Friday, 17 May 2019

আম আর হাম

আম আর আমি এ কি আজকের সম্পর্ক? যদি বলি যুগ যুগান্তের তাহলেও কম বলা হবে। মুর্শিদাবাদ যখন মুকসুদাবাদ ছিল, কি তারো আগে থেকে, তবে তা মিথ্যাবচন হবে না অতি অবশ্যই।  আসলে আমরা মানে আমার পুর্বপুরুষেরা সেই কবে থেকেই গেঁড়ে বসে আছি এই মুর্শিদাবাদেই,  তা খোদাই মালুম। আমি,আমার দাদু তার দাদু তার পরদাদার সবারি এই চৌহদ্দির মধ্যেই যত আনাগোনা, কান্ডকারখানা ইত্যাদি ইত্যাদি।  তার আগে কোথায় ছিলুম,  সেটাতে আপনাদের মত আমারও ভারী কৌতুহল।  ভেবে চিন্তা আমি একটা কিছু খুজে পেয়েছি,রিসার্চ ওয়ার্কও বলা যায়। মানে আমাদের বিরাদরীর পুরনো দিনের নিশান বলুন, চাই সাকিন। সবাইতো জানেন আমাদের আদি মাতার ঠেক ছিল আফ্রিকা।  আমার আপনার সবার। সে অর্থে আমি আপনি কিন্তু তুতো-ভাই।  কি দারুণ, না? এটা কিন্তু বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে। মানে পুরো সায়েন্টিফিক।  আর সাইন্সে কার না আস্থা। বিশ্বাস এক নেই আইসিস জঙ্গীদের।  আপনি নিশ্চয়ই তা নন। এটুকু বিশ্বেস আপনাকে করতেই পারি। তো যাই হোক আফ্রিকার পর আপনি কোন মুল্লুকের বাসিন্দা হলেন, তা আমার জানার দরকার নেই। শুধু নিজেরটাই বলি। আমরা আসলে মিশরের বাসিন্দা। মিশরের ফারাওদের চেনেন তো?  আমরা আসলে সেই ফারাওদের উত্তরপুরুষ। রা বংশের রামেশিস, তুতেনখামুন এদের নিশ্চয়ই চেনাতে হবে না। এরা সবই হামলোগ মানে আমাদেরই লোক৷ আজ যা দেখছেন, পিরামিড, স্ফিংক্স এ সবই আমাদের বুজর্গদেরই বানানো।  এরপর? এরপর আর কি? দেশছাড়া রোমানদের অত্যাচারে। এন্টনি না কে যেন আমাদের ঘরের মেয়ে  ক্লিওপেট্রাকে ইলোপ করে নে গেল তখন আর সহ্য হলনি, দেশছাড়া হলুম। এখন এই ভারতবর্ষই আমার দেশ। পুরনো পরিচয় সব ঝেড়ে ফেলেছি।  কবে রাজা উজীর ছিলুম সে সব ভেবে আর লাভ কি বলুন? আমিও আপনাদের মতই একজন আম আদমি।

যাকগে, হচ্ছিল আমের কথা চলে গেলাম মিশরে। মিশরে কি আম পাওয়া যায়? কে জানে? আসলে এমনিতেই আমার এখন ভুলোমনে ধরেছে, তাতে পাঁচহাজার বছর আগের কথা কেমনে রাখি মনে? তবে আম বটে আমাদের মুর্শিদাবাদের। সত্যি বলতে কি আমের রাজধানী।  এইরকম জাত আম আর কোথায় হয়,কে জানে? আর কি স্বোয়াদ আর সূরভী সেইসব আমের। ইন্দ্রলোকের অমৃতসম সুরা ফেলে পাবলিক লুফে নেবে এইসব আমকে। আর রাজসিক তাদের চেহারা আর চলন। নবাব পসন্দ, বেগম পসন্দ, ক্ষিরসাপাতি, হিমসাগর,আনারস,সাদুল্লা, মধুচুসকী আরও হাজারো রকম। কোহিতুর আম কি খেয়েছেন? খাননি তো? এ আমের গাছ আমাদের ছোটবেলায় নবাবের বাগানে একটাই ছিল। আর সে আম একবার এসেছিল বাড়িতে একাই মানে একটাই।  তুলোর বিছানায় তার স্থান হল। আর তার খুসবাই আর স্বাদ? 'ও শোভানাল্লা'। ব্রম্ম কেমন বলতে পারবেন? না তো।  কোহিতুরের স্বাদ সেরকমই। এর কাছাকাছি হয়ত কোহিনূরই যেতে পারে এর ঝলকানিতে।

আমার আমে খড়ি সেই হামাগুড়ির বয়স থেকেই। আসলে আমাদের সময় তো আমের হিসেব ওজনে ছিলনা। ছিল শতকে  আর সেই অঙ্কও ছিল ভারী ভুলভাল। আমের হিসেব যদি অঙ্কের খাতায় মেনে চলেন, তাহলে আপনার কপালে মিলবে শূন্য। একটু নরম স্বভাবের স্যার হলে হয়ত শূন্যের বদলে একটা ক্ষিরসাপাতি আমও একে দিতে পারেন। তো যা বলছিলাম আম কেনা হতো শয়ের হিসেবে।  বাবা কিনতেন, লালবাগের আস্তাবল বাজার থেকে। আর সেই আম কাঁচাপাকা অবস্থায় স্থান পেত চৌকির তলে আমের পাতার শয্যায়।  আর হামাগুড়ি দিয়ে আমরা সেই চৌকির তলায়। বলছিলাম না বড় হয়েও হামাগুড়ি দেওয়ার অভ্যেস যায়নি। আর আজও ছোট হয়ে থাকার এই একটাই কারণ। বড় বয়স পর্যন্ত হামাগুড়ি দেওয়া। তবে এই বয়সে আর হামাগুড়ি দেবার চেষ্টা করবেন না। তাতে হয়ত হাঁটুর খিলই খুলে যাবে আপনার। ডাক্তারবদ্যি হাজারো ঝকমারি, ভারী অশৈলী ব্যাপার হয়ে যাবে।

তো এখন যদি বলি আমি আম ছেড়ে দিয়েছি, কেউ বিশ্বেস করবে না। কিন্তু বিশ্বাস করুন সত্যিসত্যিই ছেড়ে দিয়েছি। আমি এখন ডায়েটিশিয়ানেই মন দিয়েছি। অবশ্য তিনি আমের মত না হলেও বেশ স্মার্ট এন্ড স্লিম  একজন সুন্দরী।  আর কে না জানে ডায়েটিশিয়ানরা কন্যেই হন আর সুন্দরীও। আমি এখন ডায়েটিশিয়ানেই মজে আছি। আম না লেঙ্গে হাম। তাতে আমার শরীরের  শর্করারা বিধুমুখী থেকে নতমুখী হয়েছে। এর জন্য আমার এখন হরিষে বিষাদ।  এতদিনের সঙ্গী আমার আম তাকে কি ছেড়ে দেব? একদিনের জন্য হলেও আম হবে আমার সঙ্গীনি, সে মধুচুসকীই  হোক চাই (হিম) সাগর। আর আমার কাছে এখন 'সব সাগর বারবার, হিমসাগর একবার "! যেদিন সাগরে এসে মিলব, সেদিনের ছবি নিশ্চয়ই দেব ফেবুর পাতা জুড়ে।

No comments:

Post a Comment