ছোট ছোট সুখ
আমি যে খুব খেতে ভালবাসি, এমনটি কিন্তু নয়। একসময় বিরিয়ানি খুব খুব ভালবাসতাম। সারা ভারত ঘুরেই বিরিয়ানি খেয়েছি এমনকি বিদেশেও। কিন্তু কলকাতার বিরিয়ানি? ভুভারতে তার জুড়ি নেই। কলকাতায়ও কম দোকানে যাইনি বিরিয়ানির জন্য। সে রয়াল হোক চাই আরসালান কি আলিবাবা কেউ মুখে লাগবে না যদি আপনি খেয়ে থাকেন সিরাজের বিরিয়ানি। পার্কস্ট্রিটের মোড় আসার আগে থেকেই গন্ধে গন্ধে পাগল করে দেবে, শেষে মোড়ের মুখে এসে নতজানু হয়ে সম্পুর্ণ আত্মসমর্পণ করতেই হবে আপনাকে। মুখে দেবেন এর গন্ধ স্পর্শ স্বাদ আপনার চেতনার স্তরে স্তরে সারেঙ্গীর ছড় বোলাবে। সুরের সাত সংগমে আপনি মোহিত শুধু নয় হবেন বাক্য রহিত। এমনই লা জবাব এই বিরিয়ানি। তবে আজকের এই ছোট সুখের আসরে বিরিয়ানির জায়গা নেই। এ নিতান্তই সাদামাটা সহজ সরল সুখ। কিন্তু এর ব্যাপ্তি অনেকটা জায়গা আর অনেকটাই সময় নিয়ে। এও কিন্তু খাবারেরই কথা। তবে এ খাবার ফরমায়েসীও নয় নিতান্তই আমজনতার নিত্যদিনের খাবার। তবে স্থান সময় বিশেষে তাও হয়ে ওঠে অনন্য।
একসময় আমার কাশ্মীরে ছিল নিত্য আসাযাওয়া। যেখানেই গেছি ফেরার পথে ঠিক কাশ্মীর ছুয়ে এসেছি, এমনই আমার কাশ্মীর প্রীতি। এ গল্পেও কাশ্মীর আছে কিন্তু নেইও আবার।
আজ থেকে বছর ২৫ হবে দিল্লি এয়ারপোর্টে নেমে আমাদের ট্রাভেল এজেন্টের পাঠানো গাড়ীতে চেপে বসলাম। গন্তব্য কুলু,মানালী, ধরমশালা, চাম্বা ইত্যাদি ইত্যাদি। সঙ্গে সঙ্গীসাথী অনেক মানে আমারই জ্ঞাতিগুষ্টি সব। পরিবার, পরিজন। মথুরা রোড ধরে যাত্রা হল শুরু মানালীর উদ্দেশ্যে। আমাদের রথের সারথি ছিল এক ছোকরা। সনু তার নাম৷ ভারী চৌখস, দিল্লিরই ছেলে। সদ্য বিয়ে করেছে৷ নতুন বৌকে ফেলে সেও আমাদের দ্বীপান্তরের সঙ্গী। অবশ্য ওটাই ওর কাজ, আমি দুঃখ পেলেও ওর কোন ভাবান্তর ছিল না। সারা রাত সুমোর পিঠে চরে চলল আমাদের যাত্রা। আর ক্যাসেটে অনর্গল বাজিয়ে চলল, শোভা মুদগল। ডাকিয়া ডাক লায়া, আলি মেরে সাজনা আর কত কি সব। শোভা মুদগলের এই গান হয়ে গেল আমাদের গোটা ট্যুরের থিম সঙ। পাহাড়ি ব্যাকগ্রাউন্ডে শোভা মুদগলের হাস্কি গলার ফোক সঙ গোটা ট্যুরকেই করে তুলল অতুলনীয়। গোটা রাত ঢুলতে ঢুলতে ভোর ভোর এসে পড়লাম এক ছোট্ট পাহাড়ি চটিতে। একদিকে পাহাড় আর অন্যদিকে খাদ, আর সেই খাদ ঘেঁসেই একটা ছোট্ট ধাবা। এক অতুলনীয় নিসর্গের পাশে সামান্য একচিলতে একটা ধাবা। কি স্পর্ধা। হজম করতে কষ্ট হলেও ওখানেই ব্রেকফাস্ট। বাঁধা মেনু। তাই বলা হল। এল আলুপরোটা, তেলে বা ঘিয়ে ভাজা নয়, বেক করেই প্লেটে দিয়ে দিল আর ওপরে এক কিউব মাখন। গরম পরোটার উপর মাখন গলে গলে ছড়িয়ে পরছে আর ছড়িয়ে পরছে তার মূর্ছনা সঙ্গে পাঁচমিশেলি সব্জি, গাজর, টমেটো, বীট, গাজর দিয়ে আর ওপরে শুধু ধনেপাতা ছড়ানো । না আছে মশলা না অন্য কিছু। কিন্তু এই দুটো মিলে মিশে যে স্বাদের বিস্ফোরণ তৈরি করল, তার তুল্য স্বাদ আজ পর্যন্ত আর কিছুতেই পাই নি। ২৫ বছর আগের পাহাড়ি চটিতে ঘুম চোখে বসে সেই যে ছোট্ট সুখের সাথে আমার আলাপ, তার তুল্য সুখ আর কেউ দিতে পারেনি আমায়, না পাঁচতারায় না সাততারাতেও।
এ কিন্তু গল্পের শুর। পুরো ২১ দিনের ট্যুর। ট্যুরের গল্প আজকের জন্য নয়। কিন্তু এরপরে যদি চামুন্ডার ঘী চপচপে হালুয়া প্রসাদ নিয়ে বসি আপনাদের ধৈর্যের বড় পরীক্ষা হয়ে যাবে।ফেসবুকের পাঠকের এত অত্যাচার সহ্য করার অভ্যেস তো নেই। তবে একটা কথা জেনে নিন, হিমাচলেই কিন্তু শেষ হয়নি, ফেরার পথে ঠিক শ্রীনগরের দিকে বাঁক নিয়েছি। আর সে পথেও আমার ছোট ছোট সুখের লিষ্টিতে ঢুকে পরেছে, পাঠানকোটের বাটার চিকেন আর জুই ফুলের মত একথালা ভাত। মাঝপথে যদি বানিহালের গুস্তাবা আর গরম গরম রোটির কথা না বলি, তবে তা হবে ভয়ানক অন্যায়।
আমি যে খুব খেতে ভালবাসি, এমনটি কিন্তু নয়। একসময় বিরিয়ানি খুব খুব ভালবাসতাম। সারা ভারত ঘুরেই বিরিয়ানি খেয়েছি এমনকি বিদেশেও। কিন্তু কলকাতার বিরিয়ানি? ভুভারতে তার জুড়ি নেই। কলকাতায়ও কম দোকানে যাইনি বিরিয়ানির জন্য। সে রয়াল হোক চাই আরসালান কি আলিবাবা কেউ মুখে লাগবে না যদি আপনি খেয়ে থাকেন সিরাজের বিরিয়ানি। পার্কস্ট্রিটের মোড় আসার আগে থেকেই গন্ধে গন্ধে পাগল করে দেবে, শেষে মোড়ের মুখে এসে নতজানু হয়ে সম্পুর্ণ আত্মসমর্পণ করতেই হবে আপনাকে। মুখে দেবেন এর গন্ধ স্পর্শ স্বাদ আপনার চেতনার স্তরে স্তরে সারেঙ্গীর ছড় বোলাবে। সুরের সাত সংগমে আপনি মোহিত শুধু নয় হবেন বাক্য রহিত। এমনই লা জবাব এই বিরিয়ানি। তবে আজকের এই ছোট সুখের আসরে বিরিয়ানির জায়গা নেই। এ নিতান্তই সাদামাটা সহজ সরল সুখ। কিন্তু এর ব্যাপ্তি অনেকটা জায়গা আর অনেকটাই সময় নিয়ে। এও কিন্তু খাবারেরই কথা। তবে এ খাবার ফরমায়েসীও নয় নিতান্তই আমজনতার নিত্যদিনের খাবার। তবে স্থান সময় বিশেষে তাও হয়ে ওঠে অনন্য।
একসময় আমার কাশ্মীরে ছিল নিত্য আসাযাওয়া। যেখানেই গেছি ফেরার পথে ঠিক কাশ্মীর ছুয়ে এসেছি, এমনই আমার কাশ্মীর প্রীতি। এ গল্পেও কাশ্মীর আছে কিন্তু নেইও আবার।
আজ থেকে বছর ২৫ হবে দিল্লি এয়ারপোর্টে নেমে আমাদের ট্রাভেল এজেন্টের পাঠানো গাড়ীতে চেপে বসলাম। গন্তব্য কুলু,মানালী, ধরমশালা, চাম্বা ইত্যাদি ইত্যাদি। সঙ্গে সঙ্গীসাথী অনেক মানে আমারই জ্ঞাতিগুষ্টি সব। পরিবার, পরিজন। মথুরা রোড ধরে যাত্রা হল শুরু মানালীর উদ্দেশ্যে। আমাদের রথের সারথি ছিল এক ছোকরা। সনু তার নাম৷ ভারী চৌখস, দিল্লিরই ছেলে। সদ্য বিয়ে করেছে৷ নতুন বৌকে ফেলে সেও আমাদের দ্বীপান্তরের সঙ্গী। অবশ্য ওটাই ওর কাজ, আমি দুঃখ পেলেও ওর কোন ভাবান্তর ছিল না। সারা রাত সুমোর পিঠে চরে চলল আমাদের যাত্রা। আর ক্যাসেটে অনর্গল বাজিয়ে চলল, শোভা মুদগল। ডাকিয়া ডাক লায়া, আলি মেরে সাজনা আর কত কি সব। শোভা মুদগলের এই গান হয়ে গেল আমাদের গোটা ট্যুরের থিম সঙ। পাহাড়ি ব্যাকগ্রাউন্ডে শোভা মুদগলের হাস্কি গলার ফোক সঙ গোটা ট্যুরকেই করে তুলল অতুলনীয়। গোটা রাত ঢুলতে ঢুলতে ভোর ভোর এসে পড়লাম এক ছোট্ট পাহাড়ি চটিতে। একদিকে পাহাড় আর অন্যদিকে খাদ, আর সেই খাদ ঘেঁসেই একটা ছোট্ট ধাবা। এক অতুলনীয় নিসর্গের পাশে সামান্য একচিলতে একটা ধাবা। কি স্পর্ধা। হজম করতে কষ্ট হলেও ওখানেই ব্রেকফাস্ট। বাঁধা মেনু। তাই বলা হল। এল আলুপরোটা, তেলে বা ঘিয়ে ভাজা নয়, বেক করেই প্লেটে দিয়ে দিল আর ওপরে এক কিউব মাখন। গরম পরোটার উপর মাখন গলে গলে ছড়িয়ে পরছে আর ছড়িয়ে পরছে তার মূর্ছনা সঙ্গে পাঁচমিশেলি সব্জি, গাজর, টমেটো, বীট, গাজর দিয়ে আর ওপরে শুধু ধনেপাতা ছড়ানো । না আছে মশলা না অন্য কিছু। কিন্তু এই দুটো মিলে মিশে যে স্বাদের বিস্ফোরণ তৈরি করল, তার তুল্য স্বাদ আজ পর্যন্ত আর কিছুতেই পাই নি। ২৫ বছর আগের পাহাড়ি চটিতে ঘুম চোখে বসে সেই যে ছোট্ট সুখের সাথে আমার আলাপ, তার তুল্য সুখ আর কেউ দিতে পারেনি আমায়, না পাঁচতারায় না সাততারাতেও।
এ কিন্তু গল্পের শুর। পুরো ২১ দিনের ট্যুর। ট্যুরের গল্প আজকের জন্য নয়। কিন্তু এরপরে যদি চামুন্ডার ঘী চপচপে হালুয়া প্রসাদ নিয়ে বসি আপনাদের ধৈর্যের বড় পরীক্ষা হয়ে যাবে।ফেসবুকের পাঠকের এত অত্যাচার সহ্য করার অভ্যেস তো নেই। তবে একটা কথা জেনে নিন, হিমাচলেই কিন্তু শেষ হয়নি, ফেরার পথে ঠিক শ্রীনগরের দিকে বাঁক নিয়েছি। আর সে পথেও আমার ছোট ছোট সুখের লিষ্টিতে ঢুকে পরেছে, পাঠানকোটের বাটার চিকেন আর জুই ফুলের মত একথালা ভাত। মাঝপথে যদি বানিহালের গুস্তাবা আর গরম গরম রোটির কথা না বলি, তবে তা হবে ভয়ানক অন্যায়।
No comments:
Post a Comment