...জীবন পাত্র উছলি উঠেছে...
রোববার আমার ছুটির দিন। এ দিন আমি কোন চেনা রাস্তায় ঢুকিনা। না করি কোন কাজ। অনেকেই বলেন, বিশ্রাম করুন। আসলে বিশ্রাম যে কি তা আমার মাথায় ঢোকেনা মোটেই। বিশ্রাম মানে যদি চুপচাপ শুয়ে বসা হয়ে থাকে তাহলে তো সে রীতিমতো অত্যাচার। তাই বিশ্রাম মানেই আমার কাছে অচেনা রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো। বা ধরুন বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারা, বই পড়া এইসব। এই রোববার ঠিকই ছিল ভবানীপুরে সুজিতের বাড়ী যাব। সুজিতের জন্মদিন গেছে কদিন আগে। তাই সুজিতের বাড়ীতেই আমি আর পল্টা পৌঁছে গেলাম সময়েই। সুজিতের দাদা সুব্রতদা আমাদেরও বন্ধু। এর আগেও আমরা একসঙ্গে পঞ্চলিঙ্গেশর, বালাসোর ঘুরে এসেছি। এরকম দাদা যার আছে সেই ভাইয়েরা কেউ খারাপ হতেই পারে না। তাই আমরাও কেউ খারাপ নয়। ভারী সুশীল আর সজ্জন। আর সুজিতের কথা, 'কেয়া কহেনা'! এরকম বন্ধু যার আছে, সে ওর ঘাড়ে সব ভার চাপিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারে। সুজিত সব সামলে নেবে। সুব্রতদার সাথে অনেকদিন বেরোন হয়নি সেইরকমই আর একটা প্রোগ্রাম চটজলদি ফিক্স হয়ে গেল,পুজোর পরে পরেই। এবার ননীর সাথে বসে একটু ফাইন টিউন করতে হবে। এখন আমাদের প্রতি মাসেই বাইরে যাবার আমন্ত্রণ। নদী পর্বত, জল জঙ্গল পরিক্রমা চলবে প্রায় প্রতি মাসেই।
সে যাই হোক, সুজিতের বাড়ী যখন গেছি জন্মদিনের অজুহাতে ও কি আর ছাড়বে মিষ্টি ছাড়া। ভবানীপুরের অলিতে গলিতে মিষ্টির দোকান। তাই থালা ভর্তি মিষ্টি নিয়ে হাজির সুজিতের ঘরণী। আমার আবার খেতে ভাল লাগে না, তাই মিষ্টি। ভাগ্যিস পল্টা ছিল, তাই ওর প্লেটে অর্ধেক চালান করে হাল্কা হলুম। বাকীটা দিলুম সুজিতকে।
সুজিতের বাড়ী ছেড়ে গন্তব্য এবার সেই মাইখানা যেখানে গালিব, ওমর খৈয়ামের মত গুণী জনেরা জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় কাটিয়েছেন। আমরাও চললাম তাদের পথ ধরেই। এবারও আড্ডা, তবে ঠোঁট ছুয়ে ছিল সিরাজীর পেয়ালা। তবে সুজিতের আজকাল বড়ই ছোয়াছুয়ির বাই , লিমকা ছাড়া কিছুই হাতে নেয়না। অবশ্য তার একটা কারণও আছে, যেটা সুজিতকে আরও দায়িত্বশীল করেছে। তিন ঘন্টা তর তর করে কেটে গেল। আজকে অরুণ আর বড়ভাই বলরামেরও আসবার কথা ছিল। বলরাম চারমাসের জন্য বিদেশে চলে যাবে তাই ব্যাস্ত, শেষমুহূর্তের ব্যাস্ততা ফেলে আসতে পারল না। বলরাম না থাকলে আমাদেরও ফাঁকা ফাঁকা লাগে। সংসারের বড়ভাই না থাকলে যা হয়। একটা সেন্স অফ ইনসিকিউরিটি ঘিরে থাকে ছোট ভাইদের ঘিরে।
আজ যখন জীবনে কি পেয়েছি বা পায়নি, তার হিসেব মিলাতে বসি, তবে দেখব পাওয়ার ঘড়াই পরিপূর্ণ। বন্ধুর মত বন্ধুরা এসে হাত ধরেছে। অনেকেই বলে জীবনের পথ বন্ধুর। কিন্তু বন্ধু যদি থাকে তাহলে কোন পথই বন্ধুর মনে হয় না। একবার বর্ষার গঙ্গা সাঁতার দিয়ে পেরোতে গিয়ে গঙ্গার খরস্রোতে ভেসে যাচ্ছিলাম তখন আমার ছোটবেলার দামাল বন্ধু সতুই আমার রক্ষাকর্তা হয়ে এসেছিল। তাই আজও এই পৃথিবীর বুকে ভেসে আছি। জীবনের সব পর্যায়ে বন্ধুত্বের হাতছানি ডাক দিয়েছে। অপু, পন্ডিত, ছোটে নবাব, পাপ্পু নবাব, আলিবাম, মীজানুর এরা সবাই সুধায় দিয়েছে ভরে এই জীবন,তাই এত সুন্দর এই পৃথিবী। আজ হয়ত তারা অনেকেই ছিটকে গেছে।
কিন্তু বন্ধুর আসন অপুর্ণ থাকেনি। আমার বড় কালের বন্ধুদের তো অনেকেই চেনেন। সুজিত, পল্টা, অরুণ, বড়ভাই বলরাম, আরো অনেকেই। তাই জীবনপাত্র পরিপূর্ণ। কোন অভাব নেই, অভিযোগ নেই। বন্ধুত্বের মাধুরীতে সব অভাব গেছে ধুয়ে মুছে।
No comments:
Post a Comment