পুরনো লেখা
চলতে চলতে
আজ কলেজ স্ট্রীট যেতে হয়েছিল একটি জরুরী কাজে। জরুরী আবার জরুরী নয়ও। ওই শ্রডিঙ্গারের বেড়ালের মতই অনেকটা। একটু বেরিয়ে পরার ছুতো। কিন্ত বাটার মোড়ে নেমে মনে হল এর থেকে জরুরী একটা কাজ বাকী রয়ে গেছে। দীপকবাবুর খবর নেওয়া। দীপক বাবুকে নিশ্চয় ভুলে জাননি এরমধ্যে। দীপক গুপ্ত, রামকৃষ্ণ কথামৃতের,কথাকার শ্রীম, মহেন্দ্র গুপ্তের প্রপৌত্র। কর্মজীবনে তিনি ছিলেন বিদ্যাসাগর কলেজের অর্থনীতির বিভাগীয় প্রধান। বহুদিন অবসর নিয়েছেন। আমার সাথে তার বিশেষ ভালবাসার/স্নেহের সম্পর্ক । কিন্তু বেশ কিছুদিন তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি।দোষ একতরফা আমারই। আজ তাই আমার জরুরী কাজ ছিল আগে তার খবর নেবার, তার সঙ্গে দেখা করার।
লাহাদের বাড়ীগুলো পাশে রেখে এগোলাম, কথামৃত ভবনের দিকে। এই অঞ্চল আমার খুবই পরিচিত এবং প্রিয়।লাহাবাড়ী, দেবদের বাড়ী, মিত্রদের বাড়ী, দত্তদের বাড়ী এককালের বনেদীয়ানার কেষ্টবিষ্টু সব। আমাদের সাথে এদের যোগাযোগ ছিল খুবই নিবিড়। পথে পরল ঠনঠনিয়া কালীবাড়ী। যদিও অবিশ্বাসী মানে বিশ্বাসের জোর খুজে পাইনে। দেবদেবতা, গুরুস্থানীয়দের নিয়ে মস্করা করতে ছাড়ি না, তবুও অভ্যাস বসে একটা পেন্নামই ঠুকে দিলাম মায়ের পায়ে।যতটা না দেবতা জ্ঞানে,তার থেকে পাশের বাড়ীর ঠাকরুন ভেবে। ঠনঠনিয়া কালীবাড়ীতে ঘোষেদের অংশীদারি আছে। ঘোষবাড়ীর বউ কল্যাণী আমার বিশেষ প্রিয়পাত্রী ছিলেন এককালে। মাকালীর প্রসাদী শাড়ী, প্রসাদ অনেক পেয়েছি হাত ভর্তি করে। আসলে ঠনঠনিয়াই তে তার ডাব চিনি দিয়ে মানত, কখনো কেশবের জন্য কখনো বা মথুরের তরে। যুক্তির জালে যতই তাদের উড়িয়ে দিই, হৃদয়ের টানে কি ভাবে যেন বাঁধা পরে যায় তাদের কাছে। তাই এই উত্তরেই আমার সব প্রশ্নের উত্তর আর সব ভালবাসা এই উত্তরকে ঘিরেই। এযে বেঙ্গল রেঁনেসার আতুড়ঘর, এর প্রতিটি ধুলিকণায় যে পবিত্র সেই সব মহাপুরুষদের নিত্য আসা যাওয়া। কে সেখানে নেই? রামমোহন, রবি ঠাকুর, বিবেকানন্দ, কেশব। তাই এই উত্তর কলকাতার বাড়ীঘর, স্থাপত্য, রাস্তাঘাটে সবেতেই বাঙালি ঐতিহ্যের সোঁদা গন্ধ আমার প্রাণ মনকে আবিষ্ট করে রাখে।
শংকর ঘোষ লেনে ঢুকে , রঞ্জিতের সাথে দেখা হল। রঞ্জিত সিং, ব্যাবসায়ী। পানের দোকান থেকে আজ বিরাট ব্যবসার মালিক। এর পেছনে অবশ্য স্টেট ব্যাংকের একটা ভুমিকা আছে । রঞ্জিতের দোকান থেকে বেশী দূরে নয় কথামৃত ভবন। বিদ্যাসাগর কলেজ পেরিয়েই,পৌছে গেলাম কথামৃত ভবনে। চেনা বাড়ী,বহুবার এসেছি। একইরকম আছে। সিঁড়ি পেরিয়ে দোতলায় উঠেই তার দেখা। তার চওড়া হাসি দেখেই মনে হল, আমাকে চিনতে তার একটুও সময় লাগেনি
দীপকবাবুর কথা শুনলেই বুঝবেন, ইনি কথামৃতর জীবন্ত সংস্করণ। তিনি বলেন,আমি শুনি। আমার আজেবাজের প্রশ্নের সন্দেহের সস্নেহ উত্তর থাকে তার ভাঁড়ারে। তিনি মোটেই রামকৃষ্ণের চৌকিদারি বা খবরদারির মধ্যে নেই। তার এই সহজ ভাবটা আমার বেশ লাগে। আমিও কথা বলে আরাম পাই।কথায় কথায় কেটে গেল দুটি ঘন্টা। এবার রওনা দিলাম ইউনিভার্সিটির দিকে। তবে আসার আগে কথা দিতে হল, আবার আসব এবং খুব শিগ্রিই। এবার যখন যাব তোমাদেরও সঙ্গে নিয়ে যাব, একলা যাবনা। পরিচয় হবে বাঙ্গালীর ইতিহাসের সঙ্গে। ফেরার পথে এক চলতি ট্রামে লাফিয়ে উঠে পরলাম।ট্রামে চড়ার সাথে পুরোন কলকাতার ভারি মিলমিশ। আমার মেজাজের সাথে বেশ টুংটাং করে হেলেদুলে চলে। অযথা এত তাড়াহুড়োর কিই বা দরকার? চলুক না এইভাবেই।
No comments:
Post a Comment