গত কয়েকদিন ধরেই ফেসবুক মেতেছিল ননীগোপালের দোলখেলা নিয়ে। সে যে কি রঙ্গ তামাসা হয়েছে, তা দুচোখ দিয়ে না দেখলে পেত্যয় হবে না। ফেসবুকেও তার কিছু আভাস দিয়েছি আমরা সবাই। অনেকেই দেখেছেন বুড়ো ধামড়াদের লীলাকীর্তন।
তবে দোলের দোলন এবার শেষ হয়েছে। যে যার ঘরে গিয়েছে ফিরে। তবু মনে হলো এ সবের সামনে যারা আসেনি, পেছন থেকে এই বুড়োদের আবদার, চাহিদার জোগান যারা দিয়ে গেছে মুখে ম্লান হাসি নিয়ে, তাদেরও সামনে আসা দরকার।
প্রথমেই যার কথা মনে এলো সে রিয়া। রিয়া কিন্তু বেশ আধুনিক নাম। বড়লোকের আদুরে মেয়েরাই যে শুধু রিয়া হবে এমনতো নয়। আমাদের আজকের চরিত্র, রিয়া কিন্তু পিতৃমাতৃহীন। কোথায় না কোথায় অনাদরে অবহেলায় বেড়ে উঠেছে, সে কে বা জানে? রিয়া কিন্তু বাঙালী কোন মেয়ে নয়। রিয়া তামাং। তামাং উত্তরবঙ্গের এক আদিবাসী প্রজাতির মেয়ে। যে দুদিন আমরা রেনীতে ছিলাম, আমাদের সব চাহিদার জোগান দিয়ে গিয়েছে নিরন্তর।ভারী দু:খী মেয়ে, মুখ দেখলেই বড় মায়া জাগে। ওর সম্মন্ধে আমি এতকিছু জানতে পারতাম না যদি না ননী বলতো। রিয়া ননীর সাথে দীর্ঘ পথ হেঁটে গিয়েছিল রেলী বাজারে আমাদেরই কারুর এক জরুরী ওষুধের প্রয়োজনে। ননীর একটা বড় গুণ সবার সাথেই সহজভাবে মিশতে জানে। ওই দীর্ঘপথে ও রিয়ার ছোট্ট জীবনের বড় বড় দু:খের অংশীদার হয়ে গিয়েছিল।ননীর পিতৃহৃদয় সে দু:খের কথা শুনে উদ্বেলিত হয়ে উঠেছিল। ওই ছোট্ট বাজারে কি আর পাওয়া যায়? রিয়ার ছোট্ট দুটি হাত অজস্র চকোলেট দিয়ে সে ভরিয়ে দিয়েছিল।
এখানেই কিন্তু গল্পের শেষ নয়। ওপরে রিয়ার পাশে যাকে দেখছেন, সে রোনাল্ড। রোনাল্ড লেপচা। লেপচারাই দার্জিলিং এর আদত আদিবাসী। রোনাল্ড কি এমন করলো, যাতে রিয়ার দু:খের দিনের অবসান হলো? স্রেফ রোনাল্ড রিয়াকো ভাগাকে লে গিয়া থা। দুজনেই সাদী করেছে। কাজ করছে দুজনেই ওই রিসোর্টেই। আর উপরে যে পুঁচকেটার ছবি দেখছেন, ও জাস্টিন লেপচা। রিয়ার দেওর। রিয়ার শ্বশুরও ভারী ইয়োং আর ভালোমানুষ। আমাদের জন্যে পাহাড়ী নদীর মাছ ধরে এনেছিল। রিয়া আর জাস্টিন মিলে সে মাছও রান্না করে খাইয়েছিল এই ধেড়ে খোকাদের। সেই রান্না ওদের ভালোবাসার গন্ধ আর ওমে ভরপুর। তার তুলনা শহরের নামী দামী রেঁস্তোরার সাথে হতেই পারে না।
আজ রিয়া সুখী। ভালো বর ও ঘর পেয়েছে। রিয়ার শ্বশুরবাড়ীও রিয়াকে মেনে নিয়েছে। ওরা সবাই মিলে নিটোল এক ভালোবাসার ছবি। আপনারাও সবাই ওদের আশীর্বাদ করুন যাতে ওদের আগামী দিনের পথ প্রশস্ত হয়। হয়ত অভাব আছে, থাকবেও, তাও ওরা সবাই মিলে একসাথে এগিয়ে চলুক। এর বেশী জীবনে আর কি বা, চাই?
No comments:
Post a Comment