন,চলতে থাকুন।

Friday, 15 November 2019

অরণ্যের দিন রাত্রি

ইদানীং বেশ ঘন ঘন বেড়িয়ে পরা যাচ্ছে। ছোট ছোট ট্যুর। খুব বড় নয়, ৪/৫ দিনের! কাছেপিঠেই। এবার এলেম সীসামারা নদীর পাশে এক রিসর্টে। টংয়ের উপর বাড়ী। লোহার সিড়ি পেরিয়ে অনেকটাই উচুতে।  চারিদিক নিবিড় বনে ঘেরা আর সামনেই ছোট্ট পাহাড়ী নদী, সীসামারা। ঘরের সামনের বারান্দায় বসেই চোখে পড়ে ময়ুরের নাচ, নদীর পার ঘেষে দল বেঁধে তাদের খাদ্য অন্বেষণ । এবারের এই সফরে নদীর এক বিশেষ ভুমিকা। এই নদীর বর্ষায় হয়ত অন্যরুপ। তবে শীতের আগমনে সে যেন তটীনি সম এক সুন্দরী নারী। আমাদের  নারীবর্জিত এই ট্যুরে নারীর স্থান তার সব মাধুরী দিয়ে পরিপুর্ন করে রেখেছে সীসামারা নদী । পান পাত্র উছলি উঠিছে সকাল সন্ধ্যেই।  কচিপাঁঠা থেকে নদীর বোরোলী মাছ নিরন্তর মিটিয়ে যাচ্ছে রসনা। তবু এই বেড়ানোটা একেবারে অন্যরকম। অপার্থিব রকমের কিছু একটা।  আগে এমনটি হয়নি যেন কোন দিনও।

 সম্মোহিত করে রেখেছে আমাদের এই অরণ্য, এই নৈশব্দ, আর পুর্ণিমা চাঁদের আলোস্নাত এই নদী পাহাড় আর অরণ্য।   আমাদের  চন্দ্রাহত করে রেখেছে।  দিনরাত্রি তার সৌন্দর্যেই আমরা রমণীয় হয়ে উঠছি। এই নদীরুপ নারীর  বুকেই আমরা সমর্পন করেছি নিজেদের বারবার  প্রতিদিন।  সব ক্লান্তি ধুয়ে মুছে পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে জীবন। জীবন যেন এখানে  এক অনন্ত রমণ। নদীর সাথে, পাহাড়ের সাথে অরণ্যের সাথে। আমরা  মেতে উঠেছি অনন্তের সাথে ক্লান্তিহীন সঙ্গমে। কে বলে জীবন ক্ষণস্থায়ী? আমরা খুজে পেলাম এমন এক জীবন যা অসীম, অনন্ত মধুময়।







Sunday, 27 October 2019

পন্ডিত উবাচ

এই যে এতটা পথ পেরিয়ে এলুম,বলুন তো কোন জায়গাটা আপনাদের সবচেয়ে প্রিয়। যদি ফিরে যেতে চান  কোথায় যাবেন? আমি নিশ্চিত  আপনারা শতকরা  ১০০ জনই চাইবেন আবার স্কুল জীবনে ফিরে যেতে। কারন মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় তার স্কুল জীবনই আর জীবনের শ্রেষ্ঠ বন্ধুরা সব স্কুল জীবনের চৌহদ্দির মধ্যেই রয়ে গেছে।

আমার স্কুল জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় গেছে, লালবাগের নবাব বাহাদুর  স্কুলের বিশাল গন্ডীর মধ্যে। আমরা সেখানে যেমন সাধারন ঘরের ছেলেরা ছিলুন তেমনি আমাদের বন্ধুরাও ছিল সব একদা নবাব উজীরের ছেলে। কত নাম করব, জামা নবাব, পাপ্পু নবাব,আলিবান,খাস মীরজাফরের উত্তরপুরুষ।  এখনও ওদের পুরনো বাড়ী নেমকখারাম দেউরির কাছেই। এর মধ্যে পাপ্পু ছিল সবথেকে বদ। সব অসভ্য অসভ্য ছড়ার বিরাট ভান্ডার ছিল ওর কাছে। তার থেকে একটাও যদি আপনাদের এখন শোনাতে যায়, ফেসবুক আমাকে নির্বাসন দেবে চিরদিনের মত। বেশ মজা করে স্বপ্নের মত দিন কাটত তখন।

আজও আমি ফিরে ফিরেই লালবাগে যায়। পুরনো বন্ধুরা অনেকেই হারিয়ে গেছে। কিন্তু জামা নবাব যে এখন ছোটে নবাব মুর্শিদাবাদের একইরকম রয়ে গেছে। দিলদার, রংবাহারি। ওর সাথে দেখা হলেই ছোটবেলাটা যেন হুড়মুড়িয়ে ফিরে আসে।
  স্কুলে আমার সবচেয়ে প্রিয়বন্ধু ছিল অপু আর পন্ডিত। অপু শ্যামল আর উজ্জ্বল আর জ্বলজ্বলে দুটো চোখ।  অপুকে নিয়ে অনেকে গল্প আছে সে এখন বলা যাবে না। তারথেকে বরং ছোট্ট একটা গল্প নয় বরং ছোট্ট ঘটনা শুনুন। আমরা তখন লালবাগের সাহানগরে থাকতুম,কুঞ্জবুড়ীর বাড়িতে। আর পন্ডিতদের বাড়ী ছিল ঠিক আমাদের পেছনেই। আর আমাদের সামনেই থাকত তুতুন। ভারী ডাটিয়াল মেয়ে। বেণী দুলিয়ে গটমট করে হেটে যেত আমাদের সামনে দিয়ে। পাত্তাই দিত না। তবে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ সবটাই যে ওর পথের পানে উদগ্রীব হয়ে থাকত,সেকি আর বলার কথা? আমাদের পন্ডিতও কিছু কম ছিলনা।  মেধাবী,রূপবান।  ওর বড্ড বেশি ক্রাশ ছিল (বাংলায় কি যেন বলে মোহগ্রস্ত হয়ত)  তুতুনের উপর।আমরা বন্ধুরা মিলে বন্ধুর সাহায্যে এগিয়ে এলুম। ঠিক হল তুতুনকে চিঠি দেবে পন্ডিত। আশা যাবার পথে তুতুনের হাতে ধরিয়ে দেবে ওর আত্মসমর্পণের জবানবন্দী।  তো সে চিঠি সব কাঁচা মাথার মিলিত উদ্যোগে লেখা হল।  মতিঝিলের মসজিদের  এক ঘরের ছাদে বসে। ওখানে তখন লোকজন কম যেত। পন্ডিতের হাতের লেখা ছিল খুব সুন্দর।  ক্যালিগ্রাফির অলংকরণে লেখা হল প্রেমিক হৃদয়ের জবানবন্দি।  সেই চিঠি পকেটে নিয়ে পণ্ডিত উদভ্রান্তের মত দাঁড়িয়ে থাকত তুতুনের আশা যাবার পথে। সাহসে আর কুলোত না।

তারপর কি হল আমি ঠিক জানিনা।  কেউ বলে পন্ডিত চিঠিও দেবার আগেই তুতুনের হাত ধরে চুমু খেয়ে ছিল। তার উত্তর  এসেছিল চড়ে। আমরা অবশ্য বিশ্বেস করিনি একেবারেই।  বিশেষ করে চুমুখাবার কথাটা। কারন আমাদের মনেও এমন গোপন বাসনাই যে ছিল। তবে এরপরে কিছুদিন ওর টিকিটাও দেখিনি।

এ কাহিনির শেষটা একটু ট্রাজিকই। পন্ডিত ওর বাবা মারা যাবার পর  চলে গিয়েছিল কৃষ্ণনগরের নেদেরপাড়ায়,মামার বাড়ি।  ঘটনাচক্রে, তুতুনের বিয়েও হয়েছিল কৃষ্ণনগরে। দেখা হয়েছিল কোন এক শাড়ির দোকানে কোনদিন।  তুতুন বড়াবড়ই বড় সপ্রতিভ।  পন্ডিতের কোলে ওর ছেলেকে তুলে দিয়ে বলেছিল ' এই তোমার পন্ডিত মামা' আর নিজে শাড়ি পছন্দে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল।

বেচারি পন্ডিত!!!!
লালপরী,নীলপরী আর বাখরখানি বিস্কুট

লালবাগ যারা গেছেন, তারা নিশ্চয়ই পাঁচরাহার মোড় চেনেন। পাঁচরাহা কি নিশ্চয়ই বুঝেছেন। পাঁচ রাস্তার মোড়। এক রাহা চলে গেল ভাগীরথীর পানে যেখানে থাকত ছোটখাটো চেহারার জ্যোতিকণা। ভারী সুন্দর, বিষন্নও যেন। হটাৎ ওর মুখটা ভেসে উঠল মনের কোনে। ভারী দুঃখী মেয়ে। আর এর একদিকে কেল্লা নিজামত।  যার দক্ষিণ দরজা পেরিয়েই আমাদের রাজত্ব। আমাদের আড্ডার জায়গা, রোমান গথিক স্টাইলের প্রাচীরের গায়ে গঙ্গার ধার ঘেষে আমাদের আড্ডা। সামনে সুমহান হাজারদুয়ারী।  সেছিল এক স্বপ্নের দিন। রইল বাকী তিন রাহা। একদিক গেছে হাতীশাল। আর একদিকে বিরাট আস্তাবল। আজ আর ঘোড়া নেই। দোকানে দোকানে ভরে আছে। আর একদিক গেছে খাগড়ার দিকে, মাঝে মহারাজ নন্দকুমারের বাড়ী, কাশিমবাজারের মহারাজের বাড়ী পেরিয়ে বহরমপুর শহর। যেখানে আমরা হরহামেশাই সাইকেল চালিয়ে সিনেমা দেখতে যেতাম। আশা পারেখের সিনেমা। আমাদের কালের বুক ঢিপঢিপ করা হিরোইন। তার ছলছলে চোখ আমাদের বুকে উথালপাতাল ঝড় তুলে যেত। আর সন্ধ্যেবেলা গাছমছম অন্ধকারের মধ্যে বটপাকুড়ের অন্ধকার ছায়া পেরিয়ে ফিরে আসতাম এই ছোট্ট শহরেই। পাঁচরাহা, এই ছোট্ট ঐতিহাসিক শহরেরই প্রাণকেন্দ্র। ছোট্টই বা বলি কি করে? এককালে বাংলা,বিহার, ওড়িশার রাজধানী। কম কথা তো নয়। সেকালের লন্ডনের থেকেও জাঁকে জমকে ভারী ওজনদার শহর। আজও তো তার কিছু চিহ্ন রয়েই গেছে। নবাব,বাদশাহ, হাতীশালে হাতী, আস্তাবলে সব বড় বড় ঘোড়া, এসব তো আমরাই দেখেছি। তবে নবাব আমাদের কালে হয়ে রইল ছোটে নবাব। আমাদের এক ক্লাসের বন্ধু। রাজত্ব হারিয়ে সেও মিশে গেল আমজনতার মাঝে। মতিঝিলের মসজিদের পাশের আমবাগানের ডালে বসে বিড়ি ফোঁকা ছোটে নবাব আমাদের মত পাত্র মিত্র অমাত্যদের সাথে,রাজকার্য ভুলে মশগুল হয়ে আড্ডায় মেতে রইত।

পাঁচরাহার দোকান, হাটবাজার বাস স্টপ, নবাবের আস্তাবল, হাতীশাল। কুঁড়াদার সেলুন, ঝুমুর চপের দোকান, অমল মোদকের মিষ্টির দোকান, নীরোদবাবুর বেকারি,জামাইয়ের মিষ্টির দোকান, আজ হয়ত আর নেই।  রয়ে গেছে স্মৃতিতে।  ইতিহাস আর বর্তমানে হাত ধরাধরি করে চলা এক ভারী মনখারাপের জায়গা। কেল্লায় আড্ডা ফেরত আমরা জামাইয়ের মিষ্টির দোকানের ধাপিতে বসতাম কিছুটা সময়। অপেক্ষায় থাকতাম কখন যাবে লালপরী আর নীলপরির দল । এরা সব লালবাগের সেরা সুন্দরীদের ঝাঁক। পৃথিবীর সেরা সুন্দরী সব। আমাদের সামনে দিয়ে সদর্পে বেড়িয়ে যেত। আড়চোখে দেখত অবশ্যই। সেটাই ছিল তখন বিরাট প্রাপ্তি। আর ছিল বেকারির গরম গরম বাখরখানি। তার তুল্য স্বাদ আর কোথাও  পাইনি। আসলে কৈশোরের স্বাদ কি আর ফিরে পাওয়া যায়?
এটা কোন গপ্প নই,স্মৃতিকথা তো নয়ই। আজ জ্বরের ঘোরে আধেক ঘুমে আধেক জাগরণে এসে ফিরে গেল লালপরী আর নীলপরীদের দল। বাখরখানির স্বাদ এখনো যে মুখে লেগে আছে। সে-তো মিথ্যে নয়। এসেছিল তারা, ফিরেও গেল। কোথায় কে জানে?

Sunday, 15 September 2019

থোড় ছেঁচকি

ইদানিং কেউ কি খেয়েছেন? থোড় ছেঁচকি? অনেক আগে খেয়েছিলাম , মায়ের হাতের রান্না। কলাবতীর অন্তরের শাঁস, ভালবাসার ইষৎ উত্তাপে, কালো জিরে আর কাঁচা লঙ্কার মৃদুগন্ধ জড়ানো থোঁড় ছেঁচকি আজ খেলাম অনেক বছর পরে। আজ সারাদিনই ছিলাম নিতাইয়ের কাঁকুলিয়ার বাড়ীতে। উপলক্ষ্য একটা ছিলই। নিতাই যাচ্ছে ওর মেয়ের বাড়ী, জার্মানিতে। তাই দীর্ঘ প্রবাসের আগে বন্ধুদের সাথে একটু উষ্ণ, মদিরাময় সঙ্গ করার জন্যেই ওর আজকের এই আয়োজন। অবশ্য, ছেঁচকিতেই শেষ নয়, এর পরেই ছিল শুক্তো। কেন যে একে সুখ-তো বলে না, এটা ভেবেই আমার অবাক লাগে। শুক্তোর প্রতি গ্রাসেই অনন্ত সুখ যদি বলি, খুব কি অন্যায় হবে? আমার খুব পছন্দের পদ এটি। শুক্তোই সই। আর কিছু না পেলেও সয়ে যাবে। এতেই অবশ্য শেষ নয়। তবে চিকেন নৈব নৈব চ। চিকেনের বাড়াবাড়িতে সবার প্রাণ ওষ্ঠাগত।  তাই নিতাইকে বলেছিলাম, মাছের ব্যবস্থা করতে। তাই শেষে মাছই এল। পাকা রুইয়ের রসময় পরিবেশনা। কোহিনূর বাসমতীর উড়তি হুয়া জওয়ানগির সঙ্গে রুইয়ের রসালাপ ভারী জমেছিল। শেষে একটু মিষ্টি মিষ্টি চাটনি হলে জমে উঠত ভারী। কিন্তু সেটি ছিল না, তার বদলে ছিল নকুড়ের জলভরা তালশাঁস। তার স্বাদ যদি আপনার অজানা তবে আপনার জন্যে রইল শুধুই দীর্ঘ শ্বাসই। এবার যদি হেঁদোর মোড়ে কখনও আসেন, অবশ্যই একবার নকুড়ের দোকান ঘুরে যাবেন। এ অবশ্য সবই শেষের কথা। এর মাঝে আগে কিছুতো আছেই।

আমাদের কথার মাঝেই নিতাইয়ের মেয়ের ফোন এল জার্মানি থেকে। বোঝা গেল ভারী বাপসোহাগী মেয়ে। খুব ভাল লাগল বাবা মেয়ের কথোপকথন । আমার অবশ্য দুটোই ছেলে। ছেলেরা একটু কাঠখোট্টাই হয়। মেয়েদের মত নয়। অবশ্য ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়। তবে মেয়ে নিয়ে আমার মধ্যে ভারী এক অভাববোধ  আছে। কবে সেই না আসার মেয়ের নাম ভেবে রেখেছিলাম হৈমন্তী।  সেও এলো না, আর আমার দুঃখেরও  হলো না শেষ। সে সব যাই হোক, আজকের কথাতেই আসি। না হওয়া কথা ভেবেই  বা কি লাভ?

এত সব কথার আগে যে গৌরচন্দ্রিকা কিছু আছেই সে তো আপনাদের জানাই আছে। নতুন কিছু নয়। ওই যে যাকে বলে Neighbour's envy, blender's pride. তাতেই বেশীটা সময় চলে গেল। ছিল আমাদের steady man  শেখর। বেশ কাটল সারাটা দিন,  রশেবশে, আমোদে আহ্লাদে।  রশে বশে থাকতে তো  ঠাকুরেই বলে গেছেন। আমি আর নতুন করে কি বলব? বাকীটা বোঝার দায় আপনাদেরই।




Tuesday, 3 September 2019

অথ বলরাম কথা

সুজিত পকেটে আগেই দুটো টিকিট গুজে দিয়েছিল। নাটকের টিকিট।  নোটো গ্রুপের৷ আমাদের বলরাম তার এক অনুনাটিকার নায়কের বেশে। যেতেই হবে৷ সপ্তাহের প্রথম দিন মানে আখড়ায় যাওয়া মিস, মনটা খচখচ করেছিল। তাই, সকালেই যোগের পাঠ শেষ করে দিলুম। আজ বড়ভাইয়ের নাটক মিস নয় কোন ভাবেই।

আমাদের বড়ভাইকে এতদিনে নিশ্চিত সবাই চিনে গেছেন। আদ্যন্ত জাহাজী। বড় বড় জাহাজ চালিয়ে সাত সমুদ্র তেরনদী চক্কর দিয়ে বেড়ান তার বা হাতের খেল। এই সেদিনও সারা পৃথিবী চক্কর কেটে এল। স্পিরিট একঘর, এ আপনাকে মানতেই হবে। এই সত্তরে কত বাহাত্তুরে বিছানায় পাশ ফিরতে পারেনা , সেখানে সাতসমুদ্দওর চক্কর কেটে বেড়ানো, একি চাড্ডিখানি কথা। এ আপনাকে মানতেই হবে।
ইদানীং উনি আবার আঁকাজোকা, লেখালেখিতে ঢুকে পরেছেন। তার মানে  যারা ওর পরিচিত বৃত্তের,যারা দুচার লাইন লিখে আর একে, লাইক আর কমেন্ট গুনে গুনে রাখছিলুম তাদের বেলাশেষ। বড়ভাই ঢুকে পরেছে আঁকা আর লেখার জগতে। আমাদের এখন ভলিনটারী রিটায়ামেন্ট নিয়ে সস্মমানে কেটে পরাই শ্রেয়। বলরামের আঁকা দেখেছেন। তিন স্ট্রোকে মাউইন্টেন বিউটিতে পৌঁছে গেল।  হায় এইরকম তিন স্ট্রোকে যদি আমার প্রিয় মোহনবাগান গোল করতে পারত। তা সে যাক মাঠের কথা ময়দানেই থাকুক।সে আঁকা দেখেছেন? আমি তো দেখে থ। এ যে ইউরোপিয়ান মাষ্টারদের পরীক্ষায় ফেলে দেবে। আমার তো মনে হয় মাঝ সমুদ্রে নেমে পড়ে, অসীম শক্তি আর তারুণ্য নিয়ে ফিরে এসেছে সেই গোলিয়াথের মত। ভেঙে চুরে কিছু একটা করে বসবেই। তাতে আমার মত মিনমিনে কিছু বুড়োকে লেজ গুটিয়ে দূরে বসে ম্যাও ম্যাও করা ছাড়া আর কোন গতান্তর থাকবে না।
সে সব যাইহোক,  গেলুম বলরাম কে দেখতে নবকলেবরে। বলরামের নতুন নাটক। শ্রুতি নয় পাকাপাকি স্টেজ পারফরম্যান্স। বনফুলের, 'কবিতা বিভ্রাট'  আহা কি দেখিলাম জন্মে জন্মান্তরে ভুলিবনা। অসাধারণ স্টেজ পারফরম্যান্স। কি শরীরী ভাষা আর কি ডায়ালোগ থ্রো৷ ইরশাদ ঈরশাদ। মান গ্যায়ে ওস্তাদ।  তুসি গ্রেট হো। তোফা কবুল কর। আমাদের ম্যাগ প্লাসের তরফ থেকে। আজ তো চলেই যাচ্ছ দীর্ঘ প্রবাসে৷ একটা ছোট্ট রিকোয়েস্ট৷ এবার হাইড পার্কে  দাঁড়িয়ে তোমার বক্তিমে শুনতে চাই। এ তুমি ঠিক পারবে। দিন ঠিক করে আমাদের একটু খপর পৌঁছে দিও শুধু, আমারা পঞ্চপান্ডব ঠিক পৌঁছে যাব৷ হাততালির ঝড় তুলে দেব সারা হাইড পার্ক জুড়ে, এ আমাদের ওয়াদা আমাদের বড়ভাইয়ের কাছে।

All the best, Rekha & Balaram.  ছুটি কাটিয়ে যথাসময়ে ফিরে এস। ঠিক শীত পড়ার আগে। তুমি না এলে আমরা শীতের ওম পাব কোথায়?  Au revoir.

Monday, 2 September 2019

পঞ্চপাণ্ডব ও বন্দী শাজাহান

পঞ্চপাণ্ডবের সঙ্গে কি বন্দী শাজাহানকে মেলান যায়? সবাই নিশ্চয় সবেগে ঘাড় নাড়বেন,  কভি নেহি, কভি নেহি। কিন্তু আমাদের  ভাই বিরাদরীর এই ছোট্ট গ্রুপে সেটাই যে ঘটেছে। আমাদের প্রানভোমরা গুরুসম শেখর, যার দর্শন আর প্রদর্শিত পথেই আমাদের যাত্রা শুরু, সেই শেখরই আজ বন্দী দিল্লির কারাগারে। তৃষ্ণায় কাতর, কিন্তু আমরা অসহায়।  কিছুই করতে পারিনা ওর জন্যে। ভারী কড়া পাহারায় আছে সম্রাট । তবু্ও আমরা ভুলতে পারি কই। তাই সব যজ্ঞের আগেই সেই শিক্ষাগুরু শেখরকে ভিডিও কলে আহবান করেই ধুমধাম করে আমাদের যজ্ঞের শুরু হয়।

আজকের আসর ছিল বলরামের দীর্ঘ প্রবাসযাত্রার প্রাক্কালে এক ভারী ইমোশনাল সন্ধ্যা। পাক্কা তিনঘন্টার ফুল্টুস মস্তী। রোয়িং ক্লাবের আশকারায় যতরকম ফিচলেমির নির্লজ্জ আসর। আজ যে আমরা সবাই নিজের মনের কপাট খুলে বসেছিলুম শুধু তাই নয়। প্রকৃতিদেবীও তার দুয়ার খুলে অঝোর ধারায় ঝরে আমাদের আসরকে প্রলম্বিত করতে সাহায়্য করেছেন।কি খেলাম, কি খেলাম না উহ্য রাখলেও কারও অজানা নয়। আসল কথা আমরা বন্ধুত্বের জারক রসে সবাই ছিলাম আজ সংপৃক্ত । তাই স্কচ এল না টাকিলা তাতে খুব একটা হেরফের হয় নি। কি বললাম, কি বললাম না সেটা না শোনায় ভাল। ভারী নির্লজ্জ সব ব্যাপার,  নেহাৎই ইন বিটুইন ব্যাপার স্যাপার। আপনারা নাই শুনলেন।  তবে জাসট জমে গেল তিন ঘন্টার আসর। এর মাঝে ছিল প্রখ্যাত লেখক রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক আড্ডা। তার লেখা নিয়ে। এর মধ্যেই পল্টাও ঢুকে পড়ল বেশ। যে নাকি বাঙালী মেয়ের সাথে প্রেম করে বিয়ে করেও এক লাইন বাংলা বোঝে না৷ সেই দেখি রঞ্জনবাবুকে বগলদাবা করে নিল। একেই বলেই পাঞ্জাবীয়ত। সাহিত্যে যখন হয় না তখন রাস্তা মেলে দারুদর্শনেই। রঞ্জন বাবুও তখন সাহিত্য ছেড়ে দারুতেই স্থির হন।
আজকের ছবিগুলোই বলবে কিরকম হল  আজকের আড্ডা। এককথায় লা জবাব। অনেকদিন এইরকম প্রানখোলা আড্ডা হয়নি।  আমি সবসময়ই বলি সব সম্পর্কের উপরেই বন্ধুত্ব।। তার উপরে আর কিছু কি আছে? ঈশ্বর?  থাকলেও তার সাথে আমাদের আলাপ পরিচয় হয়নি মোটেই। হলে তাকেও আমাদের গ্রুপের মেম্বার ঠিক করে নেব।

Monday, 26 August 2019

রোববার আমার ছুটির দিন। এ দিন আমি কোন চেনা রাস্তায় ঢুকিনা। না করি কোন কাজ। অনেকেই বলেন, বিশ্রাম করুন। আসলে বিশ্রাম যে কি তা আমার মাথায় ঢোকেনা মোটেই। বিশ্রাম মানে যদি চুপচাপ শুয়ে বসা হয়ে থাকে তাহলে তো সে রীতিমতো অত্যাচার।  তাই বিশ্রাম মানেই আমার কাছে অচেনা রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো। বা ধরুন বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারা, বই পড়া এইসব। এই রোববার ঠিকই ছিল ভবানীপুরে সুজিতের বাড়ী যাব। সুজিতের জন্মদিন গেছে কদিন আগে। তাই সুজিতের বাড়ীতেই আমি আর পল্টা পৌঁছে গেলাম সময়েই। সুজিতের দাদা সুব্রতদা আমাদেরও বন্ধু। এর আগেও আমরা একসঙ্গে পঞ্চলিঙ্গেশর, বালাসোর ঘুরে এসেছি। এরকম দাদা যার আছে সেই ভাইয়েরা কেউ খারাপ হতেই পারে না। তাই আমরাও কেউ খারাপ নয়। ভারী সুশীল আর সজ্জন। আর সুজিতের কথা,  'কেয়া কহেনা'! এরকম বন্ধু যার আছে, সে ওর ঘাড়ে সব ভার চাপিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারে। সুজিত সব সামলে নেবে।  সুব্রতদার সাথে অনেকদিন বেরোন হয়নি সেইরকমই আর একটা প্রোগ্রাম চটজলদি ফিক্স হয়ে গেল,পুজোর পরে পরেই। এবার ননীর সাথে বসে একটু ফাইন টিউন করতে হবে। এখন আমাদের প্রতি মাসেই বাইরে যাবার আমন্ত্রণ।  নদী পর্বত, জল জঙ্গল পরিক্রমা চলবে প্রায় প্রতি মাসেই।
সে যাই হোক, সুজিতের বাড়ী যখন গেছি জন্মদিনের অজুহাতে ও কি আর ছাড়বে মিষ্টি ছাড়া। ভবানীপুরের অলিতে গলিতে মিষ্টির দোকান।  তাই থালা ভর্তি মিষ্টি নিয়ে হাজির সুজিতের ঘরণী। আমার আবার খেতে ভাল  লাগে না,  তাই মিষ্টি। ভাগ্যিস পল্টা ছিল, তাই ওর প্লেটে অর্ধেক চালান করে হাল্কা হলুম। বাকীটা দিলুম সুজিতকে।

সুজিতের বাড়ী ছেড়ে গন্তব্য এবার  সেই মাইখানা যেখানে গালিব, ওমর খৈয়ামের মত গুণী জনেরা জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় কাটিয়েছেন।  আমরাও চললাম তাদের পথ ধরেই।  এবারও আড্ডা, তবে ঠোঁট ছুয়ে ছিল সিরাজীর পেয়ালা। তবে সুজিতের আজকাল বড়ই ছোয়াছুয়ির বাই , লিমকা ছাড়া কিছুই হাতে নেয়না। অবশ্য তার একটা কারণও আছে, যেটা সুজিতকে আরও দায়িত্বশীল করেছে।  তিন ঘন্টা তর তর করে কেটে গেল। আজকে অরুণ আর বড়ভাই বলরামেরও আসবার কথা ছিল।  বলরাম চারমাসের জন্য বিদেশে চলে যাবে তাই ব্যাস্ত,  শেষমুহূর্তের ব্যাস্ততা ফেলে আসতে পারল না। বলরাম না থাকলে আমাদেরও ফাঁকা ফাঁকা লাগে। সংসারের বড়ভাই না থাকলে যা হয়। একটা সেন্স অফ ইনসিকিউরিটি ঘিরে থাকে ছোট ভাইদের ঘিরে।

আজ যখন জীবনে কি পেয়েছি বা পায়নি, তার হিসেব মিলাতে বসি, তবে দেখব পাওয়ার ঘড়াই পরিপূর্ণ।  বন্ধুর মত বন্ধুরা এসে হাত ধরেছে। অনেকেই বলে জীবনের পথ বন্ধুর।  কিন্তু বন্ধু যদি থাকে তাহলে কোন পথই বন্ধুর মনে হয় না।  একবার বর্ষার গঙ্গা সাঁতার দিয়ে পেরোতে গিয়ে গঙ্গার খরস্রোতে ভেসে যাচ্ছিলাম তখন আমার ছোটবেলার দামাল বন্ধু সতুই আমার রক্ষাকর্তা হয়ে এসেছিল। তাই আজও এই পৃথিবীর বুকে ভেসে আছি। জীবনের সব পর্যায়ে বন্ধুত্বের হাতছানি ডাক দিয়েছে। অপু, পন্ডিত, ছোটে নবাব, পাপ্পু নবাব, আলিবাম, মীজানুর এরা সবাই সুধায় দিয়েছে ভরে এই জীবন,তাই এত সুন্দর এই পৃথিবী।   আজ হয়ত তারা অনেকেই ছিটকে গেছে।
কিন্তু বন্ধুর আসন অপুর্ণ থাকেনি। আমার বড় কালের বন্ধুদের তো অনেকেই চেনেন। সুজিত, পল্টা, অরুণ, বড়ভাই বলরাম, আরো অনেকেই। তাই জীবনপাত্র পরিপূর্ণ।  কোন অভাব নেই, অভিযোগ নেই। বন্ধুত্বের মাধুরীতে সব অভাব গেছে ধুয়ে মুছে।




Wednesday, 21 August 2019

দশচক্রের আসর

আজ দিল্লি থেকে আমাদের বড় গোঁসাই মানে শেখর এয়েছে। এসেছে মানে প্যারোলে ছাড়া পেয়েছে তিহার থুড়ি গুরগাঁওএর জেলখানা থেকে। সেখানকার জেলার আবার ওরই গিন্নি।  বুঝুন কি সাংঘাতিক ব্যাপার। প্রাণ ওষ্ঠাগত। তাই প্রানের জ্বালা জুড়োতে আজ উড়ে এসে আলো করে বসেছে আমাদের মধ্যে,  অনন্ত তৃষ্ণা বুকে নিয়ে । বৃষ্টির কোন দরকার নেই,  সব বৃষ্টি বাদলা আমরা রেখেছি বোতল বন্দী করে। দশচক্র বললাম বটে,  তবে দশের হিসেব অল্পের জন্য ফস্কে গেল । আমাদের বড়ভাই, নটসূর্য বলরামকে নোটোর কমিটমেন্ট রাখতে গিয়ে এমন কড়া ডোজের ওষুধ নিতে হল,যে তাতেই ও বেকসুর বেমতলব  শয্যাশায়ী হয়ে গেল৷ তাতে আমাদের এই আড্ডার রঙ ফিকে হল অবশ্যই তবে ভিডিও কনফারেন্সে আমদের সঙ্গী হয়ে রইল বলরাম সর্বক্ষনই। দশচক্রের চক্রী হয়েও ,  আমাদের বিশ্বাস না আছে ভুতে না ভগবানে। আমার নিজেরাই ভূত বা বলুন কিম্ভুত,  বা নাই হোক কদাকারই। অন্তত আমরা অদ্ভুত বা নতুন যৌবনের দাবীদার তো মোটেই নয়। আমদের ভূত বলুন চাই ভগবান, সবই ছিল বোতল বন্দী হয়ে, শুধু ছিপি খোলার অপেক্ষায়।  তাই ছিপি খুলে উড়িয়ে দিলাম সব ভূত, ভবিষ্যৎকে। আর কিসেরই বা প্রয়োজন এই পড়ন্ত বেলায়? তখন রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল, থাকে শুধু অন্ধকার,  মুখোমুখি বসিবার নাটোরের  বনলতা সেন। তাকে খোঁজার দায়িত্ব  আমার,আপনার, আমাদের সবাইয়ের। আপনার খোঁজ তুমি নিজেই নাও খুঁজে ।

পরিশেষে ধন্যবাদ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অরুণের তেনার ভিসার মেয়াদ আরও তিনমাস বাড়ানোর জন্য। এতে আমাদের নরক গুলজার আরও গুলে গুলজার হয়ে উঠবে, এই বিশ্বাস শুধু আমাদেরই নয়, আপনারও নিশ্চয় তার সঙ্গী।

Sunday, 18 August 2019

কদম কদম বাড়ায়ে যা
খুসী সে গীত গায়ে যা

আজ রোববার, ইংরেজি ১৮ই আগষ্ট, বাংলা ১লা ভাদ্র, ১৪২৬ দিবা ৬ ঘটিকা মাহেন্দ্রযোগ। এতসব সত্যিই কি লেখার দরকার? আমি শ্রীমও নই আর কোন কথামৃতও লিখতে বসিনি। নেহাৎই আমার প্রলাপ বচন। ইচ্ছে হলে শুনতেও পারেন না হলে কানে গুজুন তুলো।
আসলে এখন আমার রোজই রোববার। একই তিথি, একই নক্ষত্র আর যোগ রোজই মাহেন্দ্রযোগ। আসলে প্রতিদিনই যে ২৪ ঘন্টায় হয় সে হিসেব আগে করিনি। তখন মনে হত আরও কয়েকঘন্টা দিনের হিসেবে জুড়লে বেশ হত। একটু ফেলে ছড়িয়ে চলতে পারতুম। কিন্তু এখন ২৪ ঘন্টা মিনিট গুনে সেকেন্ড গুনে কাটাতে হয়। মোটামুটি দিনের বেশীর ভাগটাই ভরপুর টইটম্বুর করে রাখি। কিন্তু রোববারের এই দুপুরটায়  মন বড় উচাটন হয়৷ আজও তেমনই এক রোববার।  চার দেয়ালের এই বাঁধন থেকে মুক্তি চায় মন। ওই যে রবিবাবুর গানে আছে না, ' এই আকাশে মুক্তি আমার...' পাখা থাকলে উড়েও যেতাম। একবার সত্যি সত্যিই উড়েই গিয়েছিলাম।  সে অনেক অনেক দূরে। তখন আমি নিমতিতায় থাকি। বরদাচরণ মজুমদার, নাম শুনেছেন নিশ্চয়। বিরাট যোগী,সাধক। আমাদের দেশ, কাঞ্চনতলায় বাড়ী।  তার প্রত্যক্ষ শিষ্য ছিলেন নিমতিতা স্কুলের হেডমাস্টার মশায় অনিল সান্যাল্। তার কাছে আমার যোগ ধ্যানের প্রথম পাঠ। তো ধ্যানেই একদিন জাস্ট উড়ে গেলাম। সে এক বিরাট অনুভূতি।  পৃথিবী,চন্দ্র, গ্রহ, নক্ষত্র ছাড়িয়ে কোথায় যে যাচ্ছিলুম কি জানি। ভয় পেয়ে পিছিয়ে এলুম। তারপরে অনেক চেষ্টাই করিছি, কিন্তু আর ইঞ্চি ছয়েকের বেশী উঠতে পারিনি। এটুকু শুনেই আপনার হয়ত ভাবতেই পারেন এ বেটা ঠিক টেনীদার গলি ঘুরে এসেছে আর টেনীদা ভর করেছে এই বেআক্কেলের মাথায়।

সত্যি সত্যিই আজ মাহেন্দ্রযোগ ধরেই বেড়িয়েছি৷ বাসে ট্রামে নয় একেবারে পদব্রেজে। হাটতে আমার ভারী ভাল লাগে। আর আমার হাটার প্রিয় জায়গাও এই উত্তরে। ইচ্ছে ছিল দর্জীপাড়ার নতুনদার সাথে আড্ডা মেরে সন্ধ্যেটা কাটাব। কিন্তু হাজার ডাকাডাকিতেও তার সাড়া পেলুম না। হয়ত ভাগলপুরেই ভাগলবা হয়েছে শ্রীকান্তের খোঁজে। উত্তরের অলিগলি ঘুরতে ঘুরতে এগিয়ে চললুম। উত্তরের গলিতে গলিতে দেবদেবীর অবস্থান। এখানে সন্ধ্যে হলেই কাঁসরঘন্টার ভারী মিষ্টি আওয়াজ। মানুষের এখনও অচলা বিশ্বাস তাদের ঠাকুর দেবতায়। এই বিশ্বাসের আড়ম্বরহীন আয়োজনে আমারও নীরব সমর্থন।  ধর্ম থাকুক সে একক বা সমবেত বিশ্বাসে। কিন্তু দাঁতমুখ খিচিয়ে যেন তেড়ে না আসে। এইখানেই আবার রামকৃষ্ণ।  যত মত তত পথ। থাকুক না সব বিশ্বাস পাশাপাশি হাতে হাত রেখে তা হলে কি ভালই না হয়। আমারও খুব পছন্দের এই প্লুরালিস্টিক সমাজ। অনেক ধর্ম, অনেক ভাষা অনেক সংস্কৃতি সংসার সমাজ আলো করে এই প্রকৃতির মত তার নানা রঙ,রুপ, গন্ধ নিয়ে থাক। যাক সে সব ভাবের কথা। আমি নিতান্তই অ-ভাবী মানুষ। এসব নিয়ে বেশী কথা বলা আমায় মানায়ও না।
যাক নতুনদাকে ধরতে না পেরে এগিয়ে চললুম, শোভাবাজার রাজবাড়ীর পানে। ইচ্ছে আজকের সন্ধ্যেটা রাজামশায় স্বপন দেব মহাশয়ের সাথেই পানালাপেই কাটিয়ে দেব। কিন্তু মাহেন্দ্রক্ষণে বেরোলেও রাজামশাইকে ফোনে পেলুম না। রাজবাড়ীর ফটক ঠেলে ঢুকে পড়তেই পারতুম। কিন্তু আমিও তো নবাব বাদশার দেশেরই লোক। এরকম বেয়াদব আচরণ কি আমার শোভা পায়? তাই চরৈবতিই। শেষে নেতাজির দোরগোড়ায় এসে থামতেই হল। পাঁচমাথার মোড়ে কালীমার দর্শন সেরে নুচি সন্দেশ খেয়ে আবার সেই সংসার বিদেশে বিদেশীর বেশে পুর্নমুষিক ভব।