Wednesday, 8 May 2019

স্মৃতি স্বত্তা ভবিষ্যৎ

স্মৃতি স্বত্তা ভবিষ্যৎ 😁

একটু বয়স বাড়লে অনেকেই স্মৃতি রোমন্থনের রাস্তা ধরেন। যেমন কবে কে কোন বাঘ,সিংহ মারলেন, কাকে এক্কেবারে টাইট করে দিলেন ইত্যাদি ইত্যাদি।  তবে সবাই নন, কিছু আছেন যারা আবার জ্ঞানতপস্বী, তারা পড়াশোনা নিয়েই থাকেন। পুরু চশমার আড়ালে ড্যাবড্যাবে চোখে খালি তত্ব তালাশ করেই চলেন। ভারী ইনটেলেকচুয়াল লোক তারা, তবে তারা মেড ইন 'মা মাটি মানুষ' এর তথাকথিত বুদ্ধিজীবি নন। তাদের ঘরানাই আলাদা। এরা যথার্থই শ্রদ্ধার পাত্র। আর এক ক্যাটাগরির যারা বাবাজীদের চেলা হয়েছেন। সবসময় কৃষ্ণ কৃষ্ণ করছেন, মালা জপে চলেছেন কিন্তু মন আর দৃষ্টি সবসময় পরে আছে ভাগাড়ে। এদেরকে নিয়েই মুশকিল।  বোঝা যায়না সবসময়।  কখন ফোঁস করে ওঠেন। বিপদ হয়ে যাবে তা'লে। ঘোরতর বিপদ। তখন আমাকে আপনাকে জুতো বগলে নিয়ে লাপাতা হয়ে যেতে হবে। অন্তত কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে তো থাকবেন নিশ্চয়ই।

ইদানিং, আর এক দল উঠে এসেছে।  সত্যি বলতে কি এরাই এখন রাজ করছে। এরা হচ্ছে ফেসবুক এডিক্ট। যা সব কাজকারবার এদের সব ফেসবুক কেন্দ্রিক।  ফেসবুকে স্ট্যাটাস আপডেট, ফেসবুকে ঝগড়া, প্রেম, বগেরা বগেরা। এ গ্রুপের লোকেরা বেশ আছেন। বাড়ির কাউরির এটেনশনের তোয়াক্কা আজকালকার বয়স্কেরা করেন না। তাদের সব মনোযোগ ফেসবুকেই। আমি তো বলব আজকালকার বুড়োদের(?) কাছে ফেসবুক এক আশীর্বাদ।  এদের শরীর, মন তনদুরস্ত হয়ে আছে ফেবুর দৌলতে।

আসলে এ লেখাটা লেখার উদ্দেশ্য ছিল আমার জীবনের কিছু ঘটনা নিয়ে লেখার।  কিন্তু এ দেখছি বাঁকা রাস্তা ধরেছে প্রথমেই। আমার কথাই বলি আমি ফেসবুকে আছি আবার নেইও। আসলে সময় কোনদিনই বোঝা হয়ে ওঠেনি আমার কাছে তাই আমি এতটা ভরাক্রান্ত হয়নি এখনো। নিত্য নতুন জিনিস ঠিক খুজে নি। আসলে আমি বড়ই হয়নি। সোনার কেল্লায় মুকুল বলেছিল না, "আমি তো বড় হয় নি।" আমারও সেই মুকুলিত অবস্থা। বড়ই হইনি, তাই বুড়ো? আমাদের বন্ধুদেরও সেই অবস্থা।  আমরা সবাই নাবালক।  তাই যা ইচ্ছে করে বেড়ায় এখানে সেখানে।  সেটা অল্পবিস্তর আপনাদের বলিও অবরেসবরে।

যাক সে সব কথা। এবার শুনুন আমার গ্রাম দর্শনের কথা। চাকরি জীবনে বহুত ম্যানেজারি করেছি। তো একবার জীবনদীপের ঠান্ডা ঘর থেকে এনে ফেলল কামারপুকুরের কাছে এক রুখুসুখু গ্রামে। হাজীপুর এসবিআই এর নতুন ম্যাঞ্জার বাবু হয়ে। গ্রাম নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা খুব বেশি ছিল না। প্রথম প্রথম কিছুতেই থই পেতাম না। কয়েক আলমারি ভর্তি লোন ডকুমেন্টস।  প্রচুর তামাদি।  এত সব কি বিলি বন্দোবস্ত এই নিয়ে ভাবনা ছিল খুব৷ ডিটেইলসে যাচ্ছি না। তবে ব্যবস্থা করে ফেললাম ঠিকই। আমরা ওরা সবাই মিলে। ওরা মানে স্কুলের টিচার, পঞ্চায়েতের কর্মচারী সবাই মিলে। সবাইকে বসিয়ে দিতেম ব্যাংকের কাজ নিয়ে সন্ধ্যের পর।  আসলে ব্যাংকের দোতলায় ছিল আমার কোয়ার্টার। আর সেখানেই বসত আড্ডা। একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া, লাফিং ক্লাব করা সব নিয়ে বেশ কাটিয়েছি কয়েক বছর।

তবে একটা আফশোস থেকে গেছে। এক জ্যোতিষী  নিয়ে। আমার অফিসের রামকে একবার কুকুরে কামড়াল। রাম বলে কিনা কদিন আগেই ওকে এক জ্যোতিষী কুকুরে কামড়ানোর ভবিষ্যৎ বাণী করেছে। আমার ভারী ভক্তি আর বিশ্বাস জন্মাল সেই জ্যোতিষীর উপর। এমন খনার বচন যার মুখে সে যে, যে সে নয় তা আপনারাও মানবেন।  রাম তাকে পাকড়াও করে নিয়ে এল। ভারী ভয় ভক্তি ধরানো চেহারা তার। গেরুয়াধারী তাই কপালে কাপালিকের মত দগদগে লাল সিঁদুর ল্যাপটানো। ভারী মনোযোগ সহকারে আমাকে আর আমার হাত নিয়ে বহু পর্যবেক্ষণ, নিরিক্ষন করে নিদান দিল এ জাতকের প্রচুর ধনযোগ। আর তা মিলবে ষাট পেরোবার আগেই। আর পেলেই মায়ের পুজো দেবেন আর কামারপুকুরে আমার ডেরায় এসে জানিয়ে যাবেন। আগেই বলেছি কুকুর কামড়ান ভবিষ্যৎ বক্তায় আমার ভারী বিশ্বাস।  সে বিশ্বাস আজও টাল খায়নি। তাই আজও আছি ধনযোগের অপেক্ষায়। কিন্তু গোলযোগ নিশ্চয় কিছু ঘটেছে না হলে এতদিনে বাক্সভর্তি মণিমুক্তো এসে যাওয়ার কথা। আর ওইজন্যই আমি আজও ইচ্ছে থাকা স্বত্বেও  কামারপুকুর যেয়ে  উঠতে পারিনি। আগে ধনসম্পদ আসুক৷ তারপর যাওয়া যাবেখন। তবে যেটা হচ্ছে ইদানীং  রাস্তাঘাটে মাঝে মাঝেই কুকুর তাড়া করছে। একটু সন্দেহ  হয় ও বেটা মোদীর গুরু নয় তো। ১৫ লাখের স্বপ্ন দেখিয়ে কুকুর লেলিয়ে দিলে গা।  এরকম গুরু না মিললে, মোদী কি করে সারা দেশকে ভুলাল ১৫ লাখের মায়াজালে? আপনারই এর বিচার করুন।

No comments:

Post a Comment