Sunday, 26 May 2019

অনেকদিন পরে আজ স্বপনের কথা মনে পরল। প্রায় বছর ত্রিশেক হবে। আমাদের বাজারে ওর খাঁসীর মাংসের দোকান ছিল। কত আর বয়েস? ৩০/৩৫ । একেবারে খাট্টা মাট্টা জোয়ান ছেলে। আর খদ্দেরদের সাথে ওর ভারী ভাব ভালবাসা ছিল। অনেকে বাকিতেও নিত ওর থেকে। মাংসেরও মাসকাবারী, আর কি। তখন আমাদের এই পাড়ায় অনেক বাঙালী ছিল। এত ইউপি আর রাজস্থানের লোক আসেনি। রোববারের বাজারে মাংসের দোকানে লম্বা লাইন পরে যেত। গোটা ত্রিশেক খাসি তো সেদিন বিকোতোই স্বপনের দোকান থেকে। ভাল ব্যাবসা ছিল।
স্বপনকে মাঝে মাঝে দেখতাম বিকেলবেলায় বউ, ছেলে নিয়ে বাইকে চেপে ঘুরতে। ভারী সুখী সুখী ভাব। দেখে ভাল লাগত। বউয়ের চেহারা আবঝা মনে আছে। মিষ্টি চেহারা তৃপ্ত মুখ। স্বপনকে নিয়েই খুশি ছিল খুব। আর বাচ্চাটা ২/৩ বছর। কপালে কাজলের টিপ,দুচোখে মোটা করে কাজল লাগানো। ভারী আত্মতৃপ্ত একটা পরিবার। ছোট পরিবার, সুখী পরিবারের এক পারফেক্ট ছবি।
এক রোববার বাজারে গেছি। লম্বা লাইন, সারি সারি খাসি ঝোলান। স্বপন বলল, মেজদা, তুমি পাশে দাড়াও। তোমাকে আমি আলাদা করে দিচ্ছি। ও জানত আমার কি পছন্দ। রাং,চাপ আর মেটে ওই আলাদা করে রাখত। তো দাড়িয়ে আছি। হঠাৎ দেখি অনেক দোকানীই দৌড়াদৌড়ি করছে। সরকারি অফিসারেরা এসেছেন ওজনের বাটখারা চেক রাখতে। স্বপন লাফ দিয়ে সব বাটখারা লুঙ্গির কোচরে ভরে দৌড় লাগাল। বেশীদূর যেতে পারল না। হুমড়ি খেয়ে পরল। সব বাটখারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরল। স্বপনের কি হল? স্বপনের স্বপ্নের শেষ হল। স্বপন পরেই মরে গেল। আর হুকে লাগানো খাসীগুলো দুলতেই থাকল। আর মৃত স্বপন বিস্ফারিত চোখে চেয়ে রইল আকাশের দিকে। কারও কাছে কি কোন ফরিয়াদ জানাল? জানি না।
স্বপনের ছেলে বউকে আর দেখিনি। মাঝে মাঝে মনে হত ওর ছেলে বৌএর কি হল? আজও সেইরকমই মনে হল। ওর কাছে যারা বাকীতে নিত, তারা কি টাকা দিয়েছিল ওর বৌকে? ছেলেটার কি হল? আজ তাদের দেখলেও চিনতে পারব না। তবে স্বপনের কথা মনে পরলে আজও বুকের মধ্যে চিনচিন করে ওঠে।

No comments:

Post a Comment