Monday, 26 August 2019

রোববার আমার ছুটির দিন। এ দিন আমি কোন চেনা রাস্তায় ঢুকিনা। না করি কোন কাজ। অনেকেই বলেন, বিশ্রাম করুন। আসলে বিশ্রাম যে কি তা আমার মাথায় ঢোকেনা মোটেই। বিশ্রাম মানে যদি চুপচাপ শুয়ে বসা হয়ে থাকে তাহলে তো সে রীতিমতো অত্যাচার।  তাই বিশ্রাম মানেই আমার কাছে অচেনা রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো। বা ধরুন বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারা, বই পড়া এইসব। এই রোববার ঠিকই ছিল ভবানীপুরে সুজিতের বাড়ী যাব। সুজিতের জন্মদিন গেছে কদিন আগে। তাই সুজিতের বাড়ীতেই আমি আর পল্টা পৌঁছে গেলাম সময়েই। সুজিতের দাদা সুব্রতদা আমাদেরও বন্ধু। এর আগেও আমরা একসঙ্গে পঞ্চলিঙ্গেশর, বালাসোর ঘুরে এসেছি। এরকম দাদা যার আছে সেই ভাইয়েরা কেউ খারাপ হতেই পারে না। তাই আমরাও কেউ খারাপ নয়। ভারী সুশীল আর সজ্জন। আর সুজিতের কথা,  'কেয়া কহেনা'! এরকম বন্ধু যার আছে, সে ওর ঘাড়ে সব ভার চাপিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারে। সুজিত সব সামলে নেবে।  সুব্রতদার সাথে অনেকদিন বেরোন হয়নি সেইরকমই আর একটা প্রোগ্রাম চটজলদি ফিক্স হয়ে গেল,পুজোর পরে পরেই। এবার ননীর সাথে বসে একটু ফাইন টিউন করতে হবে। এখন আমাদের প্রতি মাসেই বাইরে যাবার আমন্ত্রণ।  নদী পর্বত, জল জঙ্গল পরিক্রমা চলবে প্রায় প্রতি মাসেই।
সে যাই হোক, সুজিতের বাড়ী যখন গেছি জন্মদিনের অজুহাতে ও কি আর ছাড়বে মিষ্টি ছাড়া। ভবানীপুরের অলিতে গলিতে মিষ্টির দোকান।  তাই থালা ভর্তি মিষ্টি নিয়ে হাজির সুজিতের ঘরণী। আমার আবার খেতে ভাল  লাগে না,  তাই মিষ্টি। ভাগ্যিস পল্টা ছিল, তাই ওর প্লেটে অর্ধেক চালান করে হাল্কা হলুম। বাকীটা দিলুম সুজিতকে।

সুজিতের বাড়ী ছেড়ে গন্তব্য এবার  সেই মাইখানা যেখানে গালিব, ওমর খৈয়ামের মত গুণী জনেরা জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় কাটিয়েছেন।  আমরাও চললাম তাদের পথ ধরেই।  এবারও আড্ডা, তবে ঠোঁট ছুয়ে ছিল সিরাজীর পেয়ালা। তবে সুজিতের আজকাল বড়ই ছোয়াছুয়ির বাই , লিমকা ছাড়া কিছুই হাতে নেয়না। অবশ্য তার একটা কারণও আছে, যেটা সুজিতকে আরও দায়িত্বশীল করেছে।  তিন ঘন্টা তর তর করে কেটে গেল। আজকে অরুণ আর বড়ভাই বলরামেরও আসবার কথা ছিল।  বলরাম চারমাসের জন্য বিদেশে চলে যাবে তাই ব্যাস্ত,  শেষমুহূর্তের ব্যাস্ততা ফেলে আসতে পারল না। বলরাম না থাকলে আমাদেরও ফাঁকা ফাঁকা লাগে। সংসারের বড়ভাই না থাকলে যা হয়। একটা সেন্স অফ ইনসিকিউরিটি ঘিরে থাকে ছোট ভাইদের ঘিরে।

আজ যখন জীবনে কি পেয়েছি বা পায়নি, তার হিসেব মিলাতে বসি, তবে দেখব পাওয়ার ঘড়াই পরিপূর্ণ।  বন্ধুর মত বন্ধুরা এসে হাত ধরেছে। অনেকেই বলে জীবনের পথ বন্ধুর।  কিন্তু বন্ধু যদি থাকে তাহলে কোন পথই বন্ধুর মনে হয় না।  একবার বর্ষার গঙ্গা সাঁতার দিয়ে পেরোতে গিয়ে গঙ্গার খরস্রোতে ভেসে যাচ্ছিলাম তখন আমার ছোটবেলার দামাল বন্ধু সতুই আমার রক্ষাকর্তা হয়ে এসেছিল। তাই আজও এই পৃথিবীর বুকে ভেসে আছি। জীবনের সব পর্যায়ে বন্ধুত্বের হাতছানি ডাক দিয়েছে। অপু, পন্ডিত, ছোটে নবাব, পাপ্পু নবাব, আলিবাম, মীজানুর এরা সবাই সুধায় দিয়েছে ভরে এই জীবন,তাই এত সুন্দর এই পৃথিবী।   আজ হয়ত তারা অনেকেই ছিটকে গেছে।
কিন্তু বন্ধুর আসন অপুর্ণ থাকেনি। আমার বড় কালের বন্ধুদের তো অনেকেই চেনেন। সুজিত, পল্টা, অরুণ, বড়ভাই বলরাম, আরো অনেকেই। তাই জীবনপাত্র পরিপূর্ণ।  কোন অভাব নেই, অভিযোগ নেই। বন্ধুত্বের মাধুরীতে সব অভাব গেছে ধুয়ে মুছে।




Wednesday, 21 August 2019

দশচক্রের আসর

আজ দিল্লি থেকে আমাদের বড় গোঁসাই মানে শেখর এয়েছে। এসেছে মানে প্যারোলে ছাড়া পেয়েছে তিহার থুড়ি গুরগাঁওএর জেলখানা থেকে। সেখানকার জেলার আবার ওরই গিন্নি।  বুঝুন কি সাংঘাতিক ব্যাপার। প্রাণ ওষ্ঠাগত। তাই প্রানের জ্বালা জুড়োতে আজ উড়ে এসে আলো করে বসেছে আমাদের মধ্যে,  অনন্ত তৃষ্ণা বুকে নিয়ে । বৃষ্টির কোন দরকার নেই,  সব বৃষ্টি বাদলা আমরা রেখেছি বোতল বন্দী করে। দশচক্র বললাম বটে,  তবে দশের হিসেব অল্পের জন্য ফস্কে গেল । আমাদের বড়ভাই, নটসূর্য বলরামকে নোটোর কমিটমেন্ট রাখতে গিয়ে এমন কড়া ডোজের ওষুধ নিতে হল,যে তাতেই ও বেকসুর বেমতলব  শয্যাশায়ী হয়ে গেল৷ তাতে আমাদের এই আড্ডার রঙ ফিকে হল অবশ্যই তবে ভিডিও কনফারেন্সে আমদের সঙ্গী হয়ে রইল বলরাম সর্বক্ষনই। দশচক্রের চক্রী হয়েও ,  আমাদের বিশ্বাস না আছে ভুতে না ভগবানে। আমার নিজেরাই ভূত বা বলুন কিম্ভুত,  বা নাই হোক কদাকারই। অন্তত আমরা অদ্ভুত বা নতুন যৌবনের দাবীদার তো মোটেই নয়। আমদের ভূত বলুন চাই ভগবান, সবই ছিল বোতল বন্দী হয়ে, শুধু ছিপি খোলার অপেক্ষায়।  তাই ছিপি খুলে উড়িয়ে দিলাম সব ভূত, ভবিষ্যৎকে। আর কিসেরই বা প্রয়োজন এই পড়ন্ত বেলায়? তখন রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল, থাকে শুধু অন্ধকার,  মুখোমুখি বসিবার নাটোরের  বনলতা সেন। তাকে খোঁজার দায়িত্ব  আমার,আপনার, আমাদের সবাইয়ের। আপনার খোঁজ তুমি নিজেই নাও খুঁজে ।

পরিশেষে ধন্যবাদ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অরুণের তেনার ভিসার মেয়াদ আরও তিনমাস বাড়ানোর জন্য। এতে আমাদের নরক গুলজার আরও গুলে গুলজার হয়ে উঠবে, এই বিশ্বাস শুধু আমাদেরই নয়, আপনারও নিশ্চয় তার সঙ্গী।

Sunday, 18 August 2019

কদম কদম বাড়ায়ে যা
খুসী সে গীত গায়ে যা

আজ রোববার, ইংরেজি ১৮ই আগষ্ট, বাংলা ১লা ভাদ্র, ১৪২৬ দিবা ৬ ঘটিকা মাহেন্দ্রযোগ। এতসব সত্যিই কি লেখার দরকার? আমি শ্রীমও নই আর কোন কথামৃতও লিখতে বসিনি। নেহাৎই আমার প্রলাপ বচন। ইচ্ছে হলে শুনতেও পারেন না হলে কানে গুজুন তুলো।
আসলে এখন আমার রোজই রোববার। একই তিথি, একই নক্ষত্র আর যোগ রোজই মাহেন্দ্রযোগ। আসলে প্রতিদিনই যে ২৪ ঘন্টায় হয় সে হিসেব আগে করিনি। তখন মনে হত আরও কয়েকঘন্টা দিনের হিসেবে জুড়লে বেশ হত। একটু ফেলে ছড়িয়ে চলতে পারতুম। কিন্তু এখন ২৪ ঘন্টা মিনিট গুনে সেকেন্ড গুনে কাটাতে হয়। মোটামুটি দিনের বেশীর ভাগটাই ভরপুর টইটম্বুর করে রাখি। কিন্তু রোববারের এই দুপুরটায়  মন বড় উচাটন হয়৷ আজও তেমনই এক রোববার।  চার দেয়ালের এই বাঁধন থেকে মুক্তি চায় মন। ওই যে রবিবাবুর গানে আছে না, ' এই আকাশে মুক্তি আমার...' পাখা থাকলে উড়েও যেতাম। একবার সত্যি সত্যিই উড়েই গিয়েছিলাম।  সে অনেক অনেক দূরে। তখন আমি নিমতিতায় থাকি। বরদাচরণ মজুমদার, নাম শুনেছেন নিশ্চয়। বিরাট যোগী,সাধক। আমাদের দেশ, কাঞ্চনতলায় বাড়ী।  তার প্রত্যক্ষ শিষ্য ছিলেন নিমতিতা স্কুলের হেডমাস্টার মশায় অনিল সান্যাল্। তার কাছে আমার যোগ ধ্যানের প্রথম পাঠ। তো ধ্যানেই একদিন জাস্ট উড়ে গেলাম। সে এক বিরাট অনুভূতি।  পৃথিবী,চন্দ্র, গ্রহ, নক্ষত্র ছাড়িয়ে কোথায় যে যাচ্ছিলুম কি জানি। ভয় পেয়ে পিছিয়ে এলুম। তারপরে অনেক চেষ্টাই করিছি, কিন্তু আর ইঞ্চি ছয়েকের বেশী উঠতে পারিনি। এটুকু শুনেই আপনার হয়ত ভাবতেই পারেন এ বেটা ঠিক টেনীদার গলি ঘুরে এসেছে আর টেনীদা ভর করেছে এই বেআক্কেলের মাথায়।

সত্যি সত্যিই আজ মাহেন্দ্রযোগ ধরেই বেড়িয়েছি৷ বাসে ট্রামে নয় একেবারে পদব্রেজে। হাটতে আমার ভারী ভাল লাগে। আর আমার হাটার প্রিয় জায়গাও এই উত্তরে। ইচ্ছে ছিল দর্জীপাড়ার নতুনদার সাথে আড্ডা মেরে সন্ধ্যেটা কাটাব। কিন্তু হাজার ডাকাডাকিতেও তার সাড়া পেলুম না। হয়ত ভাগলপুরেই ভাগলবা হয়েছে শ্রীকান্তের খোঁজে। উত্তরের অলিগলি ঘুরতে ঘুরতে এগিয়ে চললুম। উত্তরের গলিতে গলিতে দেবদেবীর অবস্থান। এখানে সন্ধ্যে হলেই কাঁসরঘন্টার ভারী মিষ্টি আওয়াজ। মানুষের এখনও অচলা বিশ্বাস তাদের ঠাকুর দেবতায়। এই বিশ্বাসের আড়ম্বরহীন আয়োজনে আমারও নীরব সমর্থন।  ধর্ম থাকুক সে একক বা সমবেত বিশ্বাসে। কিন্তু দাঁতমুখ খিচিয়ে যেন তেড়ে না আসে। এইখানেই আবার রামকৃষ্ণ।  যত মত তত পথ। থাকুক না সব বিশ্বাস পাশাপাশি হাতে হাত রেখে তা হলে কি ভালই না হয়। আমারও খুব পছন্দের এই প্লুরালিস্টিক সমাজ। অনেক ধর্ম, অনেক ভাষা অনেক সংস্কৃতি সংসার সমাজ আলো করে এই প্রকৃতির মত তার নানা রঙ,রুপ, গন্ধ নিয়ে থাক। যাক সে সব ভাবের কথা। আমি নিতান্তই অ-ভাবী মানুষ। এসব নিয়ে বেশী কথা বলা আমায় মানায়ও না।
যাক নতুনদাকে ধরতে না পেরে এগিয়ে চললুম, শোভাবাজার রাজবাড়ীর পানে। ইচ্ছে আজকের সন্ধ্যেটা রাজামশায় স্বপন দেব মহাশয়ের সাথেই পানালাপেই কাটিয়ে দেব। কিন্তু মাহেন্দ্রক্ষণে বেরোলেও রাজামশাইকে ফোনে পেলুম না। রাজবাড়ীর ফটক ঠেলে ঢুকে পড়তেই পারতুম। কিন্তু আমিও তো নবাব বাদশার দেশেরই লোক। এরকম বেয়াদব আচরণ কি আমার শোভা পায়? তাই চরৈবতিই। শেষে নেতাজির দোরগোড়ায় এসে থামতেই হল। পাঁচমাথার মোড়ে কালীমার দর্শন সেরে নুচি সন্দেশ খেয়ে আবার সেই সংসার বিদেশে বিদেশীর বেশে পুর্নমুষিক ভব।

























Tuesday, 13 August 2019

বাই বাই মিস ডায়েটিশিয়ান
কাল ফির মিলেঙ্গি

আমি এমনিতে খুব নিয়মনিষ্ঠ লোক। সময়ের কাজ সময়ে করা, সুচারুভাবে নিয়মকানুন মেনে চলা। এগুলো সব আমার স্বভাবসিদ্ধ ব্যাপার।  মনে হয়না, কষ্ট করে নিয়ম করছি। সকালে যখন লেকে হাটি বা দোলনায় দোল খায়, সেও মনের আনন্দেই। সকালের গ্রীন টি থেকে, কম্পিউটারে ৪/৫ ঘন্টা পেশাদারী কাজে, বিকেলে বিষ্টু ঘোষের আখড়া সব চলে ঘড়ির কাঁটা মেনে। ইদানীং এতে যোগ করেছি এক ডায়েটিশিয়ান সুন্দরীকে। তার সব নির্দেশ মাথা পেতে মানি।
তবে,বাইরে যখন বেড়োয় সব নিয়ম নাস্তি। আজ অযোধ্যা পাহাড়ের চুড়োয় বসেই নিয়ম ভাঙার শুরু। নিয়মে থাকার জন্যই মাঝে মাঝে নিয়ম ভাঙাই যে দস্তুর।
তাই আজ সকালের আমন্ত্রণে,  দই আর চিয়া সিডসের বদলে থালাভর্তি লুচি, সবজি আর গরম গরম গুলাবজামুন। দুপুরে শুদ্ধ খাসির গড়গড়ে ঝোল, হ্যান ত্যান কত কি, ম্যায় আমসত্বের চাটনি পর্যন্ত্য।কোন কিছুইতেই নেই কোন বাঁধা। ক্যালরি মাপার খবরদারী, আজকে তোমায় দিলেম ছুটি। সন্ধ্যেয় তো জমজমাট এ হিন্দ, নদিয়া সে দরিয়া, দরিয়া সে সাগর, সাগর সে গেহরী যাম...ইমুইনিটির বিরাট পরীক্ষা আছে। পা টলমল থাকলেও যদি নিজের পায়েই থাকেন স্থির কিংবা অস্থির তবে আপনি ১০০/১০০! সব পরীক্ষায় সসস্মানে উত্তীর্ণ।  এই ভাবাবেশ চলবে আজ, কাল আর পরশুও। বলতে ভুলে গেছি রাত্রে কিন্তু দেশী কুক্কুটের নরম ঝাল ঝাল আর বেনারসী রাবড়ি।পছন্দ তো? 
এই আমার নিয়ম ভাঙার নিয়ম। বুধবার থেকে আমায় কিন্তু চিনবেন না। যদি দেখেন আনাপানা করতে করতে কোন বৌদ্ধ শ্রমনকে রামমোহন রায় রোড ধরে যেতে, সেও এই আমিই? এই সত্যি,ঔ সত্যি। আমি আমরা সবাই আদতে শ্রডিংগারের বেড়াল ছানা,জীবন মৃত্যু এক তাড়াজুতেই নিয়ে চলি। অহং ব্রম্মহাস্মি।  ধম্মেও আছি,জিরাফেও আছি। এই তো জীবন, ননীদা।



এক নরম অপরাহ্নে আমরা পাখী পাহাড়ে। কে যেন সব পাখীগুলোকে বন্দী করে রেখেছিল এই কঠিন পাথুরে বুকে। সবকটাকে দিলেম উড়িয়ে  আজ মুক্ত নীল আকাশে। এরপর যদি পাখি পাহাড়ে আসেন, পাথরের গায়ে আর কোন বন্দী পাখী দেখবেন না। এই পাহাড়ের নাম দিলাম এখন থেকে  মুক্তি পাহাড়।








পুনরদর্শনায় চ
 পুরুলিয়া

আজ  ছদশকেরও পরে পুরুলিয়ার মাটিতে পা দিলাম।
আমার খুব ছোটবেলার স্মৃতিতে পুরুলিয়া একটা বেশ উজ্জ্বল জায়গা নিয়ে আছে। ফেসবুকের পাতায় সেই স্মৃতিচারণও করেছি আগে। আবার লিখতে গেলে তা নিছকই হবে পুনোরক্তি । তবে লিখতেই যখন বসেছি কিছু কথা তো এসে যাবেই । আর এ যে নেহাৎই আমার শিশুকালেরই কথা। পুরুলিয়ায় নীলকুঠিডাঙায়, হুচুকপাড়ায়  এই দুজায়গাতেই ছিল আমাদের বাসাবাড়ি।  যেখানে আমাদের বাসাবাড়ির বাগান থেকে অযোধ্যা পাহাড়ের দেখা মিলত। আর ছিল ছোটবেলার বন্ধু কাশীনাথ ভকত আর কৃষ্ণপ্রসাদ ভকত।  কৃষ্ণপ্রসাদ পরে এমএলএ হয়েছিল বলে শুনেছিলাম।  দিনের অনেকটা সময়ই ওদের বাগানের গাছে গাছেই কেটে যেত। আর আমার প্রথম স্কুল 'শিশুশিক্ষা'। প্রথম আবৃত্তি  ' এই দেখ নোটবুক, পেন্সিল এইহাতে'! তখন নেহাৎই শিশু ছিলাম তো। পরে অবশ্য জেলা স্কুলে আসি। সাহেব বাঁধ,  সাহেব বাঁধের লাল নীল মাছ, ভিক্টোরিয়া স্কুলের মাঠে ফুটবল পেটানো, প্রথম ছৌ নাচ দেখা। আড্ডা স্যার, দাদার জেকে কলেজ, দিদিদের শান্তিময়ী গার্লস স্কুল মায় সেখানকার হেড দিদিমণির চেহারাটাও জ্বলজ্বল করছে মনের মধ্যে। শুধু সেদিনের সেই বাচ্চা ছেলেটাই আর নেই। তাই পুরুলিয়া যাবার ইচ্ছে, ইচ্ছে হয়ে ছিল মনের মাঝারে।  আর সেই খোঁজে সঙ্গী এবার ননী। আজ প্রায় ছ দশকের পরে চলেছি পুরুলিয়ার পথে দেখি খোঁজ পায় কিনা  স্মৃতির অতলে লুকিয়ে থাকা সেই পুরুলিয়ার। দেখি আগামী কদিন কিসের দেখা মেলে। তবে গন্তব্য এবার অযোধ্যা পাহাড়। যার সাথে আমার দুরের বন্ধুত্ব। দেখি দুরের বন্ধুকে সে চিনতে পারে কি না?