আজ নবমী
আজকের ছবি
ভুবন সোম
ন'দিন পেরোতে চললো। এখনো মৃনাল সেনের কোন ছবির কথাই আসেনি। তাই কি হয়? আজকের ছবি আমার বিশেষ ভালোলাগার ছবি মৃনাল সেনের, 'ভুবন সোম'!
এ ছবিও অনেক আগের দেখা। বোধহয় তখন কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের ছোকরা। প্রায় ফাঁকা হলে আমি আর আমার পিসতুতো ভাই বাবলু বহরমপুরের কল্পনা সিনেমা হলে দেখেছিলুম। অনেকটাই ভুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু ভালো লাগাটা মনে বেশ ছাপ রেখে গিয়েছিল। তাই আজ আবার ইউ টিউবে এই ছবি দেখে নিলাম। ছোট ছবি। সাদা কালোয় ঝকঝকে ছবি,বোর হবেন না মোটেই, মুগ্ধ যে হবেন এ কথা বলতেই পারি। সেই সময়ে তিন তিনটে ন্যাশনাল এওয়ার্ড পেয়েছিল এই ছবি। শ্রেষ্ঠ ফিচার ফিল্ম, শ্রেষ্ঠ পরিচালক আর শ্রেষ্ঠ অভিনেতা। আর ভুবন সোম কে জানেন? উৎপল দত্ত। তার অসাধারণ অভিনয়ের জন্য তিনি সে বছরের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হয়েছিলেন। আর ছিলেন সুহাসিনী মূলে।ভারী মিষ্টি এক গুজরাটি গাঁয়ের বধুর চরিত্রে।
এ ছবি ভারতীয় চলচ্চিত্রে ন্যু ওয়েভের পথিকৃৎ। শ্যাম বেনেগাল তো তার অনেক পরে এসেছেন। যদিও ফিল্ম বোদ্ধা নয়, তবু্ও এ ছবির ট্রিটমেন্ট মুগ্ধ করেছিল।জাম্প কাট কি তা প্রথম এই ছবি দেখেই জানলাম। ভারী মুগ্ধ করেছিল আমার মত আনপড় আদমীকেও। এ ছবির সরলতা, নিপুণ বুননী আবিষ্ট করে রাখবে যে কাউকে। এ ছবির থিম কিন্তু জীবনের একঘেয়েমি, সরলতা,সমবেদনা আর সহভাতৃত্বকে কে ঘিরেই।
মূল গল্পটা এইরকম।
ভুবন সোম রেলের এক উচ্চপদস্থ অফিসার। সৎ, ভীষণ কড়া, কোন দুর্নীতিই তিনি বরদাস্ত করেন না। রেলের কর্মীরা তাই তাকে নিয়ে সন্ত্রস্ত। এই পরিচয় নিয়েই ভুবন সোমের প্রবেশ গুজরাটের কোন এক গ্রামে পাখি শিকারের জন্যে। এখানেই তার দেখা গ্রামের বধু গৌরীর সাথে। গৌরীর সাহায্যেই তিনি পরিচিত হলেন প্রকৃতির মাঝে, পাখিদের সাথে। শহুরে জীবনের ধরাচূড়া ছেড়ে গ্রামের পোষাকে তিনি মিশে গেলেন প্রকৃতির সাথে, পাখীদের সাথে, জীবনের সাথে। চিনতে পারলেন জীবনের সরলতাকে, বুঝতে পারলেন সমবেদনা, সহভাতৃত্বের মূল্য। ভুবন সোম পাখি শিকার করতে পারলেন কি, না, সেটা কোন প্রসঙ্গই নয়। তবে শহরে ফিরে এলেন এক অন্য ভুবন সোম। বড় সমব্যথী, মানুষের প্রতি জীবনের প্রতি। দুর্নীতির দায়ে এক রেলের কর্মীকে তিনি দিয়ে দিলেন বেকসুর খালাস৷ জাম্পকাট করে যেন ফিরে এলেন তিনি জীবনের মূলস্রোতে।
No comments:
Post a Comment