কোন এক পূজোর সময় লেখা
আজ অষ্টমী
আজকের ছবি
চারুলতা
এবার পুজো হবে কি হবেনা, তার ঠিক নেই আর আমি অষ্টমীর ঢাকে কাঠি দিয়ে দিলাম। এ অবশ্য আমার কৃতিত্ব নয়। এই অকাল বোধনের দায় দায়িত্ব সবই দীপকের। আমি শুধু হুকুম তামিল করে গেছি। এর পাপ পূন্য কোন কিছুই আমি চাইনে, শুদ্ধা ভক্তি, সেও আমার নয়। ভক্তি তো unconditional surrender. আমরা মুকসুদাবাদের লোক, চিরকালের ঘাড়টেঁড়া। শির নেহারি নতশির ওই... আর যার হয় হোক, ও আমাদের নয়। ভক্তির বদলে ভালোবাসা বরং ঢের ঢের ভালো। তিরতিরে হাওয়ার মত ছুঁয়ে যাবে,বয়ে যাবে কিন্তু বেঁধে রাখবে না।
আজকের ছবি চারুলতা। একদিকে রবীন্দ্রনাথের 'নষ্টনীড়' আর তাকে নিয়ে সত্যজিতের আঁকা কবিতা সেলুলয়েডে। আমরা এ ছবি দেখেছি স্কুলে পড়তে৷ তখন বোধহয় ক্লাস টেনে লালবাগের নবাব বাহাদুর স্কুলে। ছোটবেলা থেকেই আমাদের ধুম আড্ডা চলত। কখনও মতিঝিলে কখনো হাজারদুয়ারীর সিঁড়িতে আর কখনো বা আমাদের স্কুলের বিরাট হোস্টেলে। আরও অজস্র কতো জায়গায়ই যে ছিল,তবে এতসব জেনে কাজ নেই আপনাদের। মূল কথা আড্ডা হত জমজমাট।নবাব ওমরাহ থেকে হরিপদ কেরাণীর ছেলে সবাই আমরা বন্ধু। বন্ধুদের মধ্যে কি কোন ওপর নীচ থাকে। বন্ধু সবাই এক একজন হীরের টুকরো। আড্ডার কিন্তু কোনদিনও ছুটি নেই। বরং ছুটির দিনে সকাল বিকেল দুবেলায়। ওই বয়সেই সিগারেট ফোঁকা শিখে নিয়েছিলাম। আমাদের প্রথম প্রেম চারমিনার। আমার বা আমাদের এই ব্যসনের গুরু ছিল, পাপ্পু নবাব। নবাব হলে কি হবে, এক নম্বরের বয়াটে ছোকরা। শুধু সিগারেট ফোঁকাই নয় কত সব দুষ্টু দুষ্টু ছড়াই যে শিখিয়েছিল, তা আর কহতব্য নয়।
তবে , চারুলতা দেখার পরেই কিন্তু চারমিনার হয়ে গেলো আমাদের আদরের 'চারু'! চারমিনার কে আদর করে এই নামেই ডাকতাম আমরা। এখন আর আমাদের সেই চারমিনারও নেই, নেই সেই আদরের ডাক, "আমার চারু আছে'!
এমন একটা ধ্রুপদী ছবির আলোচনায় শুধু ফক্কুড়ি করে গেলাম। আসলে এতো সব জ্ঞানগর্ভ আলোচনার রসদ মানে জ্ঞানই নেই আমার। দীপককে ট্যাগ করে দিলাম, আমি নিশ্চিত ও সেই খামতি টুকু ঠিক পূরণ করে দেবে। দীপকে আমার ভারী বিশ্বাস। তবে পরীক্ষার খাতায় কিছুই কি লিখতে পারব না। সাদা খাতা? কভি নেহি।
এ ছবি সবাই দেখেছেন,
কি? না দেখলে দেখে নিন ইউটিউবে। সুন্দর এক কবিতার মত।একাকিত্বের ছবি,ভালোবাসার ছবি। হয়ত নিরুচ্চার। শীতের নদীর মত, যার ছলছলে স্বচ্ছ জলের মতই, সব দেখা যায় কিন্তু ছোঁয়া যায়না। এ ছবি তেমনই অন্তত তাই আমার অনুভবে ধরা দেয়। ফিল্ম বোদ্ধারা কি বলবেন, তা জানি না। তবে ভারী well crafted, meticulous. এবার যখন আবার দেখলাম,মনে হল এতটা নিঁখুত হবার কি কোন প্রয়োজন ছিল? এ ছবির দুটো দৃশ্য কিন্তু ভারী মনে রাখার মত। শুরুতে মাধবীর বায়নাকুলার হাতে বাড়ীর জানালায় জানালায় ছুটে বেড়ানো, যা তার অসহায় একাকীত্বের প্রতিচ্ছবি। আর শেষ দৃশ্য চারু আর ভূপতি এক ফ্রেমে হঠাৎ ফ্রিজ হয়ে যাওয়া। ক্রমশ লং শট। নষ্টনীড় বোঝাতে আর কিছুর দরকারই ছিল না। এর বেশী কিছু বুঝে থাকলে আমাকে জানাবেন কিন্তু। অষ্টমীর পূজো শেষ, এবার সন্ধি পূজার আয়োজনে লেগে পড়ি?
No comments:
Post a Comment