Sunday, 21 June 2020

ছোট ছোট সুখ

আমি যে খুব খেতে ভালবাসি, এমনটি কিন্তু নয়। একসময় বিরিয়ানি খুব খুব ভালবাসতাম। সারা ভারত ঘুরেই বিরিয়ানি খেয়েছি এমনকি বিদেশেও।  কিন্তু কলকাতার বিরিয়ানি?  ভূভারতে তার জুড়ি নেই। কলকাতায়ও কম দোকানে যাইনি বিরিয়ানির জন্য। সে রয়াল হোক চা







ই আরসালান কি আলিবাবা কেউ মুখে লাগবে না যদি আপনি খেয়ে থাকেন সিরাজের বিরিয়ানি।  পার্কস্ট্রিটের মোড় আসার আগে থেকেই গন্ধে গন্ধে পাগল করে দেবে, শেষে মোড়ের মুখে এসে নতজানু হয়ে সম্পুর্ণ আত্মসমর্পণ করতেই হবে আপনাকে। মুখে দেবেন এর গন্ধ স্পর্শ স্বাদ আপনার চেতনার স্তরে স্তরে সারেঙ্গীর ছড় বোলাবে। সুরের সাত সংগমে আপনি মোহিত শুধু নয় হবেন বাক্য রহিত। এমনই লা জবাব এই বিরিয়ানি। তবে আজকের এই ছোট সুখের আসরে বিরিয়ানির জায়গা নেই। এ নিতান্তই সাদামাটা সহজ সরল সুখ। কিন্তু এর ব্যাপ্তি অনেকটা জায়গা আর অনেকটাই সময় নিয়ে। এও কিন্তু খাবারেরই কথা। তবে এ খাবার ফরমায়েসীও নয় নিতান্তই আমজনতার নিত্যদিনের খাবার। তবে স্থান সময় বিশেষে তাও হয়ে ওঠে অনন্য।

একসময় আমার কাশ্মীরে ছিল নিত্য  আসাযাওয়া। যেখানেই গেছি ফেরার পথে ঠিক কাশ্মীর ছুয়ে এসেছি, এমনই আমার কাশ্মীর প্রীতি। এ গল্পেও কাশ্মীর আছে কিন্তু নেইও আবার।

আজ থেকে বছর ২৫ হবে দিল্লি এয়ারপোর্টে নেমে আমাদের ট্রাভেল এজেন্টের পাঠানো গাড়ীতে চেপে বসলাম। গন্তব্য কুলু,মানালী, ধরমশালা, চাম্বা ইত্যাদি ইত্যাদি। সঙ্গে সঙ্গীসাথী অনেক মানে আমারই জ্ঞাতিগুষ্টি সব। পরিবার, পরিজন।  মথুরা রোড ধরে যাত্রা হল শুরু মানালীর উদ্দেশ্যে।  আমাদের রথের সারথি ছিল এক ছোকরা। সনু তার নাম৷ ভারী চৌখস, দিল্লিরই ছেলে। সদ্য বিয়ে করেছে৷ নতুন বৌকে ফেলে সেও আমাদের দ্বীপান্তরের সঙ্গী। অবশ্য ওটাই ওর কাজ, আমি দুঃখ পেলেও ওর কোন ভাবান্তর ছিল না। সারা রাত  সুমোর পিঠে চড়ে চলল আমাদের যাত্রা। আর ক্যাসেটে অনর্গল বাজিয়ে চলল, শোভা মুদগল। ডাকিয়া ডাক লায়া, আয়ি মেরে সাজনা আরও কত কি সব। শোভা মুদগলের এই গান হয়ে গেল আমাদের গোটা ট্যুরের থিম সঙ। পাহাড়ি ব্যাকগ্রাউন্ডে শোভা মুদগলের হাস্কি গলার ফোক সঙ,গোটা ট্যুরকেই করে তুলল অতুলনীয়। গোটা রাত ঢুলতে ঢুলতে ভোর ভোর এসে পড়লাম এক ছোট্ট পাহাড়ি চটিতে। একদিকে পাহাড় আর অন্যদিকে খাদ,  আর সেই খাদ ঘেঁষেই এক ছোট্ট ধাবা। এক অতুলনীয় নিসর্গের পাশে সামান্য একচিলতে একটা ধাবা। কি স্পর্ধা। হজম করতে কষ্ট হলেও ওখানেই ব্রেকফাস্ট।  বাঁধা মেনু। তাই বলা হল। এল আলুপরোটা, তেলে বা ঘিয়ে ভাজা নয়, বেক করেই প্লেটে দিয়ে দিল আর ওপরে এক কিউব মাখন। গরম পরোটার উপর মাখন গলে গলে  ছড়িয়ে পরছে আর ছড়িয়ে পরছে তার মূর্ছনা  সঙ্গে পাঁচমিশেলি সব্জি, গাজর, টমেটো,  বীট, গাজর দিয়ে আর ওপরে শুধু ধনেপাতা ছড়ানো  । না আছে মশলা না অন্য কিছু।  কিন্তু এই দুটো মিলে মিশে যে স্বাদের বিস্ফোরণ  তৈরি করল, তার তূল্য স্বাদ আজ পর্যন্ত আর কিছুতেই পাই নি। ২৫ বছর আগের পাহাড়ি চটিতে ঘুম চোখে বসে সেই যে ছোট্ট সুখের সাথে আমার  আলাপ, তার তুল্য সুখ আর কেউ দিতে পারেনি আমায়, না পাঁচতারায় না সাততারাতেও। 

এ কিন্তু গল্পের শুর। পুরো ২১ দিনের ট্যুর।  ট্যুরের গল্প আজকের জন্য নয়। কিন্তু এরপরে যদি চামুন্ডার ঘী চপচপে হালুয়া প্রসাদ নিয়ে বসি আপনাদের ধৈর্যের বড় পরীক্ষা হয়ে যাবে।ফেসবুকের পাঠকের এত অত্যাচার সহ্য করার অভ্যেস তো নেই। তবে একটা কথা জেনে নিন, হিমাচলেই কিন্তু যাত্রা শেষ হয়নি, ফেরার পথে ঠিক শ্রীনগরের দিকে বাঁক নিয়েছি। আর সে পথেও আমার ছোট ছোট সুখের লিষ্টিতে ঢুকে পরেছে, পাঠানকোটের বাটার চিকেন আর জুই ফুলের মত একথালা ভাত। মাঝপথে যদি বানিহালের গুস্তাবা আর গরম গরম রোটির কথা না বলি, তবে তাও হবে ভয়ানক গোস্তাকি।

Wednesday, 17 June 2020

দর্জি পাড়ার রকে

- অশোক রায় -

পায়ে পায়ে ঘুরি, উত্তরের সব গলি
পাড়ায় পাড়ায় রকের আড্ডা, হরেক কিসিম বুলি,
বাচ্চা,বুড়ো,যুবা - সবার আসন পাকা,
মাফ কারো নেই,সবার টিকি এইখানেতেই বাঁধা,
ওবামা বা পুতিন, হোক না ইয়েলৎসিন,
সমঝে চলেন সবাই এদের, রকের বিচার পাকা ।

উত্তরের এই বাঁকে, পুরনো সব স্মৃতির ঝাঁপি আজও খুলে ডাকে,
শঙ্খ, ঘন্টা, কাঁসর ধ্বনির মাঝে, পুরনো সব দেবালয়ে,
দেবতারা আজও ওঠেন জেগে,
দেখতে যদি চাও, দেখতে তাদের পাবে আজও,
যদি ঠিক সময়ে যাও,
সন্ধ্যাবেলায় আড্ডা মারেন সবে, দরজী পাড়ার রকে।


Thursday, 11 June 2020

Rear window.  হিচককের এই ছবিটা অনেকেই দেখেছেন হয়তো। এইরকম সাসপেন্স আর থ্রিলারের জমাট বুনুনির ফিল্ম আমি আর দেখিনি। কি হয়েছিল?  এক ফটোগ্রাফার তার ভাঙা পা নিয়ে পেছনের জানালায় বসে কি করে এক খুনীকে ধরলেন তাই নিয়েই এই ছবি। আমার অবশ্য আপনাদের শুভেচ্ছায় পা ভাঙেনি। এমনি এমনিই বসে আছি বাড়ীর পেছনের জানালার ধারে।
 বসে সব চোখে চোখে রাখছি। কোন খুনীকে ধরতে? না,বোধহয়।  বলতে পারেন তারই ভয়ে। তবে এ খুনী বড়ই বেপরোয়া।  আমার সাধ নেই, সাধ্যিই নেই সেই খুনীকে ধরার।

দেখছি চলমান জীবন জানালার ধারে বসে। বসে থাকতে থাকতে কখনো নিজেকে আবার 'ডাকঘর' এর অমলও মনে হচ্ছে। কবরেজ আমাকেও বাইরে বেরোতে বারণ করেছেন। জানালা দিয়ে খুঁজছি সেই দইওয়ালাকে। যে বলেছিল আমাকে নিয়ে যাবে পাঁচমুড়া পাহাড়ের ধারে তার গ্রামে। ভারী আশায় আশায় বসে ছিলাম।  কিন্তু সেটা এখন হবেই না। বলে দিয়েছে আমাদের দইওয়ালা ননী। তাই জুলাইয়ের ট্যুরও হয়ে গেল ক্যানসেল। মার্চের পরে কলকাতার বাইরে যাইনি। দমবন্ধ অবস্থা।  কিন্তু?  কিন্তু আর কি? আগে পিছু হটুক করোনা,  তারপরে হবে'খন।

 দইওয়ালা যখন গররাজী। অগত্যা, দইই সই। শুধু দই দিয়েই চালিয়ে নেব। তাই মিঠাই এ অনলাইনে অর্ডার দিলাম চিনিপাতা মিষ্টি দই। হয়ত আপনাদেরও প্রিয়। আজ শেষপাতে দইই থাক। পাহাড়ে সময়মত যাওয়া যাবে। কি বলেন?



Monday, 8 June 2020

নদীর সাথে,নারীর সাথে

ইদানীং বেশ ঘন ঘন বেড়িয়ে পরা যাচ্ছে। ছোট ছোট ট্যুর। খুব বড় নয়, ৪/৫ দিনের! কাছেপিঠেই। এবার এলেম সীসামারা নদীর পাশে এক রিসর্টে। টংয়ের উপর বাড়ী। লোহার সিড়ি পেরিয়ে অনেকটাই উচুতে।  চারিদিক নিবিড় বনে ঘেরা আর সামনেই ছোট্ট পাহাড়ী নদী, সীসামারা। ঘরের সামনের বারান্দায় বসেই চোখে পড়ে ময়ুরের নাচ, নদীর পার ঘেষে দল বেঁধে তাদের খাদ্য অন্বেষণ । এবারের এই সফরে নদীর এক বিশেষ ভুমিকা। এই নদীর বর্ষায় হয়ত অন্যরুপ। তবে শীতের আগমনে সে যেন তটীনি সম এক সুন্দরী নারী। আমাদের  নারীবর্জিত এই ট্যুরে নারীর স্থান তার সব মাধুরী দিয়ে পরিপুর্ন করে রেখেছে সীসামারা নদী । পান পাত্র উছলি উঠিছে সকাল সন্ধ্যেই।  কচিপাঁঠা থেকে নদীর বোরোলী মাছ নিরন্তর মিটিয়ে যাচ্ছে রসনা। তবু এই বেড়ানোটা একেবারে অন্যরকম। অপার্থিব রকমের কিছু একটা।  আগে যেন এমনটি হয়নি কোন দিনও।

 সম্মোহিত করে রেখেছে আমাদের, এই অরণ্য, এই নৈশব্দ, পুর্ণিমা চাঁদ আর জ্যোৎস্নাস্নাত এই নদী পাহাড়, অরণ্য।   আমরা যেন  চন্দ্রাহত ।  দিনরাত্রি তার সৌন্দর্যেই আমরা রমণীয় হয়ে উঠছি। এই নদীরুপ নারীর  বুকেই আমরা সমর্পন করেছি নিজেদের বারবার  প্রতিদিন।  সব ক্লান্তি ধুয়ে মুছে পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে জীবন। জীবন যেন এখানে  এক অনন্ত রমণ। নদীর সাথে, পাহাড়ের সাথে অরণ্যের সাথে। আমরা  মেতে উঠেছি অনন্তের সাথে ক্লান্তিহীন সঙ্গমে। কে বলে জীবন ক্ষণস্থায়ী? আমরা খুঁজে পেলাম এমন এক জীবন যা অসীম, অনন্ত মধুময়।

....বেশ রাতে সবার অজান্তে পৌঁছে গেলাম নদীর কাছে। যেন গোপন অভিসার। নদীর জল মনে হল জ্যোৎস্নার ধারা, জমাট সাদা। একটু ঝুঁকে সেই জলে হাত ছুঁইয়ে রাখলাম।

বেশ কিছুক্ষণ বসে রইলাম নদীর পাশে। নদীর ওপারে এক চকিতা হরিণী জল খেতে এসে আমার সাথে চোখাচোখি করে গেল। এই নির্জনে সেই আমার সঙ্গীনী। আমি আকাশের দিকে তাকালাম। এমন জ্যোৎস্না আমি কখনোই দেখিনি। এই শান্ত নীরবতায় সে যেন শতগুণ উদ্ভাসিত হয়েছে। এই অরণ্যের মধ্যে চন্দ্রকিরণে ভেসে যাওয়া এক নদী আর আমি এক একা মানুষ। এ যেন হাজার বছরের আগের। আমার চারিদিকের যা রুপ, সে কেবল নারীর মধ্যেই থাকতে পারে।এই ভরা জ্যোৎস্না সে তো কোনো নারীই। এই স্তব্ধ গহন বন, সে নারী ছাড়া আর কিই বা হতে পারে? প্রকৃতির কাছে এসে সেই নারীকেই আমি পাই। এই বনজ্যোৎস্না, এই আঁধার অরণ্য  তার অপার রহস্যময়তা, সেও তো নারীরই রুপ।

আমি জন্ম রোমান্টিক।এই অপরুপ রাত্রি আমার কাছে ধরা দিল এক নারীর বেশে।আমি চারিপাশের শূন্যতাকে আলিঙ্গন করি, প্রগাড় চুম্বন দিই নদীকে, বেলাভূমিকে।  শুয়ে পড়ি বালির ওপরে, প্রণয়খেলা শুরু হয়।
প্রকৃতির সাথে এত নিবিড় প্রণয় আমার কখনো হয়নি। প্রকৃতিকেও কখনো এমন বহু ইস্পিতা নারী হিসেবে পাইনি কখনো। আমি তার শরীরের সাথে শরীর মেশাই, শরীরের গন্ধ নিই। নিতে নিতে আমি ঘুমিয়ে পড়ি সেই জ্যোৎস্নালোকে নদীকে নিয়ে, নারীকে নিয়ে।

এটা আমাদের সীসামারা ভ্রমণের স্মৃতি মাথায় রেখে। সে ছিল এক অলৌকিক ভ্রমণ।  আমরা যারা গিয়েছিলাম, তাদের সবার মনে স্থায়ী দাগ রেখে গেছে। বিশেষ করে সীসামারা নদীকে যে ভাবে পেয়েছিলাম, তা ভোলার নয়।













Friday, 5 June 2020











আজ বিশ্বপরিবেশ দিবস
ফেসবুকের পাতা উল্টে দেখলুম প্রতিবারই এই দিনে দুচার লাইন লিখি। তাতে সুভাষ সরোবরের ছবি থাকে,গাছপালা, বাগান ম্যায় ফেরার পথে কাদাপাড়ার বাজার থেকে ঝালের জন্যে বাটা মাছ কিনলুম না হুগলির হিমসাগর কিনলুম তারও সচিত্র বিবরণ থাকে।
এবার সেইসব কিছুই হয়নি। করোনা নামের এক বর্গীর অত্যাচারে দেশ ছাড়া না হলেও গৃহবন্দী। চার দেয়ালের মধ্যে কতক্ষণই বা ভালো লাগে। কখনো শোবার ঘরে,কখনো বসার ঘরে আধশোয়া হয়ে সোফায়। টিভি দেখতেও ভালো লাগে না। বই সব কয়েক পাতা করে পড়েই পেজ মার্ক দিয়ে উল্টে রেখেছি।
শেষমেষ ছুটকিকে নিয়ে ছাদে উঠে এলুম। অল্প হলেও হলো পরিবেশের সাথে কিছু ছোটি সি বাৎ। ফুরফুরে হাওয়ায়, কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি আর কিছু হাত পা ছুড়ে মন শান্ত হলো অবশেষে।
যারা ভাবছেন, এবার আর বাজার হলো না। তা কিন্তু নয়। অনলাইনে জলঙ্গীতে ফরমায়েশ দিয়ে রেখেছি, সুন্দরবনের কচি কালো পাঁঠার মাংস আর ক্যানিঙের দেশী কই। সেসব কালই এসে পড়বে। কইয়ের তেল কই হবে না কচি পাঁঠার নিরামিষ ঝোল হবে, তাও সময়ে জানিয়ে দেব। তবে কচি পাঁঠার কথায় ভারী কষ্ট হলো মনে। এবার তো এক অবলা প্রাণের অকাল মৃত্যুর জন্যে আমি পরোক্ষে হলেও তো কিছুটা দায়ী। ভারী অপরাধী লাগলো নিজেকে।
বিশ্বপরিবেশ দিবসে শপথ নিলাম, আমি নিরামিষাশী হবো। তবে আজ থেকে নয়, রোববার কাটিয়ে ঠিক সোমবার থেকে। যা ভুল করার তা তো করেই ফেলেছি। তবে আর নয় এ নিশ্চিত।



Jayasree Roychowdhury, Arun Bikas Das and 60 others

16 comments


Like
Comment
Share