Thursday, 2 May 2019

ভুলোমন

ভুলোমন
 বেশী বয়সে লোকের ভুলভাল একটু আধটু হতেই পারে কিন্তু তা নিয়ে হইচই করা বোধহয় উচিৎ কাজ হবে না। চিরদিন  কাহারো সমান নাহি যায়। এ গান কে না শুনেছেন। তবে তার মধ্যেও কেউ কেউ কেন, অনেকেই আছেন যাদের মন ওই ভুলভুলাইয়ার ফাঁদে পরা বেচারীদের মত যারা বেরোবার রাস্তাটা আর খুঁজে পাননা হাজারো চেষ্টাতেও৷ ওই ইসে, আর কি যেনোতে আটকে থেকে হাঁসফাঁস করেন  অবিরাম যতক্ষণ না কেউ তাদের উদ্ধারে নামছেন। তো আমিও সেইরকম একজন ভুলোমন আম আদমি।  এইরকম কেন, বিচ্ছিরি রকমের ভুলোমন আমার। আমি আস্ত আস্ত লোককে একদম ভুলে যায়। আজ বলে না। আমার অল্প বয়েস থেকেই। কেউ হয়ত এসেছে পুরনো আলাপের সুবাদে আর আমি কিনা তাদের চিনতেই পারিনি।  কোনজন্মে তাদের দেখেছি বলেই মনে হয় না।তখন আমার বয়স কিন্তু মাত্র ত্রিশের কোঠায়। এটা কি কোন রোগ? হতেও পারে। তবে এর পরে অন্তত লোক চেনার ব্যাপারে সেইরকম গণ্ডগোলে আর পরতে হয়নি।  আমার অবশ্য একটা  গুণ আছে, রাস্তা ঘাট ভুলে গেলেও  আমি গন্ধ চেনায় খুব দড়। গন্ধ শুকে শুকে ঠিক পৌঁছে যাব সঠিক গন্ত্যবে। অনেকটা স্নির্ফার্স ডগের মত। ঠিক ওরা যেমন খুজে পেতে কোথায় লুকোনো ড্রাগ ঠিক বের করে ফেলে। আমি অবশ্য অত উঁচুদরের নয়। তবে শেখরের বাড়ি আমি ঠিক বের করে ফেলি। কষ্ট হয়না মোটেই  আর শেখর আমাদের গন্ধগোকুল।  ওর বাড়ির গন্ধই আমাকে টেনে নিয়ে যায়। এদিক ওদিক হয় না মোটেই  কিসের গন্ধ সেটা না হয় উহ্যই থাক।

তবে ভুলোমন ব্যাপারটা আমাকে এখন আর সেইরকম জ্বালায় না। তবে ভারী দিকভ্রষ্ট লোক আমি।  উত্তর দক্ষিণ, বাম ডান বোধ নেই একরকম৷ বেশীরভাগ সময়ই আমি উলটোপথে হাঁটি। সেদিন তো দেখলেন নাকতলা পোস্ট আফিসের বদলে আমি উলটোপথে হাঁটা লাগলাম।  তবে শুধরে নিই ঝটপট।  আর রাস্তাঘাটের মানুষ জনেরাও ভারী উপকারী৷ আমার ভুল বুঝতে পেরে তারা ভারী ব্যস্ত হয়ে পরে আমাকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে। তাই মানুষের ওপর আমার অগাধ বিশ্বাস। সে আপনি ভার্চুয়াল বলুন আর যাই বলুন। আর বিশ্বাসের উপরই তো আমাদের জীবনের  অস্ত্বিত্ব দাড়িয়ে আছে, তাই না? তাই 'জয় বাবা ফেলুনাথ' এর  ছোট্ট রুকুর মত যদি বলতে পারেন ' সব সত্যি, মহিষাসুর সত্যি, হনুমান সত্যি, ক্যাপ্টেন স্পার্ক সত্যি আর ডাকু গন্ডারিয়াও সত্যি।'  সত্যকে মেনে নেওয়ার সাহস যদি থাকে তাহলেই জীবনে আনন্দ আপসেই চলে আসবে। কোন টেনশন থাকবে না বস।

তবে যাই বলি  আর তাই বলি এটাও তো ঠিক,  কিছু মানুষ নানা রোগভোগের শিকার হন তার মধ্যে আলঝাইমার্স, ডিমনেশিয়ার মত দুরারোগ্য রোগও আছে।  তাদের জন্য অবশ্য একটা টোটকা আছে। সেটা হল ঘুম থেকে উঠেই টাং টুইস্টিং গোছের একটা জিভের ব্যায়াম। জিভ দশবার ডান দিক দিয়ে ঘোরাতে হবে আর দশবার বা দিক দিয়ে। তাহলেই আপনি মুক্ত এই ডিমনিশিয়া বা আলঝাইমার্সএর শঙ্কা থেকে।  আয়নার সামনে দাড়িয়ে,আমি কয়েকদিন করেছিলাম। কিন্তু সাতসকালে আয়নায় নিজেকে জিভ ভেঙাতে কার ভাল লাগে? তাছাড়া ভেবেও দেখলাম কি দরকার এ সবের। এই পরন্ত বেলায় সব কিছু আকড়ে ধরে কার কি লাভ। ভুলে যাবার মত ভাল ব্যাপার আর কিছু আছে নাকি? ' কা তব কান্তা, কস্য পুত্র' এটাতো জানেন আর মানেনও নিশ্চয় । কেউ কাউরির নয়, এ যে জীবনের মোক্ষম সত্য। তাই মন মিছে কর কেন প্রবঞ্চনা? আমি বলি কাজ কি এতসব ব্যায়ামের।  দরকার কি এতসব মনে রাখার।  আলঝাইমার্স না হোক ডিমনেশিয়া হয়ে সব ভুলে গেলেই  মন্দ তো নয় । এখন এ সংসারে আপনি বাড়তি আসবাব ছাড়া আর কিছু তো নন।

তাই ভুল যান সবকুছ,
 তারপর বেরিয়ে পরুন এই মায়ার গন্ডী ফেলে। পেছন ফিরে যদি তাকান তবে দেখবেন আপনার পেছন পেছন আসছে পাড়ার কটা নেংটি কুকুর মাত্র। ছেলে, বউ কেউ নয়। বড়রাস্তা পর্যন্ত পৌছে দেবে তারা আপনাকে। যদি কেউ থেকেও যাই আপনার সাথে তাহলে জানবেন  সে সাক্ষাৎ ধর্মরাজ, কুকুরের ছদ্মবেশে। আপনার এসকর্ট হয়ে চলবে একদম অমরাবতীর দোরগোড়া পর্যন্ত। তাই আজ থেকে যদিও ভুলেও যান কিছু, চিন্তা করবেন না, আরো বেশী করে ভুলুন। তাহলে পাখোয়াজ বাজিয়ে আর গাইতে হবে না, ' শেষের সে দিন ভয়ংকর। '

ক্যা আয়া বাত সমঝমে? 😀😁😀



No comments:

Post a Comment