দালমায় কিছুক্ষণ
আজ গিয়েছিলাম দালমা। কি মনে হচ্ছে? হাতীদের সাথে গল্পগুজব করতে। মোটেই নয়। এতো সাহস আমার কোনদিন ছিলনা আর হবেওনা কোনদিন। আর আমিও কোন প্রকৃতেশ বড়ুয়া নয়, যে হাতীদের ভালোবেসে চিরজীবন জঙ্গলেই কাটিয়ে দেব। শুনেছি, তিনি নাকি হাতীদের সাথে কানে কানে কথাও বলতেন। পাগল আর কি। ও কম্ম কি আমার পোষায় না সাজে। তা ছাড়া হাতীরা তো প্রায়ই আসে ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুরের জঙ্গলে। সেখানে যাওয়া যেতেই পারে, যদি ইচ্ছে হয়। এই কয়েকমাস আগেই তো গিয়েছিলাম গুড়গুড়িপাল জঙ্গলে ননীর সাথে, হাতী কে সাথী করার ইচ্ছে নিয়ে। কিন্তু হাতী কথা রাখে নি। আসলে,কেউ কথা রাখে না। বলেই তো গেছেন সুনীল তার সেই মন কেমন করা কবিতায়।
তাছাড়া আমি এখন আছি পুরীতে। এখান থেকে দলমা অনেক দূর। কাছাকাছি বরং পুরীতেই খুঁজে দেখা যাক। নিশ্চয় পেয়ে যাবো। লিপুকেই বরং পাত্তা নিতে বলি। লিপু আমাদের হলিডে হোমের এক হোনহার লেড়কা। ও সব জানে। কোথায় সেই দালমা?
খোঁজ পাওয়াও গেল। কাছেই একদম হাঁটা দূরত্বে। টুকটুকে গেলে মাত্র ৫০। কিমিতে নয় টাকায়।
বেড়িয়ে পড়লাম দালমার উদ্যেশে। হেঁটে নয়, টুকটুকেই টুকটুক করে। আর পৌঁছেও গেলাম অল্প সময়েই। এবার বুঝলেন তো দালমার রহস্য। না? তাহলে আরো খুলে বলতে হবে। অগত্যা, কি আর করা।
'দালমা' একটা ওড়িয়া খাবারের রেঁস্তোরা বলুন হোটেল বলুন, তাইই।
'দালমা' উড়িষ্যার এক বিখ্যাত ডেলিকেসি। কি বলুন তো? ডাল আর তার সাথে প্রচুর সবজী দিয়ে একটা চমৎকার প্রিপারেশন। দারুণ স্বাদ। আমার ঠাকুমার নিত্য রান্নায় এ পদ থাকতোই। সে বুড়ীর রান্নায় এতো স্বাদ ছিল যে আমরা সব ভাই বোনেরা হত্যে দিয়ে বসে থাকতাম তার রান্নাঘরের দোরগোড়ায়। ভেতরে ঢোকা ছিলো বারণ। রান্না শেষে, বুড়ী এক এক দলা আলগোছে ফেলে দিতো আমাদের বাড়ানো হাতে। আর তার যে কি স্বাদ, সে বলে বোঝানই যাবে না।
পুরীতে যতবারই আসি, ততবারই খাওয়া সারি ভজহরি মান্না, কস্তুরী, ষোল আনা বাঙালী এইসব জায়গাতেই। বাঙালী খাবারের ছকের বাইরে যাইনি খুব বড় একটা। তবে আস্তে আস্তে পাল্টাচ্ছি একটু একটু করে। এর আগে চ্যাঙ ওয়াকে ঢুকিয়ে নিয়েছি, আমাদের পুরীর রুটিনে।
এবার নতুন এন্ট্রি 'দালমা' র। বেশ হোটেল। চমৎকার রান্না। কলকাতার লোকেদের বেশ পরিচয় আছে, ওড়িয়া ঠাকুরের রান্নার সাথে। আমাদের বাড়ীর কাজেও আসে একজন। নাম গোকুল, কিন্তু ইয়ার্কি করে সবাই ডাকে হোকুল বলে। এ ভারী অন্যায়। তবে গোকুলের হাসিমুখ ব্যাজার হয় না মোটেই এইসব ঠাট্টা তামাসায়।
বড্ড আজেবাজে কথা লিখে ফেলছি। সময় নষ্ট করছি আপনাদের। আসলে বাইরে এখন বেশ রোদ। বেড়োতে দেরী। তাই নিজের বোরনেস কাটাতে আপনাদের বোর করি বরং কিছুক্ষণ। আমার টার্গেট অডিয়েন্স তো সেই সব কাজকর্ম শিকেয় তোলা পেনশনাররাই।এটা একরকম সাহায্যই করবে তাদের, বিষে বিষক্ষয়ের মতো।
এবার ডালমায় কি খেয়েছি বলি। যদি কলকাতার উড়িয়া ঠাকুরদের রান্না খাবারের দিয়ে বিচার করেন, তাহলে ঠকে যাবেন বিলক্ষণ। খাঁটি ওড়িয়া খাবার স্বাদে গন্ধে কি বলবো? It's differert, Boss. Really different. আমরা অবশ্য ওদের বিখ্যাত পাঁখাল খাই নি। পাঁখাল হলো আমাদের পান্তাভাত। দেখলাম ওখানে অনেকেই পাঁখাল খাচ্ছে। সঙ্গে অনেকরকম সবজী, মৌরলার ঝাল ইত্যাদি। আমরা একটু সেফই খেললাম। প্রথমবার তো।তবে সুগন্ধী চালের ভাতের সাথে অবশ্যই ছিলো দালমা, ওটাই সিগনেচার আইটেম। তার সাথে শাক আরো সব সাত সতোরো অনেক কিছু । টক টক, মিঠে মিঠে, বেশ স্বাদ। আর আ লা কার্ত মেনু থেকে মাছ আর মাংস। পরিশেষে অবশ্যই পরমান্ন, ওড়িয়া মেনুর একটা বৈশিষ্ট্য। কেমন খেলাম? বেশ খেলাম, পরিতৃপ্তি করে খেয়ে ফেরলাম দুজনে, আমি আর কুন্তলা। কুন্তলা কে? এতোবছর পরে আবার বলতে হবে। ওই আর কি, কমলি নেহি ছোঁড়তা। 😁
তাহলে ওই কথাই রইলো। আপনাদের পুরীর মেনুতে নতুন সংযোজন হোক এবার থেকে লী রোডের ' চ্যাং ওয়ার' পরে ভি আই পি রোডের 'দালমা'!
No comments:
Post a Comment