আজ লেকের ধারে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলুম ভক্তি বড় না সত্যি। অখন্ড ভক্তি, বিশ্বাস, আনুগত্য এগুলো আমার কাপ অফ টি নয়। সত্য আর পরিবর্তন এর কি কোন বিকল্প আছে? নেই, অন্তত আমার কাছে। আজকাল চলতে ফিরতে বা নির্জনে বসেও সেই সত্যের সাধনাই করি। দেহ মিথ্যে হয়ে যায়। কামনা বাসনা মুছে যায়। শুধু জেগে থাকে প্রজ্ঞা। প্রজ্ঞায় স্থির হয়ে মহাচৈতনেই স্থিত হয়ে পরি। বেশ নিরাপদ লাগে, মৃত্যৃভয় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ফেরার পথে রবীন্দ্রনাথের এই কবিতাটা মনে এলো। কি আশ্চর্য সুন্দর আর সত্য।
পথে এবার নামো সাথী,পথেই হবে পথ চেনা!
আমার রোববারের রুটিন যারা জানেন, তারা আমার পথের রুটিনও জানেন। বেলেঘাটায় সুভাষ সরোবরের চারপাশে ৫/৭ কিলোমিটার হাঁটাহাঁটি করে ফেরার পথে বাটা মাছ কিনে ফিরে আসা। ঝুলিতে অবশ্য রসে টইটম্বুর জিলিপিও থাকে। কারণ, ভালো চাই কি সাথ, মিঠা মিঠা জিলিপি মেরা বহুত মনপসন্দ। আর বাঁটা মাছের ঝাল সেটাও সহস্তেই করি। এ ব্যাপারে আমার ব্যাপক খ্যাতি আছে। সেটা খ্যাতির বিড়ম্বনাও হয়তো।
আজকেও রোববার। আজও লম্বা লম্বা পায়ে হাঁটার ব্যাপার ছিল। তবে সেটা কিঞ্চিৎ বিপ্লবের গন্ধ মাখা। কলেজ স্কোয়ার থেকে শুরু করে, ধর্মতলায় জমায়েত। আমাদের সংগঠনের ব্যাঙ্ক বাঁচাও, দেশ বাঁচাও উদ্যোগের ব্যানারে। আমার অভিজ্ঞতায় বলে ব্যাঙ্কের কর্মচারীদের মাইনে/পেনশন বাঁড়ানোর কথা বললেই জনগণ বেজায় বক্রোক্তি করেন। সেইজন্যে বিশদে গেলাম না। তবে পেনশন আপডেশন ইত্যাদি কিছু কিছু না পাওয়া তো রয়েই গেছে। এর সাথে ছিল কন্ট্রাকচুয়াল কর্মীদের অনেক বঞ্চনার সুদীর্ঘ তালিকা। সেসবের গভীরে যাচ্ছি না। এরাই ছিল মিছিলের সিংহভাগ জুড়ে।
এরকম পদযাত্রায় আগে যে যাইনি এমনটি নয়। কামদুনি কান্ডের বিরুদ্ধে মিছিলেও গেছি। সেও এক অনন্য অভিজ্ঞতা। তবে আজকে লম্বা হেঁটে বেশ লাগলো। কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা খুব কম রাস্তা তো নয়। আরো একটা অভিজ্ঞতা আজ হলো। আমায় দেখি অনেকেই চেনে।আমার পেনশনার চেনা অচেনা অনেকেই। এ নিশ্চয় ফেসবুকের কেরামতি। বেশ ভালো লাগলো তাদের সাথে একসাথে ধর্মতলার ট্রাম গুমটিতে দাঁড়িয়ে চা খেতে।
ফেরার পথে আবার লং মার্চ। এবার এটা একান্তই আমার নিজস্ব। আমার এক গোপন ইচ্ছের সাকার রুপ দিতে। ধর্মতলা থেকে জানবাজার। জানবাজার তো চেনেন। সেই জানবাজার যেখানে রাণী রাসমণীর বাড়ি। পুরনো কলকাতার ব্যক্তিত্বময়ী এক নারী। যিনি দক্ষিণেশ্বর মন্দির প্রতিষ্টা করেন। বাংলার রেঁনেসার সেই যুগে নিজ গুণে আলোকিত করেছেন, নতুন বাঙলার মঞ্চ। সেই রাণী রাসমণির বাড়ীর ঠিক পেছনেই এই সিদ্ধেশ্বরী আশ্রম। আইকনিক পাইস হোটেল। বহুদিনের ইচ্ছে আসার। আজ এই লং মার্চের আশুফল অবশ্যই সিদ্ধেশ্বরী আশ্রমের মধ্যাহ্ন ভোজন। লাঞ্চ এইসব জায়গার খ্যাতির সাথে মেলে না। তাই মধ্যাহ্ন ভোজন। তা কি ছিল এই বহু প্রতিক্ষিত ভোজনে? সে তো দীর্ঘ মেনু, তা এই শর্মার কম্ম নয় জব্দ করার। নিয়েছিলাম মুসুরের ডাল, আলু ভাজা, ভেটকী মাছের কাটাচচ্চড়ি আর জাম্বো পাবদা। ভাতের পাহাড় আর পাবদা মাছের সাইজ দেখে কান্না পাচ্ছিল। এই পেটরোগা বামুনের সাধ্যি কি একে জব্দ করার। ধীরে সুস্থে তাও কিছুটা বশে এল। বহুদিনের বাসনা পূর্ণ হলো। রসনাও তৃপ্ত হলো। আর কোন ক্ষেদ রইলো না। এবার পেনশনটা আপডেশন হলেই ষোলকলা পূর্ণ হয়। জীবনে আর কিছু চাওয়ার রইবে না। পুরুর মতো হৃত যৌবন আর ফেরৎ চাইব না। তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে।।
ফেরাটা আর পায়ে হেঁটে নয়। জ্যোতির সামনে থেকে পেয়ে গেলাম এসি ট্রাম। ভাড়া মাত্রই ২০ টাকা। জানলার ধারে পুরনো কলকাতা দেখতে দেখতে ফিরে চললাম। আমার সাথে আপনারাও দেখুন সেই পুরনো বিবর্ণ মনকাড়া কলকাতা সেই পথ ধরে। যে পথ ধরে একদিন চলেছেন, রামমোহন, বিদ্যাসাগর, রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ আরো না কতো কতো সব আলোক পুরুষেরা। আপনারাও চলুন আমার সাথে সেই পথ ধরেই।
No comments:
Post a Comment